মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন

আওয়ামীলীগকে সঠিক পরামর্শ দিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ এএম

স্বদেশ রায়

গত কয়েকদিনে গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ যা করছিলো তা নিয়ে দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকই শংকিত হয়ে উঠেছিলো। কারণ, ১৮ জুলাই থেকে দেশে যে রক্তপাত শুরু হয়- তা কেউই মেনে নিতে পারেনি। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষও গত সরকারের শেষ দিনের আগ অবধি তিনটি লেখাতেই সে সময়ে রক্তপাতের বিপরীতে দেশকে নিয়ে যাবার জন্যে লিখেছিলাম। এছাড়া, গত সরকারের পতনের পরে দেশ যখন সরকার বিহীন ছিলো সে সময়ে সকলেই অনেক বেশি শংকিত ছিলো। এ অবস্থায় সরকার গঠন হবার পর পরই গোপালগঞ্জের অবস্থা আরো বেশি শংকিত করে তোলে মানুষকে।

গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বার বার লিখেছি, সংগঠন হিসেবে আওয়ামীলীগ ধ্বংসের পথে। দেশের বিভিন্ন এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা ও তাদের জনপ্রতিনিধিরা শুধু জনবিচ্ছিন্ন নয়, অনেকটা অত্যাচারী জমিদার হয়ে উঠেছিলো। আর সব থেকে বেশি ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো, সর্বাধিক পুরাতন এ দলটির নেতারা  দলের নিবেদিত কর্মী, সমর্থক ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়ে- দলটিকে একটি বিশেষ গন্ডির মধ্যে আটকে ফেলেছিলো। যদিও এ শুধু বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের চরিত্র নয়, সকল রাজনৈতিক দলেরই কম বেশী একই চরিত্র। হয়তো বিরোধী দলে থাকলে একটু ভিন্ন থাকে। কিন্তু ক্ষমতায় যাবার পরে সকলেই একই আচরণ করে। এমনকি, ক্ষমতাচ্যূত যেভাবেই হোক না কেন,  তারা কেউই তাদের ভুলগুলো নিয়ে চূলচেরা বিশ্লেষণ কেন,  কোনরূপ বিশ্লেষণ বা গবেষণা বা কোন রিপোর্ট তৈরিতে যায় না। তারা তখন অপরের ওপর দোষ চাপাতে চায়।

এ মুহূর্তে তাই আওয়ামী লীগ যদি তাদের ক্ষমতাচ্যূত হবার কারণগুলো নিজেদের ত্রুটির মধ্যে না খোঁজে তাহলে সেটা হবে তাদের সব থেকে বড় ভুল। পাশাপাশি তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে, তারা কোন ধরনের দল ছিলো আর যখন ক্ষমতাচ্যূত হয়েছে তখন তাদের কী রূপ হয়েছিলো? এ মূল্যায়নের জন্যে একটি উদাহরণই যথেষ্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বলেছিলেন, “ ছাত্রলীগের ইতিহাসই, বাঙালির ইতিহাস” । বাঙালি কম পক্ষে আড়াই হাজার বছর, ওপরে ছয় থেকে সাত হাজার বছরের একটি জনপদের জাতি। তার ইতিহাস কোন একটি পঁচিশ তিরিশ বছরের সংগঠনের ইতিহাসের মধ্যে বাধা যায় না। তারপরেও এটা বলা যায়, বাঙালির ১৯৭১ সালের রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ছাত্রলীগের ভূমিকা অনন্য। আর সেই ছাত্রলীগকে আওয়ামীলীগ সরকারের এবারের পতনের আগে প্রকাশ্যে নারীর শরীরে আঘাত করতে দেখা গেলো।

পৃথিবীর যে কোন দেশে দ্রৌপদির বস্ত্র হরনের পরে কুরুক্ষেত্র অনিবার্য- তাই সে চৌদ্দ বছর পরে হোক আর চৌদ্দ দিন পরে হোক। সত্যি অর্থে দেশে এখনও কুরুক্ষেত্রের রক্ত শুকায়নি। এমত অবস্থায় দেশের সবথেকে পুরানো বড় দল হিসেবে প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের দ্বায়িত্ব অনেক বেশি। তারা যদি কোনক্রমে আর এক ফোঁটা রক্তের দিকে দেশকে ঠেলে দেয়- তাহলে সেটা হবে চরম ভুল। তাছাড়া আওয়ামী লীগের মনে রাখা প্রয়োজনতারা কখনই কোন বিপ্লবী দল নয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সরকার গঠনের মাধমে। কোন বিপ্লবী সরকার গঠন করে নয়। 

এই আওয়ামীলীগকে উদ্দেশ্য করে বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেনারেল সাখাওয়াত মিডিয়াকে বলেন, আওয়ামীলীগের অনেক অবদান আছে এদেশে। দলটি দেশের সম্পদ। তিনি ৫২’র ভাষা আন্দোলন ৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থানের ইতিহাস নষ্ট না করতে অনুরোধ করেন। বরং তিনি দলকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠিত করার জন্যে পরামর্শ দেন। দলকে প্রতিবিপ্লবের পথে গিয়ে দেশকে ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তিনি আরো বলেছেন,  এই দলকে পুর্নগঠিত করে নির্বাচনের সময়ে নির্বাচনে যেতে হবে, মানুষের রায় নিতে হবে।  এর জন্যে সময় লাগবে। সে অপেক্ষার প্রয়োজন আছে।

বাস্তবে, শুধু আওয়ামী লীগের জন্যে নয়, দেশের স্থিতিশীলতার জন্যে, দেশের ভবিষ্যতের জন্যে এবং ভবিষ্যেতে একটি সঠিক রাজনীতির জন্যে আওয়ামী লীগকে এ সময় নিতেই হবে। দেশকে নৈরাজ্য’র দিকে ঠেলে দেয়া কোন মতেই সঠিক কাজ নয়, বরং দেশ ও মানুষকে আরো বিপদে ফেলে দেয়া। জনপদে আগুন লাগলে দেবালয়ও বাদ যায় না। তাই সত্যি অর্থে সঠিক রাজনীতি, যত বেশি আগুন নেভানো যায় সেটাই। রাষ্ট্র ও সমাজে মাঝে মাঝেই আগুন লাগে। রাজনীতির কাজ এ আগুন নেভানোর সহায়ক হওয়া। আগুন জ্বালানো নয়।

এ কারণে এ মুহূর্তে গোপালগঞ্জে যে হঠকারিতার পথ দেখা গেছে এ পথ কোন মতেই দেশের জন্যে,আওয়ামীলীগের জন্যে শুভ নয়।

আওয়ামীলীগকে মনে রাখতে হবে, এন্টিসেপটিক দিলেও ক্ষত শুকাতে সময় লাগে। আওয়ামীলীগকে এখন সময় নিতে হবে। এবং একটি সুস্থ স্বাভাবিক পথে তাদেরকে সংগঠন পুর্ণগঠন করতে হবে। পাশাপাশি অবশ্যই নতুন ও পরিবর্তিত পৃথিবীর রাজনীতি তাদেরকে গ্রহন করতে হবে। মনে রাখা দরকার, ব্যক্তির জন্যে যা অনেক বেশি সময় তা জাতির জন্য খুবই কম। কারণ, একটি জাতি প্রবাহিত হয় হাজার হাজার বছর ধরে। যে কোন রাজনৈতিক দলকে এই দীর্ঘ প্রবাহমান ধারাকে মনে রাখতে হয়। সর্বোপরি যে কোন হঠকারি পথ সব সময়ই অন্ধকার যুগ টেনে আনে।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World. 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024