মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৯৬)

  • Update Time : সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

দেহ কি? শরীর কি?

খোকা ক্লান্ত হ’য়ে পড়ে। নারীদেহ সম্পর্কে যতো বিশেষণই প্রয়োগ করা হ’য়ে থাক না কেন, আসলে তা নিছক তাল তাল গোবরের মতো মাংস ছাড়া আহামরি এমন কিছু নয়; স্পষ্ট মনে আছে খোকার, সেদিন সেই চরম মুহূর্তের পর কিভাবে গ্লানিতে ভ’রে গিয়েছিলো তার মন। অবসন্নতায়, মনহীনতায়, নিরাসক্তিতে, সে দুমড়ে পড়েছিলো যখন দেখলো সারা গায়ে দুর্গন্ধ নিয়ে প্যাচপেচে ভাগাড় থেকে নেড়ীকুত্তার মতো সে উঠে আসছে।

সবই ভুষিমাল, ঘটনাচক্রে একবার ঘেঁটে দেখেই সে বুঝেছে। গোটা মানব সমাজটাই ভুষিমালের কারবারী, সমজদার। খোকা জানে, এই নীলাভাবীরা তাদের দীর্ঘ বিলম্বিত যৌবন নামক দেহসম্ভারকে লোকচক্ষুর সম্মুখে যতো মজবুত গদরেজের সিন্দুকেই আগলে রাখার অভিনয়পটুতা দেখাক না কেন, তাদের ঘরের সব দেয়ালই ফুটো, সব দরজাই অর্গলহীন, জানালাগুলো খোলা, হাহা। উদোম রাস্তাও বাইরে থেকে হাঁ ক’রে দেয়ালে টাঙানো ফ্রেমের এমব্রয়ডারি দেখতে থাকে।

সেই একদিনই, কিন্তু তবু সে তো তন্নতন্ন ক’রে ঘেঁটে দেখেছিলো সবকিছু। এখন গা শিরশির করে ভাবতে গিয়ে। যাকে আমরা দেহ বলি, শরীর বলি, রাজভোগ বলি, দ্রাক্ষাকুঞ্জ বলি, ঘোড়ার ছাই বলি, আসলে তা নিছক প্রয়োজনের জিনিশ, খোকা ভেবে দেখেছে প্রয়োজন ব্যতিরেকে এক কানাকড়িও তার মূল্য নেই, তার কাছে নেই। ভাতের মাড় গালা মালসা, ঘরমোছা ন্যাতাকানির তাল, কিংবা জঞ্জাল ফেলার আঁস্তাকুড়, শরীর কি এর অতিরিক্ত কিছু; ডোম-চাড়াল কাওরা-মুচি থেকে শুরু ক’রে কুষ্ঠরোগীরও প্রয়োজনের বস্তু এই শরীর!

হাওয়ায় রঞ্জুর এলোমেলো চুল উড়তে থাকে। ঘাড় মুখ সুড়সুড় করে খোকার। দু’পাশের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোকে তার নীলাভাবী মনে হয়, সেগুন নীলাভাবী, অশথ নীলাভাবী, পিপুল নীলাভাবী, কৃষ্ণচূড়া নীলাভাবী, সুঠাম পতিতাশ্রেণী, দেহ বিক্রয় করবে এরা সবাই।

মনে মনে দর কষাকষি করতে থাকে খোকা।

‘পিপুল নীলাভাবী, তুমি কতো নাও?’

‘তোমার উদ্যম।’

‘কৃষ্ণচূড়া নীলাভাবী, তোমার কতো?’

‘তোমার রত্নরাজি”

‘অশথ, তুমি?’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024