মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৪৩)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

পূর্ব্বে খোশবাগের সমাধি-ভবন রৌপ্য ও স্বর্ণময় পুষ্পখচিত কৃষ্ণবর্ণ বস্ত্রের দ্বারা আচ্ছাদিত হইত এবং সমাধিগৃহে উত্তম- রূপে প্রদীপ জ্বলিত হইত। এক্ষণে আর সে সকল বস্ত্র দেখিতে পাওয়া যায় না। শুনা যায়, বিশেষ বিশেষ পর্ব্বোপলক্ষে শতছিন্ন সেই পুরাতন বস্ত্রগুলি ব্যবহৃত হইয়া থাকে। সমাধিগৃহে দীপ জ্বালিবার জন্য এক্ষণে মাসে চারি আনা মাত্র তৈলের ব্যবস্থা হইয়া থাকে! বিশেষ বিশেষ পর্ব্বোপলক্ষে সমাধিগুলির উপর মিষ্টান্নাদিও নিক্ষিপ্ত হইয়া থাকে।
খোশবাগের সমাধিভবনের কথা অনেকানেক ইউরোপীয় প্রশংসার সহিত উল্লেখ করিয়াছেন। হজেস্ সাহেবের ভারতভ্রমণে ইহার উল্লেখ আছে। ১৭৮২ খৃঃ অব্দে ফষ্টার নামে কোন ইংরাজ খোশ বাগে উপ- স্থিত হইয়া লুৎফ উন্নেসাকে সিরাজের জন্য শোক প্রকাশ করিতে দেখিয়া ছিলেন। বহরমপুরের এক্সিকিউটিব ইঞ্জিনিয়ার কাপ্তেন লেয়ার্ড’ খোশবাগের এক সুন্দর বিবরণ লিখিয়াছিলেন’।
তাঁহার সময়ে খোশ- বাগের প্রবেশদ্বারের সম্মুখে একটি বাঁধাঘাটের চিহ্ন ছিল, সে চিহ্ন অনেক দিন পর্যান্ত দেখিতে পাওয়া যাইত, এক্ষণে তাহা ভূগর্ভে প্রোথিত। লেয়ার্ড’ খোশবাগের প্রাচীরে বন্দুক ছাড়িবার ছিদ্র দেখিয়াছিলেন; এক্ষণে সে প্রাচীরের নূতন সংস্কার হইয়াছে। তিনি সমাধিভবনের
বৃক্ষশ্রেণীর ও কুসুম-কাননের অনেক প্রশংসা ও সমাধির আচ্ছাদন কৃষ্ণবর্ণ বস্ত্রাদিরও উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। খোশবাগের উত্থানটি অনেকটা সেই রূপই আছে; কিন্তু সমাধির জন্য যেরূপ ব্যবস্থা ছিল, এক্ষণে তাহার কিছুই নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। মধ্যে মধ্যে খোশ বাগের সংস্কার হইয়া থাকে। সম্প্রতি সুন্দররূপে সংস্কার করায়, মুর্শিদাবাদের মধ্যে ইহা একটি রমণীয় দৃণ্য হইয়া উঠিয়াছে। ছায়াতরঙ্গের লীলাভূমি এই রমণীয় সমাধিকাননে উপস্থিত হইলে, হৃদয়ে কেমন এক অনির্বচনীয় ভাবের উদয় হয়। আলিবন্দী ও সিরাজের সমাধি আজিও শ্মশান মুর্শিদাবাদ হইতে লয় পায় নাই, ইহাও কিয়ৎপরিমাণে আশ্চর্য্যের বিষয় বলিতে হইবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024