মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-১০১)

  • Update Time : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘যা বললাম চিন্তা ক’রে দেখিস। গোয়ার্তুমি রেখে মনস্থির ক’রে ফ্যাল!’

উভয়ে বেরিয়ে যায়।

এতোদিন পর বাড়ি ছাড়ার সমস্যা নিয়ে সত্যিই মাথা ঘামানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে খোকা। বাপির পিন্ডি থেকে না ফেরা অবধি যে ক’রেই হোক অপেক্ষা করতে হবে। তারিখ পার হ’য়ে গিয়েছে কয়েকদিন আগেই, কোনো চিঠিপত্রও আসেনি এর মধ্যে, অস্বাভাবিকতা নেই তো এই নীরবতায়! বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক রঞ্জ, তার নিজেরও উৎসাহ নেই তিলবিন্দু, কিন্তু একথাও সত্যি, যে হারে শহরের মানুষজন গ্রামের দিকে ছুটছে তাতে শেষ পর্যন্ত মনের দৃঢ়তা চিড় খেয়ে যাবে ব’লেই তার বিশ্বাস। মুরাদের মতো মানুষজন স্রেফ বানোয়াট পরিস্থিতির গালগপ্পো ফেঁদে ধীরে ধীরে উন্মত্ততার দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে, এসবও অল্পবিস্তর সত্যি। বাংলা নিয়ে পাশ ক’রে একেবারে গাম্বুতে প’ড়ে গিয়েছে বেচারা, ছেঁড়া চটিজুতোর মতো অবহেলাভরে একপাশে প’ড়ে আছে। বাঙালিদের অধিকার, মানে মুরাদের চাকরি; বাংলা নিয়ে পাশ করার দল হাতে মোয়া পাবে। দশজোড়া ক’রে গোঁপ গজাবে ওদের। মুরাদের উৎসাহের মূল কারণ এইসব, খোকা জানে।

রঞ্জুর ভালোমন্দ নিয়ে মাথাব্যথার আর শেষ নেই মুরাদের। কি বোঝাতে চায় মুরাদ। ইয়াসিনের সামনে এমনভাবে রঞ্জুর কথা পেড়েছিলো যেন কতোদিনের সম্পর্ক ওর রঞ্জুর সঙ্গে। রঞ্জুর ব্যাপারে এই প্রবল উৎসাহের পিছনে যুক্তিটা কি, খোকার তা বোধগম্য নয়। সহ্যের সীমা পার ক’রে দিচ্ছে মুরাদ, ওকি শেষ দেখতে চায়? এ এক ধরনের শত্রুতা। ভিতরে ভিতরে একটা কিছু পাকাচ্ছে কি না তা-ই বা কে বলবে, নির্লজ্জ বেহায়া, মতলব কি ওর! রঞ্জুর ভালোমন্দ নিয়ে আকাশ ভেঙে পড়ছে ওর মাথায়। কে ওকে অধিকার দিয়েছে? পাত্তা না পেয়ে ভিন্ন পথে হিশেষ ক’রে এগোতে চায় মুরাদ। মরিয়া হয়ে উঠছে জানোয়ারটা; ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে খোকার মাথা। সে দিশেহারা হ’য়ে পড়ে একসময়।

খোকা পায় পায় রঞ্জুর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। নখ কাটতে বসেছিলো রহ।

‘আমার কাছে দে–‘ নেলকাটার নিয়ে নেয় খোকা, ‘পা বাড়িয়ে দে দেখি এদিকে।’

কুটকুট ক’রে রঞ্জুর পায়ের নখ কাটতে থাকে খোকা। রঞ্জুর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। রুপোর তোড়া পায়ে ঘরময় ঝুমঝুম ক’রে ছুটে বেড়াতো রঞ্জু, শখ ক’রে মা পরিয়েছিলো। কি ছিচকাঁদুনেই না ছিলো সে সময়। তাকানো যেতো না ওর দিকে; সবসময় দ্যাখো ঠোঁট ফুলিয়ে আছে, ছলছল করছে চোখজোড়া; যেন কতো না ওর দুঃখ, দুনিয়ার সবাই বিরাট এক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে ওর কাঁধে।

নখ কাটতে কাটতে ওর পায়ে ছোট্ট একটা চাপ দিলো খোকা, বললে, ‘এই বাঁদরী, ছোটোবেলায় টম্যাটো বললে ভ্যাঁ ক’রে কেঁদে ভাসাতিস কেন রে?’

‘বললেই হ’লো!’

‘তোর বোধহয় মনে নেই।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024