মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন

মানুষ হত্যার হিংস্রতা

  • Update Time : শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪, ৯.২০ এএম

মানব সমাজকে যখন ধর্ম, বর্ণ, গোত্রে ভাগ করা হয়নি তখনও দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ছিলো এ সমাজে, এ পৃথিবীতে। আর সেই মৃত্যু থেকে আজ অবধি যত মৃত্যুকে পৃথিবী তার ইতিহাসে লিখে রাখতে পেরেছে, সেখানে দেখা যায়- মানুষই মানুষকে সব থেকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

মানুষ অনেক হিংস্র পশুর খাদ্য, মানুষ যখন জঙ্গলে পশুর পাশাপাশি বাস করতো তখন থেকে আজ অবধি দেখা যায়, পশু তার খাদ্য হিসেবে মানুষকে যখন হত্যা করছে, সেখানে কিন্তু হিংস্রতা নেই। আছে কেবল খাদ্য গ্রহনের বা খাদ্য লাভের একটি চেষ্টা মাত্র। তার ভেতর দিয়ে একটি মৃত্যু। যেমন মানুষও অনেক জীবকে খাদ্য হিসেবে হত্যা করে।

অথচ সেই সুদূর অতীত থেকে নারী দখল, খাদ্য দখল, তারপরে একের পর এক যখন পৃথিবীতে নানান কিছু সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু হলো, সেই সব সম্পদ দখলকে কেন্দ্র করে মানুষ যে মানুষকে হত্যা করতে শুরু করলো- সেখানে চলে এলো নির্মমতা। খাদ্য শিকারের জন্যে মানুষ যে সব অস্ত্র তৈরি করেছিলো তা দিয়ে শুরু করে আরো নির্মমভাবে হত্যা। আর সেই আদিম বর্বরতা ক্রমেই জমা হতে থাকে মানুষের স্বভাবে, রক্তের অনু পরমানুতে। যার ফলে মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে একমাত্র মানুষই হিংস্র, কোন পশু নয়।

এরপর সভ্যতার অযুত নিযুত বছর পার হলেও সেই আদিম বরর্বতা রয়ে গেছে মানুষের স্বভাবে, মানুষের রক্তের অনু পরমানুতে। তাই মানুষকে শান্ত করার জন্যে, মানুষকে সুন্দরের পথে নেবার জন্যে রাজ্য, ধর্ম, রাষ্ট্র অনেক কিছুই একের পর এক সৃষ্টি করা হয়েছে পৃথিবীতে। অথচ তার সঙ্গেও মানুষ জড়িয়ে ফেলেছে সেই মানুষ হত্যার আদিম বরবর্তা। মানুষকে শান্ত রাখতে যে রাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছিলো, সেই রাজ্যপতির মধ্যে জেগে উঠেছিলো অন্য রাজ্য দখল করার লোভ। যার ফলে রাজায় রাজায় যুদ্ধ শুরু হলো। সেখানে কেবল মৃত্যু- এমনকি  সে মৃত্যু নারী, শিশুরও। আর যে কোন হামলা বা যুদ্ধে নারীকে মরতে হয় দু’বার। একবার তার গচ্ছিত্ শ্লীলতা হারিয়ে আরেকবার শাররিক ভাবে। এর পরে ধর্ম এলো। সেখানেও এ নিমর্মতা থামাতে পারলো না সভ্যতা। এক ধর্ম আক্রমন করতে শেখালো আরেক ধর্ম অনুসারীকে। যোগ হলো আরেক হিংস্র হত্যাকান্ডর পথ। তারপরে প্রায় সব ধর্মের মধ্যে এল বিভাজন। সেখানেও যোগ হলো একই বিষয়। ধর্মের সঙ্গে এসে যোগ হলো বর্ণ। এক বর্ণ মনে করলো অন্য বর্ণের থেকে সে সুপিরিয়র। তাই সেখানে হিংস্র হত্যা তার জন্যে বৈধ।

এই সব ঠেকাতে সভ্যতা সৃষ্টি করলো আধুনিক রাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে রাষ্ট্র ক্ষমতা  এতই বেশি আগ্রাসী হলো যাতে অর্থ, প্রতিপত্তি, মান-সম্মান সব কিছুর নির্ধারক হয়ে গেলো ওই ক্ষমতা। আর সে ক্ষমতা পাবার জন্য, ক্ষমতা রাখার জন্যে কেউ তাই ফিরে তাকায় না নির্মম হত্যার হিংস্রতা ও মানবিক  ক্ষতির দিকে। ক্ষমতায় উম্মত্ত পৃথিবী শুধু নিজ দেশে ক্ষমতা নয়,  অন্য দেশে নানান ক্ষমতা ছড়াতে একের পর এক অজস্র মৃত্যু কাহিনী সৃষ্টি করলো। পর পর দুটি বিশ্ব যুদ্ধ আর কোটি কোটি মানুষ হত্যার পরেও বন্ধ হলো না সেই নরহত্যার যুদ্ধ।

তার সঙ্গে সঙ্গে অস্থিতিশীল দেশগুলোতে রাষ্ট্র ক্ষমতা রাখা ও দখল করার জন্য সব সময়ই হিংস্র নরহত্যা একটি সঙ্গী হয়ে রয়ে গেছে। তাই সে আফ্রিকায় হোক, সেন্ট্রাল এশিয়া হোক আর দক্ষিণ এশিয়ায় হোক। আর এই সব নরহত্যায় ক্ষমতা রক্ষাকারী ও ক্ষমতা দখলকারীরাই শুধু পরস্পর সংঘর্ষে মারা যায় না। মারা যায় ধর্ম ও বর্ণে ভাগ হয়ে যারা সংখ্যালঘু হয় তারা বিনা কারণে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রক্তপাতের হিংস্রতায় বাদ যায়নি অতি সাধারণ দরিদ্র সংখ্যালঘুও। পৃথিবী কবে এই হিংস্র হত্যা আর ধর্ম ও বর্ণের নামে মানুষকে সংখ্যালঘু করে দুর্বল করা থেকে বের হতে পারবে- সেই সকালের সূর্য কত অযুত নিযুত বছর পরে উঠবে, কেউ জানে না। তারপরেও বলা যায় রাষ্ট্র ক্ষমতার যুদ্ধ থেকে অনেক দূরে যে নিরিহ দরিদ্র মানুষগুলো থাকে তাদেরকে হিংস্র হত্যার হাত থেকে বাঁচানোর মতো একটা সমাজ ও বিচার করার মতো একটা রাষ্ট্র হওয়া কি একান্তই দরকার নয়? রাষ্ট্র, ক্ষমতা কি তাদের কাছে কখনই আগে যাবে না, যারা নিহত হয়েছে কেবলই দুর্বল বলে?

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024