মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-৯৭)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘তোমার সৃজনশীলতা, তোমার আনন্দ, তোমার স্বপ্ন, তোমার গৌরব, এইটুকুই। আর আমার বখশিশ, তোমার ভীষণ চোখ–‘

বিতৃষ্ণা কুপোকাত ক’রে ফেলে খোকাকে। মনে হ’তে থাকে জীবনে আর কোনোদিন সোজা হ’য়ে দাঁড়াতে পারবে না, তার মেরুদণ্ডের হাড় চুরচুর হ’য়ে গিয়েছে, ছিঁড়ে জট পাকিয়ে গিয়েছে স্নায়ুতন্ত্রী; মাথার ভিতরে বেআইনী কারখানা ফেঁদেছে শয়তান, বকযন্ত্রে কেলাসিত হচ্ছে পুঁজরক্তের এক ভীষণ আরক, রাসায়নিক গন্ধে তার নাড়ি ঠেলে আসে।

তবে কি নীলাভাবীর সন্তানের প্রয়োজন তার কাছে? কেন তাকে এভাবে টানছে? সন্তানের পিপাসায় এমন টালমাটাল বল্লাহীন হ’তে পারে মেয়েরা? বরং একটা যুক্তি হিসেবে ধ’রে নিলে অনেক অসঙ্গতির জট খুলে যায় এতে। নীলাভাবী যদি তাকে সন্তান উৎপাদনের নির্ভরযোগ্য যন্ত্র ব’লে ধ’রে নিয়ে থাকে, তাহলে সে ভুল করেছে। খোকার মনে পড়ে একজোড়া বিবশ অর্ধনিমীলিত চোখের ছবি, যার ভাষা কোনো অক্ষরে সে পড়েনি এ-যাবৎ, একটি হাতের বেষ্টন কিভাবে ঠোঁটের নরোম উষ্ণতায় টেনে নিয়েছিলো, ছোবল মেরেছিলো, বিষ ঢেলেছিলো, এইসব; প্রতিটি নিঃশ্বাস ছিলো তন্ত্রসিদ্ধ, আগ্নেয়। গড়ান খেয়ে খেয়ে সে ভৈরবীচক্রের মাঝখানে গিয়ে পড়েছিলো, কামকুণ্ডের তপ্ত কটাহে নাড়িভুড়ি বিছা আর শিয়ালের রক্তের সঙ্গে সমানে টগবগ ক’রে ফুটেছিলো।

নিজেকে উপপতির সিংহাসনে উপবিষ্ট দেখে ঘৃণায় কুঞ্চিত হয় খোকা। ঠিক উপপতিও নয়। সে মনে করে এই বিশেষ্যে কাছাকোঁচা আছে, জুড়িগাড়ি আর বাগানবাড়ি আছে, আতরের গন্ধ খুনখারাবি আর হীরার নেকলেস আছে। বরং একটা টাইমের বাবু, মাকড়া।

‘কি অতো ভাবছিস?’ জিগ্যেশ করে রঞ্জু।

‘কি করবো তাই ভাবছি।’

‘বাপি না ফেরা পর্যন্ত কোথাও নড়তে পারবো না আমরা, খামোকাই তুই ভাবছিস।’

‘ঠিকই বলেছিস।’ একটু থেমে থোকা জিগ্যেশ করলে, ‘কেমন লাগলো তোর এদের সবাইকে?’

‘ভালোই তো-

‘তার মানে তোর পছন্দ হয়নি!’

‘পছন্দ-অপছন্দের কি আছে, আমি তো আর তোর জন্যে কনে দেখতে যাইনি। ওরা তো ভালোই, মিশুক–

‘তবু ভালো, তোকে নিয়ে আমি কিন্তু বেশ চিন্তায় ছিলাম। আমি নিজেও ভেবে পাই না ওদের সঙ্গে আমার এতো খাতির কিভাবে হ’লো, এমন সাদামাঠা একটা ফ্যামিলি!’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024