মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫)

  • Update Time : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪.০৫ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

দ্বিতীয় অধ্যায়

মাতলা রেল লাইন করার প্রয়োজনে পিয়ালী নদীতে বাঁধ দেওয়া হল এবং মজা খাতে পরিণত হবার ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগণার এক বিশাল এলাকার জলনিকাশী সমস্যা দেখা দিল। পরবর্তীকালে মগরাহাট ড্রেনেজ স্কীম করেও মগরাহাট বারুইপুর, জয়নগর এর বিস্তীর্ণ এলাকার জলনিকাশী সমস্যার পূর্ণ সমাধান হল না। ২৪ পরগণার অন্যতম প্রধান নদী আদিগঙ্গা মজে যাওয়ার ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগণার এক বিস্তীর্ণ এলাকার জলনিকাশী সমস্যা ব্রিটিশ রাজত্বের শুরুতে লক্ষ করা গিয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ডায়মন্ডহারবারে প্রধান সুইজ গেট করে খালের সাহায্যে ২১৫ স্কোয়ার মাইল এলাকার জল নিষ্কাশনের জন্য এক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হল।(*) বরিশাল খুলনার উল্লেখযোগ্য নদী বালেশ্বর উত্তরাংশে মধুমতী নামে পরিচিত।

গঙ্গার জলের এক বড় অংশ মধুমতী বালেশ্বর দিয়ে সাগরে পৌঁছায়। উত্তরের জলের চাপে সমুদ্রের জোয়ার দেশের অভ্যন্তরে বেশিদূর এগুতে পারে না বলেই এখানে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলিতে বছরের একটা বড় অংশ মিষ্টি জল পাওয়া যায় এবং নদী তীরে বাঁধ দেওয়ার দরকার হয় না। সুন্দরবনের পশ্চিমাংশের তুলনায় পূর্বাংশের ভূমি উঁচু হওয়ায় মাতলা তীরবর্তী এলাকাতে বাঁধ ১৫/২০ ফুট উঁচু না করলে জোয়ারের জল জমিতে ঢুকতে পারে কিন্তু মধুমতী বালেশ্বর শিবসা পশর আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে ভূমি গঠনের কাজ পূর্ণ হবার জন্য নদীতীরবর্তী বাঁধ ৪/৫ ফুট দিলেও জোয়ারের জল দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না।

বরিশাল বাখরগঞ্জের অসংখ্য নদী জেলাটিকে উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে। তার মধ্যে প্রধান জলধারা ৭টি নদীর মধ্য দিয়ে সমুদ্রের সাঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তার্কী, আড়িয়াল খাঁ, সফিপুর, নয়াবাঘিনী এগুলি জেলার উত্তর-পূর্ব অংশে প্রবাহিত আর দক্ষিণের প্রধান নদী বিশকালী, বিঘই, লোহাদিয়া। উত্তরের এই চারটি নদী পদ্মা, ব্রহ্মপুত্রের জলধারায় পুষ্ট মেঘনার বিশাল জলপ্রবাহ আড়িয়াল খাঁর মধ্যে দিয়ে ফরিদপুর জেলায় প্রবেশ করেছে- পরবর্তীকালে পশ্চিমে তার্কী নদী ও পূর্বে আড়িয়াল খাঁ নামে বাখরগঞ্জে প্রবেশ করেছে। নয়াবাঘিনীকে অনেকে পরবর্তীকালের প্রবাহ হিসাবে চিহ্নিত করেন। ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে তিস্তার ভয়ঙ্কর বন্যা নয়াবাঘিনী নদীর সৃষ্টি করেছে।

সমুদ্রের সাঙ্গে মিশবার জন্য নদীগুলি যতই সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে ততই তার প্রন্থ বেড়ে গেছে। লোহাদিয়া, বিঘই, বিশকালী-প্রতিটি নদী ১ মাইলের ওপর চওড়া আর এ সব বড় বড় নদীকে জড়িয়ে শিরা-উপশিরার মতো অসংখ্য ছোট ছোট নদী। আরও অসংখ্য ছোট ছোট নদী ছিল অতীতে তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না। গৌরনদী স্বরূপকাটা ভাঙ্গারিয়া ঝালকাটি গলাচিপা পটুয়াখালি থানার মধ্যে অসংখ্য বিল বা বড় জলাভূমি স্মরণ করিয়ে দেয়-এসব এলাকার ওপর অনেকনদী প্রবাহিত ছিল। কিন্তু তা হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে ভৈরব যা যশোর-খুলনার গৌরব ছিল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024