সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

• চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যে শুল্কছাড়ের ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়তে পারে
• বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও কিছু খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও চাল ও ভুট্টার দাম কমেনি
• সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রমজানকালে প্রধান পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকতে পারে
• বাজারে এখনো পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে দাম বেশি থাকায় ভোক্তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বস্তি পাচ্ছেন না

২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি পর্যবেক্ষণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রমজানকে সামনে রেখে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যের আমদানি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যদিও সরকারিভাবে শুল্ক ও করছাড়সহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, বাজার বিশ্লেষকদের মতে সাধারণ ভোক্তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম এখনো তুলনামূলকভাবে চড়া।

আমদানির ঊর্ধ্বগতি

• বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অক্টোবর-জানুয়ারি সময়কালে চিনি, সয়াবিন তেল, ডাল, আদা, রসুন, খেজুর ও ছোলার আমদানি ২৩ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
• এই সময়ে চিনি আমদানি হয়েছে প্রায় ৪.৫৪ লাখ টন, যা গত বছরের একই সময়ে ৩.৭৯ লাখ টন থেকে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

বাজারের বর্তমান অবস্থা

• আমদানি বেড়েও সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ এখনো নিশ্চিত হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের স্বল্পতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্য (এমআরপি)-এর চেয়েও বেশি দামে এই তেল বিক্রি হচ্ছে।
• গত বছরের একই সময়ে খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৬০-১৬৫ টাকায় এবং বোতলজাত তেল ১৭৩-১৭৫ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন অনেক দোকানে দাম আরও বেশি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ডিস্ট্রিবিউটররা প্রয়োজনীয় পরিমাণ পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না।

. মূলদ্রব্যের দাম ও সরবরাহ-সংকট

• বাজারে ছোলার দাম মানভেদে কেজিপ্রতি ১২৫ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে রয়েছে, যেখানে গত বছর একই সময়ে এটি ৯০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো।
• ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেজুরের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

সরকারের উদ্যোগ ও বিটিটিসি-এর পর্যবেক্ষণ

• বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রমজানকালে প্রধান পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
• আন্তর্জাতিক বাজারে ডাল ও ছোলার দাম সামান্য বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিটিটিসি। ফলে এ দুটি পণ্যের মজুত ও সরবরাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
• চাল, ভোজ্যতেলসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্যে সরকার কিছুটা কর ও শুল্কছাড় দিয়েছে, যা পণ্যের দাম কমে আসতে সহায়তা করতে পারে।

বৈশ্বিক বাজারের প্রভাব

• ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও নন-এনার্জি পণ্যের পাশাপাশি কিছু খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা হ্রাস পেলেও চাল ও ভুট্টার মতো শস্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি।
• রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটলে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে বেশ কয়েকটি আমদানি পণ্যের দাম আরও কমতে পারে বলে বিটিটিসি আশা করছে।
• সার ও জ্বালানির দাম কমলে স্থানীয় কৃষিতে উৎপাদন খরচও হ্রাস পেতে পারে, যার ইতিবাচক প্রভাব খাদ্যমূল্যে পড়বে।

বাজার স্থিতিশীল রাখতে করণীয়

• ডলারের বিনিময়হার স্থিতিশীল রাখা এবং আর্থিক ও রাজস্বনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন বলে মনে করে বিটিটিসি। এতে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।
• আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম তুলনামূলকভাবে কমতির দিকে থাকায় এবং সরকারের কর-শুল্কে ছাড় দেওয়ায় রমজানে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমে আসতে পারে।

সার্বিক মূল্যায়ন

• সরকার ও ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে প্রায় ৪.৩ লাখ টন চাল আমদানি করেছে। চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যে শুল্কছাড়ের ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়তে পারে।
• কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)কর্মকর্তা সরকারের পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য থাকলে রমজানকালে সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন।

উপসংহার

রমজানকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে উচ্চমূল্য ও সরবরাহের অপ্রতুলতা এখনো চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। যদি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো শুল্ক ও করছাড়, নিবিড় বাজার পর্যবেক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে রমজানে বাজার তুলনামূলকভাবে সহনীয় হতে পারে।