শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৭৯)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

এক সময় খুব খারাপ লাগলো খোকার; নিকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন করেছিলো সে, তার নিজের ব্যবহারও খুব একটা রুচিসম্মত নয়, মনে হ’লো এইসব। সময় সময় এমন নিষ্ঠুর হ’য়ে যাই, খোকা শুয়ে শুয়ে আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগলো, মুরাদের সঙ্গে এই নির্দয় ব্যবহার বন্ধুত্বের অতি সাধারণ একটি দাবিকেও অস্বীকার ক’রে যায়। কিন্তু কেন, সব ব্যাপারটা আগাগোড়া সুন্দরভাবে শেষ ক’রে দেওয়াও তো এমন কোনো কঠিন কাজ ছিলো না! স্পষ্ট বললেই হ’তো, রঞ্জুর দিক থেকে সে তার চোখ ফিরিয়ে নিক। নিছক কষ্টের ভিতর পা বাড়িয়ে কি লাভ তার! সে ভুল বুঝেছে রঞ্জুকে। রজু ভিন্ন ধাতের মেয়ে, ওর নিজেকেই পস্তাতে হবে শেষ পর্যন্ত। সে তো জানেই তার স্পষ্টবক্তার সুনাম আছে; শুধু এই সুনামটুকুই তাকে ভাঙাতে হ’তো। কাটগোঁয়ারের মতো সে বেছে নিয়েছিলো উল্টো পথ।
স্নায়বিক উত্তেজনা খোকাকে এলোমেলো ক’রে দিলো এক সময়। এ ধরনের অস্থিরতার সঙ্গে তার কখনো পরিচয় ঘটেনি; এমন এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে সে আজ, যেখানে তার সব দৃঢ়তা মোমের মতো নিঃশব্দে গ’লে গ’লে পড়ে। আক্রোশে ফেটে পড়ে খোকা, বন্ধুত্বের সহজ নিবিড় সম্পর্কের মাঝখানে বাতুল সমস্যা এনে রেষারেষির প্রয়োজনই বা কি! গাঁউয়া, নিরেট গাঁউয়া এই মুরাদ; স্বেচ্ছায় সবকিছু দূষিত আবর্জনাময় ক’রে তুলতে সে মনে মনে বদ্ধপরিকর। বন্ধুত্ব আর ডাস্টবিনের ভিতর কোনো পার্থক্য নেই।
বুকের তলার বালিশকে দুমড়ে দেয় খোকা। রঞ্জুর মতো মেয়ের কথা ভেবে সবকিছু বাস্তবতার নির্মল আলোকে বিচার ক’রে দেখা উচিত ছিলো মুরাদের। চার বছর যাবৎ দেখে আসছে মুরাদ রঞ্জুকে। এখনকার আর পাঁচটা ডুগডুগি বাজানো মেয়েদের মতো বেলেল্লা নয় রঞ্জু, অনেক আগেই তার বোঝার কথা। নিছক একটা ঘরকুনো মেয়ে, খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সারাদিনের ভিতর একটিবারও যার রাস্তার দিকে চোখ মেলে তাকাবার প্রয়োজন হয় না। তার এই আড়ষ্টতার কথা, ঘরকুরোমির কথা, নিজের কুন্ডলীর ভিতর অচৈতন্যপ্রায় প’ড়ে থাকার কথা, খুব ভালো ক’রেই জানে, মুরাদ।
না কি রজুই ওকে সাহস জুগিয়েছে?
সাহসের যে জোগানদার তার নিজেকেও সাহসী হ’তে হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। রঞ্জু নিজে কতটুকু সাহসী? সবকিছুই কি নিখুঁত একটা অভিনয়? দিনের পর দিন স্রেফ অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে রজু?
রঞ্জ একটা দারুণ সমস্যা, এতোদিনে হঠাৎ মনে হয় খোকার। মুরাদকে কি সে গোপনে গোপনে কোনো চিরকুট চালান করেছে? এমন বুকের জোর পেল কোথা থেকে মুরাদ? রমনা রেস্তরাঁয় মুখের ওপর ফশ ক’রে একটা চিঠি ছুড়ে মারলে তার কি দশা হ’তো? নিজের সঙ্গে যুদ্ধ চলে খোকার।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024