শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৮১)

  • Update Time : শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

ক্ষয়রোগ তলে তলে কুরে খায়, তারপর আচমকা একদিন এক ঝলক রক্ত তুলে কেতন উড়িয়ে জাহির করে নিজেকে; বয়েসও একটা ক্ষয়রোগ। বুকের ভিতর ফাঁকা হ’য়ে গেল খোকার; আর সেই আসবাবপত্রহীন ফাঁকা ঘরে আপন অসহায়তার নুলো হাতে পিটপিটে কুপির আলো দেবার জন্যেই হাই হুম হাম শব্দ করলো দু’চারবার। তার যাবতীয় দুর্ভাবনার গায়ে আকুলতার পুঞ্জ পুঞ্জ আর্দ্রতা জমে : হয়তো আমার নিজের চোখে ধরা পড়ছে না, নিরন্তর সাবধান ক’রে দিচ্ছে এই চোখ আমাকে, ‘তুমি কোনোদিন সত্য উচ্চারণে সফলকাম হবে না এবং যাতে সফলকাম না হও সেইমতো একজোড়া কড়ির চোখ হ’য়ে আজীবন আমি তোমাকে পাহারা দেবো।’ মুরাদকে কি আমি হিংসা করবো, আমার চোখজোড়া ওর মতো সন্ধানী নয়। ও যা দেখতে পায় আমি তা দেখি না কেন। গাছের একটি ভিজে পাতায় চন্দ্রালোক দ্যাখে মুরাদ, আমি দেখি উদ্যত ফণা, ফলে আছাড় খেয়ে পড়ি দুঃস্বপ্নে। রঞ্জু কি হঠাৎ বড় হ’য়ে গেল?
ঘুম এলো না কিছুতেই। উঠে পানি খেলো খোকা। সিগ্রেট ধরালো। বই খুলে চেষ্টা করলো মনোযোগ দেবার, কিন্তু সবই বৃথা, শত চেষ্টা ক’রেও একটা পৃষ্ঠা ওল্টাতে পারলো না সে। কি হয় বই প’ড়ে, অপরিসীম শ্রান্তি ও অনমনীয় কাতরতায় একটু একটু ক’রে সে নুয়ে পড়ে; সে জানে এমন একটি চিন্তাও নেই সম্পূর্ণত যা তার নিজস্ব, একেবারে নিজের বলতে যা আছে তা কেবল যন্ত্রণা। এই একটাই সম্পত্তি যা একান্তভাবেই তার নিজস্ব। প্রত্যেকটি মানুষের যন্ত্রণা যার যার নিজের মতো, কারো সঙ্গে কারো মিল নেই, এই একটিই সম্পত্তি যা কারো কাছ থেকে ধার নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
শেষে পায়ে পায়ে রঞ্জুর ঘরে ঢুকলো।
বনস্পতির ছায়ার মতো মনোরম সবুজ আঁধার হালকা পাতলা ছিমছাম রঞ্জুর এই একটিপ শরীরটুকুকে কোমলতায় আচ্ছন্ন ক’রে রেখেছে। মনে হয় রাশি রাশি পাতার ফাঁক দিয়ে আসা এক চিলতে জ্যোছনার শান্ত নিরুদ্বিগ্ন আলো, যেন লতাগুল্মের স্নিগ্ধ নিঃশ্বাস; রাত্রিরাণীর স্খলিত বসনের একটি চিকন সোনালী সুতো। ডাকবে কি ডাকবে না ভাবতে ভাবতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে খোকা।
তারপর একসময় আলো জ্বেলে দেয় খুট ক’রে।
‘ঘুমিয়ে পড়েছিস?’
‘না।’
‘ঘুম আসছে তোর?’
‘না।’
‘আমারও ঘুম আসছে না। বসবি কিছুক্ষণ বারান্দায়?’
‘উঠছি–‘
ভিতরের বারান্দায় বসলো দু’জন। জ্যোছনার ঢল নেমেছে আজ। খুব কাছাকাছি কোথাও একটানা ডেকে চলেছে একটি পাখি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024