জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ সুরক্ষা আর মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অদৃশ্য প্রভাবকে সহজ ভাষায় তুলে ধরার যে কণ্ঠটি পাঠকের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, সেই কণ্ঠটি থেমে গেল। খ্যাতিমান সাংবাদিক তাতিয়ানা শ্লসবার্গ আর নেই। বিরল ধরনের রক্ত ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিরিশের কোঠায় জীবনাবসান হয়েছে তাঁর। পরিবার সামাজিক মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ।
জলবায়ু পরিবর্তনের গল্প যেভাবে মানুষের মুখ পেয়েছিল
পরিবেশ সাংবাদিক হিসেবে তাতিয়ানা শ্লসবার্গ সব সময় চেষ্টা করেছেন বড় নীতিগত বিতর্ককে মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে জুড়ে দিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝাতে তিনি কখনো ক্র্যানবেরির জলাভূমিতে নেমেছেন, কখনো উষ্ণতার কারণে হুমকির মুখে পড়া তুষারভিত্তিক খেলাধুলার ভেতরে নিজেকে যুক্ত করেছেন। প্রকৃতি আর মানুষের সম্পর্ককে অনুভব করেই তিনি কলম ধরতেন।
শিক্ষা, সাংবাদিকতা আর নিরলস অনুসন্ধান
ইয়েল ও অক্সফোর্ডে ইতিহাস পড়ার পর তাঁর সাংবাদিকতা শুরু হয় স্থানীয় সংবাদপত্রে। পরে যুক্ত হন প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিকে। সহকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন নীরব পরিশ্রমী, কৌতূহলী এবং অহংকার হীন একজন রিপোর্টার হিসেবে। পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিবেদনে তথ্য যাচাইয়ে তাঁর কঠোরতা ছিল আলাদা করে উল্লেখযোগ্য।

বই, চিন্তা আর সচেতনতার আহ্বান
সংবাদ প্রতিবেদনের বাইরে তিনি লিখেছেন পরিবেশ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বই, যেখানে দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ অভ্যাসের লুকানো পরিবেশগত খরচ তুলে ধরা হয়। পাঠকদের আতঙ্কিত না করে সচেতন ও ক্ষমতাবান করে তোলাই ছিল তাঁর লেখার মূল লক্ষ্য।
অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই আর ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তি
গত বছরের শেষ দিকে একটি প্রবন্ধে নিজের ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার কথা প্রকাশ করেন তাতিয়ানা। সেখানে জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব, পরিবার, মাতৃত্ব আর চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে তাঁর খোলামেলা অনুভূতি পাঠকদের নাড়া দেয়। চিকিৎসা গবেষণা ও জনস্বাস্থ্য নীতির গুরুত্ব নিয়েও তিনি স্পষ্ট অবস্থান নেন, যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।
পরিবার, উত্তরাধিকার আর স্মৃতি
এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়েও তিনি নিজের পরিচয় গড়েছেন লেখক ও পরিবেশ ভাবুক হিসেবে। স্বামী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন তিনি। অসুস্থতার মধ্যেও নিজের পেশাকে তিনি গর্বের সঙ্গে ধরে রেখেছিলেন, যেন ভবিষ্যতে সন্তানরা জানে তিনি শুধু একজন রোগী নন, একজন লেখক ও পৃথিবীর গল্পকার ছিলেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















