মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সহায়তা

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং সহায়তা নিশ্চিত করাই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। তিনি ‘স্মার্ট ট্রাভেলার এনরোলমেন্ট প্রোগ্রাম’ (STEP)-এ নিবন্ধন করতে নাগরিকদের উৎসাহিত করেন এবং জরুরি প্রয়োজনে নিকটস্থ দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

ইসরায়েল, পশ্চিম তীর এবং ইরানে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য নতুনভাবে যুক্ত একটি ‘ক্রাইসিস ইনটেক ফর্ম’ পূরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা জরুরি সহায়তা এবং প্রস্থানের তথ্য পেতে পারেন।

ইরান ও ইসরায়েল পরিস্থিতি: কূটনৈতিক সুযোগ ও সতর্ক বার্তা

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্যামি ব্রুস বলেন, “আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, তার ওপর ভিত্তি করে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।” যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইরান থেকে সরাসরি নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে না, তবুও বিদ্যমান সুযোগগুলো কাজে লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কঙ্গো-রোয়ান্ডা শান্তিচুক্তি: এক ইতিবাচক পদক্ষেপ

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং রোয়ান্ডার মধ্যে তিন দিনের আলোচনার পর একটি শান্তিচুক্তির খসড়ায় সম্মতি হয়েছে। আগামী ২৭ জুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। ব্রুস বলেন, “এটি কেবল ওই অঞ্চলের জন্য নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি বড় মাইলফলক।”

যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত এডান আলেকজান্ডার

হামাসের হাতে জিম্মি এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি এবং নিউ জার্সিতে তার ফিরে আসা নিয়ে আবেগঘন দৃশ্যের উল্লেখ করেন ব্রুস। তিনি বলেন, “এটি প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের পাশে থাকে, পৃথিবীর যেখানেই তারা থাকুক না কেন।”

জুনটিন্থ দিবস: দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রতীক

ব্রিফিংয়ে ‘জুনটিন্থ’ দিবস নিয়েও আলোচনা হয়। ১৮৬৫ সালের ১৯ জুন টেক্সাসের গ্যালভেস্টনে পৌঁছে ইউনিয়ন জেনারেল গর্ডন গ্রেঞ্জার দাসপ্রথার অবসান ঘোষণা করেছিলেন। এ দিন এখন স্বাধীনতা ও সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।

ইরান পরিস্থিতি ও কূটনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা

ব্রুস জানান, ইরানের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ এখনও খোলা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনায় দুই সপ্তাহ সময় নিচ্ছেন। বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। তবে ইসরায়েল যদি ইরানে হামলা চালানো বন্ধ না করে, তাহলে ইরান আলোচনায় বসবে না বলেও সতর্ক করেছে।

এদিকে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন শঙ্কা প্রসঙ্গে ব্রুস বলেন, “আমাদের একমাত্র স্পষ্ট অবস্থান, ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না।”

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: আলোচনাই একমাত্র পথ

ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে ব্রুস বলেন, “আমরা কাজ দিয়ে বিচার করি, কথা দিয়ে নয়। শান্তি আসবে শুধুমাত্র পুতিন এবং ইউক্রেনের নেতারা একত্রে বসে কোনো চুক্তিতে পৌঁছালে।”

মার্কিন নাগরিকদের তথ্য এবং উদ্ধার অভিযান

পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২৫,০০০-এর বেশি মার্কিন নাগরিক বিভিন্ন সংকটময় অঞ্চলে তথ্যের জন্য যোগাযোগ করেছেন। তবে এদের কতজন ইসরায়েল, পশ্চিম তীর বা ইরান থেকে উদ্ধার হয়েছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

মানব ঢাল ব্যবহার এবং হত্যাচেষ্টা অভিযোগ

ইরানে সেনাঘাঁটিগুলোতে মানব ঢাল ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে ব্রুস জানান, “আমরা এ ধরনের অভিযোগ সম্পর্কে অবগত রয়েছি।” অপরদিকে ইরানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

ব্রিফিংয়ের শেষদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভল্কার টার্ক এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা ও সাংবাদিকদের বিচারবহির্ভূত আটক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে ট্যামি ব্রুস বলেন, “ডেপুটি সেক্রেটারি লান্ডাউ সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মি. রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনায় নির্বাচনের প্রস্তুতি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়।”

সাংবাদিকদের নির্যাতন ও রাজনৈতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে তার মন্তব্য ছিল, “আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব এবং পরে জানাবো।”

আঞ্চলিক শান্তি উদ্যোগ এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

তুরস্ক ও আর্মেনিয়ার নেতাদের ইস্তাম্বুল বৈঠক, জাপানের সঙ্গে ২+২ নিরাপত্তা সংলাপ বাতিল, এবং চীনের ইরানে সহযোগিতার সম্ভাব্য খবর নিয়েও প্রশ্ন ওঠে, যেগুলো নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

পরিশেষে ট্যামি ব্রুস বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে তিনি দ্বিধা করবেন না।”