মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
মাহমুদুল হক
খোকা দেখলো জনৈক ছাত্রনেতা কোমরে একটি হ্যান্ডেল লাগিয়ে এবং অপর একটি হাত স্প্রিং-এর মতো নেড়ে নেড়ে অনর্গল তুবড়ি ছোটাচ্ছে, ‘এরা কারা? আপনাদের মতো আমাদেরও ওই একই প্রশ্ন, এরা কারা? জনতা এঁদের চেনে? এদের কি কোনো পরিচয় আছে জাগ্রত জনতার সঙ্গে? পরিচয় নেই। জনতা এদের চেনে না। এরা বিবরবাসী। মুক্ত আলোবাতাস থেকে বঞ্চিত এইসব হতভাগ্য অভিশপ্তেরা। জনসাধারণের সঙ্গে এদের কোনো সংশ্রব নেই, দেশের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিছুসংখ্যক বিপথগামী উন্মাদ। সস্তা বিপ্লবের ধুয়ো তুলে এই হঠকারির দল মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে আপনাদের। আমি হুঁশিয়ার ক’রে দিতে চাই–
একফাঁকে স’রে পড়লো খোকা। দিনের পর দিন সকাল-বিকেল- দুপুর চিরতার পানির মতো এইসব গিলছে উৎসাহীর দল; ভগ্নোদ্যমকে সেঁকে নিচ্ছে। ফাঁপা আস্ফালন ও বাঁধাগতের বুলি আওড়ানো, আর কিছু শেখেনি এরা এর বাইরে। দেশের বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতির সত্যিকার চেহারা কোনো বক্তৃতাতেই নেই, এদের ঘৃণা করে খোকা, এরা লোভী, ধূর্ত, শঠ, প্রবঞ্চক, সমগ্র দেশের রুচিকে এরা বিকৃত ক’রে তুলেছে।
পা ঘষাঘষি করতে করতে শেষ পর্যন্ত নীলাভাবীদের ওখানে গেল খোকা। রাজীব ভাই বাইরে। নীলাভাবী বললে, ‘নিতে এসেছ?’
‘এখনো ইচ্ছে আছে?’
‘তার মানে?’
‘আমি ভেবেছিলাম কথার কথা।’
‘এতোকিছুর পরও?’
‘এতোকিছু আবার কিসের, টেকনিকটা তো পুরানোই–‘
‘বাজেকথা ব’লো না, নিয়ে যাবে কি না বলো?’
বিছানায় গা এলিয়ে দিলো খোকা। দুটো বালিশ টেনে ঘাড়ের নিচে
চালান ক’রে হেসে বললে, ‘যদি তুমি আমার মাথা চিবিয়ে খাও–‘
‘খাবোই তো?
‘আসল কথা তোমাকে নিয়ে ভাগতে পারবো না!’
‘খারাপ কথা বলবো কিন্তু।’
‘এ আর নতুন কি-‘
নীলাভাবী খোকার হাত চেপে ধরলো। বললে, ‘ভেবেছো ঠাট্টার ছলে সব উড়িয়ে দেবে, আমি সব বুঝি, উত্তর তোমাকে দিতেই হবে, ব্যবস্থা তোমাকে করতেই হবে।’
Leave a Reply