শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-২৭)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪.১১ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

দ্বিতীয় অধ্যায়

আর নদী পারাপারের জন্য ছোট নৌকার ব্যবস্থা ছিল। খেয়ামাঝিকে গ্রামের লোক বাৎসরিক ধানের চুক্তিতে নিয়োগ করত। দ্বিতীয়মহাযুদ্ধ সমকালে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে লঞ্চ সার্ভিস চালু হল। খুলনা বরিশাল চাঁদখালি, কেষ্টচাঁদপুর, ঝিকিরগাছা, তালা, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ, ক্যানিং, ভাঙড়, হাড়োয়া, বসিরহাট, হাসনাবাদ প্রভৃতি এলাকা থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলি বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের নিয়ে যাতায়াত করত। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে নদীকে কেন্দ্র করে যাত্রী পরিবহণের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থা হিসাবে টাপুরে নৌকার প্রচলন ছিল। এসব নৌকায় ছই বা আচ্ছাদনের ব্যবস্থা ছিল। ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় আট/দশ জন আরোহী নিয়ে মাঝিরা রাতে নৌকা ছাড়ত এবং ভোরবেলায় গঞ্জে পৌঁছে যেত।

সুন্দরবনের অনেক মানুষ টাপুরে নৌকা না পেলে ছানার নৌকা বা মাছের নৌকায় কিছু ভাড়া দিয়ে গঞ্জে পৌঁছে যেত। ছানার বা মাছের নৌকাগুলোকে দূর দূরান্ত থেকে দ্রুত বেগে ছুটে কলকাতার ট্রেন ধরতে হত খুলনা, হাসনাবাদ, ক্যানিং, ডায়মন্ডহারবারে মামলা-মোকদ্দমা বা অন্য কোন কাজে জেলা বা মহকুমা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হলে সেদিনের যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসাবে এগুলি ছিল প্রধান অবলম্বন। ব্রিটিশ রাজত্বের শুরুতে সড়কপথ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা খুব বেশি সুন্দরবনে ছিল না। বাণিজ্যিক প্রয়োজনে সড়কপথ ব্যবহারের খুব একটা রীতি ছিল না। সব কিছুই নদীপথে হত এবং কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পথের সন্ধান ব্রিটিশ রাজত্বের শুরুতে লক্ষ করা যাচ্ছে।

গৌড়বঙ্গ সড়ক আজকের যশোর রোড দিয়ে এই সড়ক চলত। আজকের টাকী রোড ১৮৩৫ খ্রীষ্টাব্দের টাকীর জমিদার কালীনাথ মুন্সী টাকী থেকে বারাস। তপর্যন্ত করলেও এই রাস্তার অনেক অংশে আগে লোক চলাচল করতে পারত অর্থাৎ ব্রিটিশপূর্ব যুগ থেকে রাস্তার কিছু চিহ্ন ছিল। তা ছাড়া টাকী রোডের অনেক স্থানে নদীর তীরের বাঁধ হিসাবে ছিল এবং সেই বাঁধের ওপর দিয়ে লোক চলাচল করতে করতে পরবর্তীকালে রাস্তায় পরিণত হয়েছে। টাকী রোডকে কেন্দ্র করে লোকের মধ্যে প্রচলিত আছে কালীনাথ মুন্সী লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এই রাস্তা তৈরি করেন। সে যুগের পক্ষে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় অসম্ভব ব্যাপার। বারুইপুর থেকে ক্যানিং পর্যন্ত পাকা রাস্তা তৈরির জন্য খরচ হয়েছে ১৪০০০ টাকা।

সেক্ষেত্রে টাকী রোডের ৩৩ মাইল কাঁচা রাস্তার জন্য এবং এটাও আমরা জানি টাকা রাস্তার ক্ষেত্রে পিচের ব্যবস্থা হয়েছে ১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দের পরে এবং সেটা সরকারের উদ্যোগে, লক্ষাধিক টাকা খরচ-এই হিসাবটা অসম্ভব ব্যাপার। যাইহোক কালীনাথ মুন্সী সে যুগের অগ্রগণ্য সমাজসেবী এবং রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর-এর বিশিষ্ট বন্ধু বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে তাঁর দান অবশ্যই স্মরণীয়। উনিশ শতকের মধ্যে অনেকগুলি উল্লেখযোগ্য রাস্তা তৈরি হল আমাদের এই এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে। কালী পোদ্দার-এর উদ্যোগে যশোর থেকে বারাসত পর্যন্ত রাস্তা বর্তমানে যশোর রোড নামে পরিচিত এ সময়ে তৈরি হয়। যশোর থেকে চাকদহ রাস্তাও এ সময়ে করা হয়েছে। কলকাতা থেকে বারুইপুর পর্যন্ত রাস্তা সম্পূর্ণ করা হচ্ছে ১৮৯৫ খ্রীষ্টাব্দে বারুইপুরের জমিদারদের উদ্যোগে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024