মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন

সাপ নিয়ে কিছু প্রবাদ ও কুসংস্কার (অন্তিম পর্ব)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২.৪৬ পিএম

শিবলী আহম্মেদ সুজন

 সাপের গুপ্তধন পাহারা

 কেবল জনশ্রুতি বা কিংবদন্তিতেই নয়, অনেক জনপ্রিয় গল্প-উপন্যাসেও সাপ গুপ্তধন পাহারা দেয়-এমন কথা লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। সাপ স্বর্ণ বা রৌপ্যমুদ্রা, মণিমুক্তা বা ধনরত্ন চেনে-এই ধারণা একেবারে অলীক ও ভ্রান্ত। এই রকম ধারণার মূলে আছে অতীতের কিছু ঘটনাক্রম।

যেমন, কোনো কোনো আমলে স্বর্ণ, রৌপ্য ও মুদ্রাভর্তি হাঁড়ি বা কলস সাধারণত মাটির নিচে গর্ত করে রাখা হতো এবং একান্ত গোপনীয় ব্যাপার ছিল সেটা। অন্যদিকে, বেশির ভাগ সাপই (কিছুসংখ্যক প্রাচীন ধরনের সাপ ছাড়া) নিজের থেকে গর্ত খোঁড়ে না।

অন্যের গর্তে বসবাস করে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। মাটির নিচের গর্তের যেখানটায় ধন-দৌলতত্তরে হাঁড়ি বা অন্য কোনো পাত্র রাখা হয়, এর আশপাশের জায়গা সাপের বসবাসের জন্য খুবই উপযুক্ত। এমনটি হওয়ার আরেকটি কারণও রয়েছে।

ধনরত্ন গচ্ছিত রাখার ওই সব গর্ত সাধারণত খুবই সুরক্ষিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া ওই সব গর্ত আপাত-পরিত্যক্ত বলে সেখানে সাপের প্রিয় খাদ্য ইঁদুর ও ব্যাঙের যাতায়াতও স্বাভাবিক।

সোজা কথায়, গুপ্তধনের গর্তে সাপ থাকার ব্যাপারটি এদের গোপনীয়তা ও বসবাসের সুবিধার কারণেই হয়ে থাকে। ধন- দৌলত পাহারা দেওয়ার কারণে নয়।

সাপ প্রতিশোধপরায়ণ : এমন কথা শোনা যায় যে সাপের প্রতিহিংসা জ্ঞান অত্যন্ত প্রবল। সাপ কারও দ্বারা একবার আক্রান্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে সে শত্রুকে চিনে রাখে এবং রাতের বেলা বা অসাবধান মুহূর্তে আঘাতকারী ব্যক্তিকে ছোবল মেরে এর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে কিংবা প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

কিন্তু সাপকে ঘিরে এও একটি অসম্ভব কল্পগল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, যত দূর জানা যায়, প্রতিহিংসা জিইয়ে রাখার মতো মগজের আকার বা গঠন সাপের থাকার কথা নয়। এসব কিছু করলে করতে পারে কেবল উন্নততর মেরুদণ্ডী প্রাণীই।

এ ছাড়া সাপের বংশগতিধারার বিবর্তনভিত্তিক অর্জিত স্বভাব-চরিত্রের মানচিত্রেও এ ধরনের কোনো বৈশিষ্ট্যের কথা কেউ উল্লেখ করেনি। কেবল উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনো কোনো সাপ প্রজাতি ডিম ও বাচ্চাদের যত্ন নিয়ে থাকে। এমন আচরণ নিম্নশ্রেণীর অমেরুদণ্ডী প্রাণী, এমনকি কোনো কোনো কীটপতঙ্গের জাতের মধ্যেও লক্ষ করা যায়।

সব বন্য পশু-পক্ষীর জন্যই লোকালয় ও মানুষ একটা ভয়ানক ভয়ের জায়গা। ফলে স্বভাবতই কোনো একটি সাপ একবার আঘাত পেয়ে পালিয়ে যেতে পারলে সে আর সহজে লোকালয়মুখো হবে না, এটাই স্বাভাবিক।

তবে এমনটা হয়তো একেবারে অসম্ভব নয় যে, দিনের বেলা কেউ একটা সাপ মারতে গিয়ে বিফল হলো এবং রাতের বেলা সে জাতেরই একটা সাপ ঘটনাচক্রে সেই ব্যক্তিকে কামড়াল। এখন সহজ প্রশ্ন হতে পারে, এটা যে সেই দিনের বেলার একই সাপ, এর প্রমাণ কী? সেটা প্রমাণ করা রীতিমতো দুঃসাধ্য ব্যাপার। সম্ভবত দুটো সাপই আলাদা। একই সাপ নয়। এ রকম ভাবাটাই বোধ হয় যুক্তিসংগত।

প্রখ্যাত লেখক রেজাউর রহমানএর বইয়ের সহায়তায় এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

সাপ নিয়ে কিছু প্রবাদ ও কুসংস্কার (পর্ব-৭)

সাপ নিয়ে কিছু প্রবাদ ও কুসংস্কার (পর্ব-৭)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024