মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন

ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে -প্রধান বিচারপতি

  • Update Time : সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪, ১০.৩০ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহাজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফলে আমার কাঁধে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা আমি পালন করে যাব। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে বলে জানান তিনি।

সোমবার আপিল বিভাগে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার জবাবে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। এসময় সুপ্রিম কোর্টের সকল বিচারপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানবিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শহীদদের স্মরণ করে বলেন, সারা দেশের ছাত্র-জনতা ও শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। যারা এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলেন তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহাজাগরণের উন্মেষ ঘটিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের ফলে আমার কাঁধে যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা আমি পালন করে যাব। এই মুহূর্তে আমরা ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে। এতদিন ন্যায়বিচারের পরিবর্তে নিপীড়নের নীতি প্রচলিত ছিল।

প্রধানবিচারপতি আরো বলেন ,বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতি দুষ্টিপাত করলে বোঝা যায় ইতিহাসের ইতিহাসের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে আমাদের পুর্বপুরুষগণ সব সময় ন্যায়ের প্রতিষ্টা ও অধিকারের সুরক্ষার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছে।

 

সেই সব ধারাবহিক লড়াই সংগ্রামের সর্ব সাম্প্রতিক সংগ্রামটি হলো ২০২৪ সালের সংঘটিত আমাদের এই গনঅভ্যুত্থান। এ ক্সেত্রে লক্ষনীয় যে , আমাদের বীর ছাত্র জনতার ইতিহাসের এক মহাকান্তিকালের অনিবার্য আহবানে সারা দিয়েছেন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক মহা জাগরনের উম্মেষ গটিয়েছেন।

এর আগে সোমবার সকাল ৭টায় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। পরে সাভার থেকে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে জাতীয় শহিদ মিনারে পৌঁছান। এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

একইসঙ্গে জাতীয় শহিদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ছাড়াও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগন, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে উদ্দেশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আপনি।

আপনাকে রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ প্রদান করেননি, আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে এ দেশের শত শত নিরীহ ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্ব গাথা। সোমবার আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। বিপবোত্তর যে কোনো দেশে রাজপথ কিংবা রণাঙ্গন ঠিক করে দেয় সে দেশের নেতা কে হবে। আর আমাদের দেশের বীর ছাত্ররা, তাদের পাশে থাকা অভিভাবকেরা, তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাজপথ থেকে আপনাকে প্রধান বিচারপতি করার দাবি তুলেছিল। এ ভালোবাসা বিরল, এ ভালোবাসা অমূল্য, এ ভালোবাসা নিয়ে গর্ব করতেই পারি, তাই না?

অন্যদিকে প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আহ্বান করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

সোমবার আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে রেওয়াজ অনুযায়ী নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেওয়া সংবর্ধনায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, বিগত দিনে বিচার বিভাগকে ক্রমান্বয়ে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ করে রাখার মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

আমরা দেখেছি কীভাবে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ছাত্র জনতার যৌক্তিক ও অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিচার বিভাগকে জনরোষের মধ্যে ফেলে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আর এ ধরণের ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আশা করি না।

প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্যে করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা রক্ষায় এবং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে বিচার বিভাগের প্রতি নতুন প্রজন্ম এবং বাংলাদেশের গণমানুষের যে আশা আকাঙ্খা তার প্র্তিফলন ঘটানো অত্যাবশ্যক।

আপনি বিচার বিভাগের প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করবেন। নাগরিকের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। মামলা পরিচালনার দীর্ঘসূত্রতা দূর করবেন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। সমাজের সব বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024