মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১০ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-০২)

  • Update Time : শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪, ৪.০০ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

প্রথম অধ্যায়

মোগলদের কাছে দক্ষিণ বাংলার এই অঞ্চল বুল্ল্গাখানা বিদ্রোহীদের আস্তানা। পরিপূর্ণ রূপে সমগ্র এলাকা কখনই মোগল অধিকারে আসেনি। আইন-ই-আকবরীতে উল্লেখ করা হয়েছে- Easan Afgan carried his conquests towards east into a country called Bhatty which is reckoned a part of this Subha-Bengal. সাঁতগা সরকারের অধীন সুন্দরবনের এক বিশাল এলাকা ছিল সেদিন ( ১৫৮২ খ্রীষ্টাব্দে টোডরমল বাংলাদেশ জরীপ করে রাজস্ব নির্ধারণ করেন। মেদিনীপুরের হিজলী থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকের সমতলভূমির নাম ছিল ভাটি।

১৬৫৮ খ্রীষ্টাব্দে বাংলাদেশ পুনরায় জরীপ করা হল সাজাহান পুত্র সুলতান সুজার নেতৃত্বে- এই জরীপে সুন্দরবন চিহ্নিত হল মুরাদখানা বা জিরৎখানা হিসাবে। (*) মামুদ শাহের রাজত্বকালে নবাব জাফর খাঁর নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মত জরীপ করা হল। সুন্দরবনকে কয়েকটি পরগণার মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেল। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য নিমক মহল, জঙ্গলমহল, বালিয়া, বালান্দা, সরফরাজপুর, আমিরাবাদ, পাইহাটি, মাইহাটি, মদনমল্ল, হাতিয়াগড়, সাগর, খাসপুর ইত্যাদি। মীরকাশিমের রাজত্বকালে চতুর্থবারের মত বাংলাদেশ জরীপ করা হল ১৭৬০-৬১ খ্রীষ্টাব্দে। সুন্দরবন কাঠ, মোম, মধু, লবণ ও চুন সংগ্রহের একটা বড় স্থান হিসাবে বিবেচিত হল এবং সুন্দরবনের আর্থিক সম্পদের দিকে সরকারের দৃষ্টি নিবদ্ধ হল।

কিন্তু ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে সুন্দরবনের একটা বিস্তীর্ণ এলাকা জনবসতিশূন্য হয়ে যায়- এর পিছনে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মগজলদস্যুদের বারংবার আক্রমণ। মগজলদস্যুদের উৎপাত সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পরবর্তীকালে ঊনিশ শতকের শুরুতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সাগর দ্বীপ উঠিত করার সময় দেখা যাচ্ছে সমস্ত এলাকাটাই বনভূমি কিন্তু সমুদ্র তীরবর্তী এক হাজার বিঘার মত জমিতে মানুষের অস্থায়ী ভাবে বসবাসের চিহ্ন রয়েছে।

তা থেকে অনুমান করা হল মগজলদস্যুরা মাঝে মাঝে এখানে আস্তানা তৈরি করে আবার প্রয়োজনমত অন্যত্র চলে যেত। মগজলদস্যুদের অত্যাচার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনবসতি লোপ পাবার কারণ হতে পারে কিন্তু আর একটা প্রধান কারণের কথা উল্লেখ করেছেন ভৌগোলিকরা। গঙ্গার প্রধান জলধারা বিগত দুই-তিন শতাব্দী ধরে প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে সরে যাচ্ছে। যার ফলে সুন্দরবনের পূর্বদিকের নদীর জল লবণাক্ত হচ্ছে- লবণাক্ত জলের চাপে সুন্দরবনের এই অংশে শস্যহানি ঘটতে থাকায় জনবসতি শূন্য হয়ে বনভূমিতে পরিণত হয়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024