শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৭)

  • Update Time : সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪.০৫ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

দ্বিতীয় অধ্যায়

এক অখণ্ডজলবিভাজিকা হিসাবে সর্বাঙ্গীন পরিকল্পনার মাধ্যমে সুফল পাওয়া যেতে পারে এ সত্য ব্রিটিশ রাজত্বে শাসকরা ভুলে গিয়েছিলেন। তার পরিণতিতে এই এলাকার অতীতের অসংখ্য স্মরণীয় জলপ্রবাহের করুণ মৃত্যুঘণ্টা আমরা শুনতে পেলাম। আমাদের সামনে অতীতের সকরুণ স্মৃতি হিসাবে বেঁচে রইল বিদ্যাধরী, পিয়ালী, মাতলা, যমুনা, ভৈরব, কপোতাক্ষ, ২৪ পরগণার পদ্মা প্রবাহ এবং আরও অনেক খ্যাত অখ্যাত নদী। মিশরের নীলনদ পরিকল্পনার সফল রূপকার বিখ্যাত নদীবিজ্ঞানী উইলিয়াম উইলককস গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ এর নদীগুলির বিকৃতি লক্ষ করে ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে এক পরিকল্পনা পেশ করেন।

মধ্য বাংলার অন্যতম প্রধান নদী জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা, ভাগীরথী ধীরে যীরে উপরের অংশে জলের চাপ কমে যাবার জন্য এ সব নদীর নীচের দিকে জলের অভাবে মজে যাচ্ছিল এবং জনবসতিতে ব্যাপক ম্যালেরিয়ার প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছিল। উইলককন তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ করলেন-তাঁর মতে হারানো এই সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা সম্ভব মাথাভাঙার ওপরের অংশে জল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। এজন্য বড়াল নদীর উৎসের ১১ মাইল নীচে মঙ্গলা বাঁধ দেবার প্রস্তাব দিলেন মিশরের আসোয়ান বাঁধের মতো এবং এর ফলে গঙ্গ এর ১০০ মাইল পর্যন্ত জল ৭ ফুটের মতো বেড়ে যাবে এবং এই জল মধ্য বাংলার এসব নদী দিয়ে প্রবাহিত করে দিলে মৃত নদীগুলি আবার প্রাণ ফিরে পাবে।

জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গার ও জল দিয়ে জমিতে সেচের কাজ চলবে-অসংখ্য শাখানদীর সাহায্যে বিস্তীর্ণ এলাকার নৌপরিবহণ, জল নিষ্কাশন জলসেচের ব্যবস্থা করা যাবে-গরাই নদীর জলে ফরিদপুর জেলার সেচের ব্যবস্থা করা যাবে এবং সর্বোপরি হুগলী নদীতে সারা বছর ধরে জলের চাপ সমান ভাবে থাকবে এবং কলিকাতা বন্দরের অবনতি রোধ করা যাবে। এ ব্যাপারে ১৮ কোটি টাকার এক পরিকল্পনা সরকারের কাছে জমা দেওয়া হল। গঙ্গা-পদ্মার মিলিত ধারা মাঝে মাঝে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে এবং তার পরিণতিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলপ্লাবিত হয়।

১৯৩১ এর বন্যায় পূর্ব বাংলার খুলনা বরিশাল ঢাকা ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় যে ব্যাপক শস্যহানি ঘটায় এর পরিমাণ ৮/১০ কোটি টাকার। উইলককসের পরিকল্পনা কার্যকরী করা গেল না টাকার অভাবে এবং সেই সঙ্গে সরকারের সদিচ্ছার প্রশ্নটা অবশ্যই ছিল। ব্রিটিশরাজত্বের শুরুতে সুন্দরবনের বিশাল এলাকা জনবসতিশূন্য থাকলেও অসংখ্য নদী নালা ব্যবহার করা হত আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য পথ হিসাবে। অবশ্য জলদস্যুভীতি তখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ১৮৩০-৩৫ খৃীষ্টাব্দেও এদের উৎপাত-এর কথা জানা যায়- সুন্দরবনের সমুদ্রতীরবর্তী নদীগুলিতে এদের দাপট লক্ষ করা যাচ্ছে। পরবর্তী কালে বঙ্কিমচন্দ্র খুলনায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন নদীপথে ডাকাতি দমন করতে পেরেছিলেন। বণিকরা বরিশালের নদীপথে ডাকাতির ব্যাপারে মগজলদস্যুদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে অভিযোগ করেছেন তা আমরা সেকালের সংবাদপত্রে লক্ষ করছি।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024