পিওতর মান্তেইফেল
সামুদ্রিক সিংহ আর অতোলিৎ
‘এ আবার কী ব্যাপার?!’ সামুদ্রিক সিংহের শব- ব্যবচ্ছেদ করে অবাক হলেন চিড়িয়াখানার ডাক্তার। ‘পাকস্থলী আর নাড়িতে এর এত ক্ষত কেন? খাদ্য থেকে? কিন্তু গ্রীনল্যান্ডী সালমাছগুলোও তো এই একই নাভাগা মাছ খায়, অথচ দিব্যি আছে ওদের পাকস্থলী।’
চিড়িয়াখানা যত সামুদ্রিক সিংহ (দীর্ঘকর্ণ সীল- মাছ) পেয়েছে, থেকে থেকেই কেন রোগে পড়েছে তারা?
এই রহস্য উদ্ধারের চেষ্টা চালালাম আমরা, এবং শিগগিরই লক্ষ্য করলাম যে সামুদ্রিক সিংহের পরিপাক- পথটায় ‘অতোলিৎ’, বা নাভাগা মাছের কানের ছোটো ছোটো হাড় ছড়ানো।
আর নাভাগা মাছ এরা খেত বিপুল পরিমাণে।
অতোলিতের ধারগুলো ভয়ানক খাঁজ-কাটা, উখোর মতো। সামুদ্রিক সিংহের পাচক রসে সে হাড় গলে না, পাকস্থলী আর নাড়িতে আটকিয়ে গিয়ে তাদের গা আঁচড়ে দেয়। আঁচড়ের ক্ষত। জায়গাগুলোয় দেখা দেয় চিড়িয়াখানায় প্রতিটি সামুদ্রিক সিংহ পেত দিনে ষোলো কিলোগ্রাম করে নাভাগা মাছ। তার মানে, একদিনেই তার পেটে জমত অন্তত দু’-তিন মুঠো করে অতোলিৎ। বোঝাই যায়, ছোটো ছোটো এই করাতগুলো কী জখম করেছে ঐ হতভাগ্য জীবগুলোকে! কিন্তু অতোলিতে গ্রীনল্যান্ডী সীলমাছের স্বাস্থ্যহানি হল না কেন, যদিও সামুদ্রিক সিংহের চেয়ে নাভাগা মাছ তারা পেত খানিকটা কম?
খুব সম্ভব এইজন্যে যে গ্রীনল্যান্ডী সালমাছ যেসব জলে থাকে, নাভাগাও থাকে সেখানে। ক্রমাগত তা খাওয়ায় তারা ও খাদ্যটার সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে: নাভাগা খাওয়ার আগে তারা কামড়ে ফেলে দেয় তার মাথাটা। তাই অতোলিৎ-ও তাদের পেটে যায় না।
সামুদ্রিক সিংহের এ অভ্যাস গড়ে ওঠে নি, কেননা তাদের জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকা, সেখানে তারা খেত অন্য খাদ্য।
সামুদ্রিক সিংহদের মৃত্যুর কারণ জানার পর বাকি যারা টিকে ছিল, তাদের দেওয়া হত মুড়ো-ছাড়া নাভাগা মাছ।
Leave a Reply