উত্তর চীনের বাওতোউ শহরের কাছে একটি লৌহ আকরিক খনি থেকেই আজকের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের বিরল খনিজ আধিপত্যের সূচনা। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক বিনিয়োগ, গবেষণা ও রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার ফলেই বিরল খনিজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে চীন বিশ্বকে ছাড়িয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি, বায়ু বিদ্যুৎ, আধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে এই খনিজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
নেতৃত্বের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টি
উনিশ শতকের ষাটের দশকে বাওতোউ অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম বিরল খনিজ ভাণ্ডার আবিষ্কারের পর থেকেই বিষয়টি গুরুত্ব পায়। সে সময় চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব শিল্পায়নের পাশাপাশি বিরল খনিজ উন্নয়নের ওপর জোর দেয়। পরবর্তী দশকগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কেন্দ্রে রাখা হয়। এর ফলেই ছোট ছোট ছড়িয়ে থাকা খনিকে একীভূত করে রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
সামরিক গবেষণা থেকে শিল্পে রূপান্তর
সত্তরের দশকে সামরিক গবেষণার অংশ হিসেবে বিরল খনিজ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়। সেই সময়ে নতুন প্রক্রিয়ায় খনিজ পরিশোধনের পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ায় উৎপাদন খরচ নাটকীয়ভাবে কমে যায়। এর ফলে চীন দ্রুত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে বিরল খনিজ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।
বিশ্ববাজারে প্রভাব ও কৌশলগত শক্তি
আশির দশকের শেষভাগে চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিরল খনিজ উৎপাদক হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে শক্তিশালী চুম্বক উৎপাদনের প্রযুক্তি আয়ত্তে এনে বৈদ্যুতিক মোটর, স্মার্টফোন ও আধুনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়। আজ বিশ্বে ব্যবহৃত বিরল খনিজ ও চুম্বকের প্রায় নব্বই শতাংশ চীনের নিয়ন্ত্রণে, যা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে দেশটিকে বিশাল প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত করেছে।
বাণিজ্য ও ভূরাজনীতির হাতিয়ার
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে চীন দেখিয়েছে যে বিরল খনিজ কেবল শিল্প সম্পদ নয়, এটি কৌশলগত অস্ত্রও। নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলে সরবরাহ সীমিত করে বাণিজ্য আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক ভূ অর্থনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
শিক্ষা ও গবেষণায় বিনিয়োগ
চীন বর্তমানে বিরল খনিজ গবেষণায় সবচেয়ে বেশি প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী তৈরি করছে। বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে বিশেষায়িত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিপরীতে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই খাতে দীর্ঘদিন বিনিয়োগের ঘাটতি স্পষ্ট। ফলে প্রযুক্তিগত ব্যবধান আরও বেড়েছে।
ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি
নিজেদের প্রযুক্তিগত সুবিধা রক্ষায় চীন এখন প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্রপাতি রপ্তানি সীমিত করছে এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বিদেশে যাওয়ার বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এর মাধ্যমে বিরল খনিজ খাতে নিজেদের আধিপত্য দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখার বার্তা স্পষ্ট।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 








