শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭৭)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘ঘুম হচ্ছে না আমার–‘
‘বেলীকে দেখলে তো তাই মনে হয়।’
‘ওর একটা দস্তুরমতো হাতেম আলী দরকার, বুঝলি না!’
‘তোর মুখটা একটা নরদমা।’
‘তোর মুখ একটা ফুলের বাগান।’
একটু পরে খোকা বললে, ‘বেলীটা নিছক ঝামেলা। আপদটাকে কেন যে বিদায়ের ব্যবস্থা করছে না বুঝি না। সেজখালার উচিত দড়াম ক’রে ওটাকে বিয়ে দিয়ে পার করা। দাঁড়া, এবারে এলে আমি নিজেই তুলবো–‘
•পাত্র দেখে দিতে পারবি?’
*সেটাও একটা কথা। গোল্লায় যাক। বেলীফেলী নিয়ে মাথা ঘামিয়ে তোর কোনো লাভ নেই, ওর ইস্কুল আলাদা, কালিকলম বইগ্রেট আলাদা; ওর ব্যাপার তুই বুঝবি না।’
রজু বললে, ‘পাড়ার কতোগুলো ছেলে এসে আজ ঝামেলা বাধিয়েছিলো। আমাদের ছাদে ফ্ল্যাগ নেই, খুব চোটপাট করছিলো ছেলেরা, বলছিলো বোমা মেরে উড়িয়ে দেবো–
‘যে যার নিজের ছাদে একটা ফ্ল্যাগ ওড়ালেই সব হ’য়ে গেল আর কি! কারা যে এইসব চ্যাংড়াদের বুদ্ধি জোগায়! কি বললি ওদের?’
‘দশ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাগ কিনতে হ’লো ওদের কাছ থেকে। ছাদে উড়িয়ে দিয়েছে লেবু।’
‘ঝক্কি চুকেছে। নে এখন শুয়ে পড়।’
খোকা নিজের ঘরে চ’লে এলো।
চারপাশে বইপত্র ছড়ানো। বিছানার চাদরও এলোমেলো, লন্ডভন্ড। এখানে বই, ওখানে খাতা, ঘরে পা দিয়ে একটু অবাকই হ’লো খোকা। ভূতপ্রেতের দল ফাঁকা পেয়ে মনের সাধ মিটিয়ে একচোট নাচানাচি ক’রে গিয়েছে ঘরময়। কেবল দলামোচড়া কতগুলো কাগজ ভাঁজ ক’রে সযত্নে কাটগ্লাসের ভারী এ্যাশটেটা চাপা দিয়ে রাখা। একটির পিছনে লেখা’ কেন লেখো, কেনই বা ধ্বংস করো, তুমি কি?’
এক সময় বিছানার চাদর ঠিক করতে গিয়ে বালিশ সরাতেই চোখে পড়ে একটি চারভাঁজের কাগজ:
খুব শিগগির আমরা বাঞ্ছারামপুর যাচ্ছি। তুমি যাবে না? যদি না যাও, হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না। দেখা কোরো, ভয় নেই। তোমার কথা সর্বসময় মনে হয়। বড় নিষ্ঠুর তুমি। পায়ে পড়ি দেখা কোরো। তোমাকে তো পারেনি, তাই তোমার একলা বিছানাটাকেই এলোমেলো তছনছ ক’রে দিয়ে গেল বেলী।
বেড়ে লিখেছে ছুঁড়ি, বিড়বিড় করতে থাকে খোকা। একলা বিছানা, খাসা খাসা! ভিতরে ভিতরে একেবারে ঝুনো হ’য়ে গিয়েছে, শাঁস বলতে কিছু নেই, সব ফোঁপল হ’য়ে গিয়েছে, ফোঁপল ফোঁপল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024