গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাঙামাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু হয়েছে। রোববার ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই দুই দিনব্যাপী উৎসব চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, আমন্ত্রিত অতিথি, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শুভানুধ্যায়ীসহ প্রায় এক হাজার মানুষ এই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নানা আয়োজন
২৮ ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধন। বিদ্যালয়ের স্কাউট দল ব্যান্ড বাজিয়ে অতিথিদের মঞ্চে নিয়ে আসে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাস গোমেজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফাদার আলবিন গোমেজ, প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার মেরি স্কলাস্টিকা পালমা, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লুইস অ্যানিল কস্তা, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কামরুল ইসলামসহ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষকরা।
ধর্মীয় পাঠ ও জাতীয় প্রতীক উন্মোচন
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাইবেল, কোরআন ও গীতাপাঠ করা হয়। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিদ্যালয়ের সম্মুখভাগে স্থাপিত বিশেষ লোগো উন্মোচন করা হয়।

পঞ্চাশ বছরের পথচলার কথা
স্বাগত বক্তব্যে প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার মেরি স্কলাস্টিকা পালমা গত পঞ্চাশ বছরে বিদ্যালয়টিকে টিকিয়ে রাখা ও এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এই বিদ্যালয় এলাকাবাসীর উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে এবং তাদের সহায়তায় আজও পরিচালিত হচ্ছে। সুবর্ণজয়ন্তী বিদ্যালয়ের জন্য একটি গর্বের মাইলফলক।
বিদ্যালয়ের প্রথম পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুইস অ্যানিল কস্তা স্মৃতিচারণ করে বলেন, রাঙামাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস মূলত সংগ্রামের ইতিহাস। একসময় এই এলাকা ছিল অবহেলিত ও শিক্ষাবঞ্চিত। একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়োজন থাকলেও কেউ উদ্যোগ নিতে সাহস পাননি। সেই বাস্তবতা থেকেই বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে।
প্রধান অতিথির বক্তব্য ও স্মরণানুষ্ঠান
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাস গোমেজ সুবর্ণজয়ন্তীতে পৌঁছানোর জন্য বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। এ সময় বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্মরণানুষ্ঠানে অংশ নেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি
প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে। ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে রয়েছে ধর্মীয় উপাসনা, বর্ণাঢ্য জয়ন্তী শোভাযাত্রা, কেক কাটা, বিদ্যালয়ের ইতিহাস ও অবদান নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, জয়ন্তী স্মারক প্রকাশ, স্মরণানুষ্ঠান, সম্মাননা প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লটারির ড্র।
বিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
রাঙামাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়। ১৯৯৪ সালে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন পাওয়ার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ বিদ্যালয়ের নামেই প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। এ পর্যন্ত এই বিদ্যালয় থেকে তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভ করেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















