শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-১০৩)

  • Update Time : সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

খুব সাবধানে নখের ধার মারতে থাকে খোকা ফাইলিং ক’রে। খোকার মনে হয় এইতো সেই রঞ্জু, এ আমার কতো চেনা, রুপোর তোড়াপরা ঝুমঝুমি বাজানো ছোট্টবেলার সেই রঞ্জু, মুরাদ একে চেনে না, কাব্যচর্চার ঘোড়ারোগ দিন দিন বানোয়াট ক’রে তুলেছে তাকে। রঞ্জুর স্নিগ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে খোকা স্বস্তি পায়, সুস্থ হয়; এমন স্নিগ্ধ এমন নির্মল এমন নিষ্কলঙ্ক হ’তে পারে কেবল করুণাধারা।

খোকা ঠিক করেছে দুর্যোগ নিয়ে সে আর মাথা ঘামাবে না। সে দেখেছে এতে তার ভিতরের অশান্তি দ্বিগুণতর বাড়ে। জনসভা আর মিছিল ক’রে লঙ্কাকাও বাধাবার জন্যে কোমর বেঁধে উঠে প’ড়ে লেগে গিয়েছে মানুষজন। কাঁধে রাইফেলের কেঠো ডামি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় কুচকাওয়াজ ক’রে বেড়াচ্ছে উৎসাহী ছাত্রদল। সেনাবাহিনীর লোকজন ঘোমটার আড়ালে মুখ লুকিয়েছে। ন্যাবলা-গোবলা বাঙালি সেপাই- সান্ত্রীরা চোখেমুখে ‘ভাই ভাই’ ভাব নিয়ে প্রাণের আনন্দে টাকে টাকে ঘুরে নামকে ওয়াস্তে পাহারাদারি ক’রে বেড়াচ্ছে; হাবভাব দেখলে মনে হয় হাতে কলকে এসে গিয়েছে, এখন কেবল গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ানো। বিকেলে আউটার স্টেডিয়ামে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করলো খোকা। দেখা হ’লো রহমান আর নুরুদ্দিনের সঙ্গে। রহমান উচ্ছ্বসিত হ’য়ে বললে, ‘খেলা জ’মে গেছে, এবার শালারা বোম ফেলাট হ’য়ে যাবে–

ময়দানে এখানে-ওখানে জটলা। কোনো একজন বক্তা বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে চিৎকার ক’রে বলছে, ‘ভাইসব, সময় নষ্ট করবেন না, আপনারা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুন, আজ আপনাদের সম্মুখে কেবলমাত্র একটি পথই খোলা, সশস্ত্র সংগ্রামের পথ। কালবিলম্ব না ক’রে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে আপনাদের, আঘাত হানতে হবে শত্রুকে। এতোদিন যে বিপ্লবকে মনে হয়েছিলো পর্বতের মতো ভারী, আজ তা পালকের চেয়েও হালকা, মুক্তির একমাত্র পথই হ’লো সশস্ত্র বিপ্লব, এই পথই বেছে নিতে হবে আপনাদের–‘

‘লে ধড়ফড়াকে!’ জনসভার বাইরে বাঙ দিয়ে উঠলো একজন।

স্টেডিয়াম গেটের পাশে টিকিট ঘরের ছাদে আসন গেড়ে ব’সে ফুকফুক ক’রে সিগ্রেট ফুঁকছিলো ছাত্রনেতারা। ময়দানের মানুষজন হুড়মুড় ক’রে ছুটে এসে জমায়েত হ’লো সেখানে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024