শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭৮)

  • Update Time : বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

বুকের তলায় বালিশ গুঁজে বারবার উল্টেপাল্টে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো চিঠিটা। খোকা মনে মনে বলতে লাগলো, পেকে গিয়েছে, বোঁটার গোড়া পর্যন্ত পেকে গিয়েছে এ মেয়ে। কায়দাটা ভালোই রপ্ত করেছে, ‘তোমাকে তো পারেনি’ রক্ষে করো, না, গুণ আছে ওর, ওর লাইনে ও ডিগ্রী নেবার মতোই; এইজন্যেই লতানো ঝুলপি ভোগলা পায়জামা আর ধনুকমার্কারা ওর পিছনে কামড়ি খেয়ে লেগে থাকে। সত্যি, গুণ আছে ওর। প্রতিটি সুযোগকেই কাজে লাগাতে চেষ্টা করে, একটাই ওর চিন্তা, একটাই ওর সাধনা, কি দারুণ অধ্যবসায়! ওর হবে।
‘কেন লেখো, কেনই বা ধ্বংস করো’, ভেবে দেখতে হবে, খোকা মনে মনে হাসলো। ভেবে দেখলেও, ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষার মতো সহজ ক’রে বলা কি কোনোদিন সম্ভব হবে!
একের পর এক সিগ্রেট পোড়াতে থাকে খোকা, শেষ পর্যন্ত ময়নাকে কেন্দ্র ক’রে তার ক্ষোভ ডালপালা বাড়ায়; কি ক’রে পারলো রজু এমন একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে!
খোকার বিশ্বাস, ব্যাপারটা বাড়াবাড়ির। কোনো গোপন অভিলাষ দ্বারা কি অজ্ঞাতসারে সে প্ররোচিত হয়েছে?
মুরাদের কথা মনে হ’লো খোকার। তার ধারণা মুরাদের মনোভাব পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলো সে। প্রথম থেকেই আমতা আমতা করছিলো। ক’দিন থেকে একনাগাড়ে কিল খেয়ে কিল হজম ক’রে চলেছে, এটা ওর স্বভাবই নয়। রঞ্জুর দিকে মুরাদের তাকানোর ভঙ্গিটাও কিছুটা কুৎসিত ধরনের। অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মুরাদ, আর জোর ক’রে চোখমুখে এমন একটা নিস্পৃহতা আনে যাতে মনে হয় নিদারুণ বীতশ্রদ্ধ সে এখন। এ চালাকি সে ভালো ক’রেই বোঝে, নিরাসক্তির ব্যাপারটা স্বভাবের, জোর ক’রে কেউ নিরাসক্ত হ’তে পারে না। অতো লুকোচুরির কি আছে; বন্ধুর বোন থাকলেই তাকে গিলে খেতে হবে! একটা মফস্বলের স্বভাব, গ্রাম্যতা। অগ্রপশ্চাৎ কোনো বিবেচনা নেই, মেয়ে দেখলেই বনবন ক’রে মাথা ঘুরে যায়, কি হাঘরে স্বভাব এদের। এই স্থূলরুচির আমড়া কাঠের ঢেঁকিগুলো বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখতে জানে না। হাত ধ’রে ঘরে নিয়ে এসেছো কি বিপদ, শুরু হ’য়ে গেল চুলবুলুনি, গাবাগাবি; লটকাও বন্ধুর বোনকে!
মুরাদের আহত মুখচ্ছবি ভেসে উঠলো। ব্যথিত হয়েছে মুরাদ। কথা বলতে পারছিলো না, কেঁদে ফেলার উপক্রম হয়েছিলো বেচারার। গায়ে প’ড়ে দুরমুশ করেছিলো সে, মুরাদ ভ্যাবাচ্যাকা মেরে গিয়েছিলো; এ ধরনের আক্রমণের জন্যে তার কোনো মানসিক প্রস্তুতি ছিলো না। অমন উদোম আলাপের পর তার আর কোনো পথই ছিলো না গোপন কথা ওগরানোর। সে ইচ্ছে করেই হাতে হ্যারিকেন দিয়েছে, এক অর্ধচন্দ্রেই একেবারে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024