শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১১)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬.০৬ পিএম

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

মুন (Ah-Mun) শস্যের দেবতা

 মায়া জনগোষ্ঠীর অন্যতম দেবতার নাম আ-মুন। আ-মুনকে কৃষি এবং ফসলের প্রতিনিধি হিসেবেও ভাবা হয়। এই দেবতার মূর্তির মধ্যে বিশেষ গঠন লক্ষ্য করা যায়। মূর্তি দু-হাত জোড়া করা এবং কানটি বেশ চওড়া এবং ছড়ানো।

এবং তার চারপাশে কিছু পাতা ছড়ানো। শস্যর বিশেষ কয়েকটি শত্রুও আছে ভাবা হয়। যেমন বাতাস, খরা, বৃষ্টি। তাই অনেক সময় শস্যর দেবতাকে চাক দেবতার নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়।

তবে এই চাক, আ-মুন (শস্যর দেবতা) সবাইকে সৃষ্টির প্রতীক হিসাবে মান্য করা হয়। হিন্দুধর্ম ও শাস্ত্রীয় বিচারে আমরা দেবী লক্ষ্মীকে দেখেছি বছরের ধন, শস্যর শুভ প্রতীক হিসাবে। এবং সেখানে লক্ষ্মীর হাতে ধান, শস্য দেখা যায়। মেক্সিকোর শস্যর দেবতার সঙ্গে তাই লক্ষ্মীর মিল আছে বলা হয়।

পুচ (Ah-Puch) মৃত্যুর দেবতা: মায়া জনগোষ্ঠী তাদের দেবতাকে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের সুরক্ষা বা সুস্থ জীবনযাত্রার সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছে। জীবন-এর মত অপর অমোঘ দিক হল মৃত্যু।

মৃত্যুকে ঘিরে মায়াদের নানারকম চিন্তা, বিশ্বাস, ভয় ছড়িয়ে আছে. এই বিশ্বাস-এর এক সুন্দর মূর্তি তারা গড়ে তুলেছে। এই মূর্তিটিতে একটা বিশেষ আকারের শরীর দেখা যায়। মুখটা অনেকটা আমাদের হনুমানের মত।

একটা মাথার খুলি, খোলা পাজরের হাড়। এই দেবতার নামের দুটি অংশ আছে। প্রথমটির নাম মৃতমানুষের মাথা যার চোখদুটো বন্ধ করা এবং দ্বিতীয়টি হল মূল দেবতার মাথা। যার নাকটা কাটা বা দু-ভাগ করা। চোয়ালের মধ্যে কোনো মাংস নেই।

মৃত্যুর দেবতা দিনের পৃষ্ঠপোষক। মায়া ভাষায় সিমিল (Cimil)। মায়া ভাষায় এর অর্থ হল মৃত্যু। আধুনিক মায়ারা এখনো বিশ্বাস করে যে এই জুম সিমিল (Yum Cimil) বা মৃত্যুর দেবতা গৃহস্থের বাড়িতে নানা অজুহাতে প্রবেশ করে। এবং এদিক ওদিক দোর বুঝে নিতে চায় সেই ঘরে কোনো অসুস্থ লোক বা রোগি আছে কিনা।

যাতে তাকে সুযোগ বুঝে নিয়ে যেতে পারে। এই ধরনের লোকবিশ্বাস আমাদের হিন্দু শাস্ত্রের কথা মনে করিয়ে দেয়। যেখানে আমরা যম-এর প্রসঙ্গ দেখতে পাই। আবার অন্যদিক থেকে মৃত্যুর দেবতা আ-পুচকে খারাপ/অশুভ দেবতা হিসেবেও দেখা হয়। এবং এই বাস্তবতার জন্য তাকে যুদ্ধের সঙ্গে এবং মানুষের বলিদান/আত্মত্যাগের প্রতীক হিসাবেও ভাবা হয়। আ-পুচ বা মৃত্যু দেবতার সঙ্গী বা বাহন হিসেবে দেখা যায় কুকুর, যন্ত্রণায় কাতরানো পাখি এবং পেঁচাকে। এই সঙ্গী বা বাহনদেরও অশুভ প্রতীক হিসেবে ভাবা হোত। আমাদের ভারতীয় সমাজে লোকবিশ্বাসের যে চল তাতে এই পাখি, কালো পেঁচাকে অশুভ, মৃত্যুর প্রতীক বলে ভাবা হয়।

নবম চেল (Chel) বন্যা এবং ধ্বংসের দেবী: প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মায়ারা খুব ভয় করত। তাই প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য তারা পুজো করত। নবম চেল হল (মায়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী) বন্যা, প্রাকৃতিক কোনো ধ্বংস এবং বজ্রপাত-এর দেবী।

এই দেবীর মাথায় থাকে সাপ এবং আড়াআড়িভাবে থাকে হাড়। দেবীর পোশাকের উপর এই হাড় এবং নকসী করা থাকে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন এই বিশেষ দেবী আবার স্বর্গের রাজা ইতজামনা (Itzamna)-র সহচরী।

চেলকে আবার অগ্নির প্রধানা বলে বিশ্বাস করা হয়। হিন্দুধর্মে স্বাহা (Swaha)-কে অগ্নিদেবী বলা হয়ে থাকে। স্বাহা আবার হিন্দুধর্ম শাস্ত্রের ভাষ্যে অগ্নি (Agni)-র সহযোগী।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১০)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১০)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024