যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু ও জ্বালানি নীতিতে বড় ধরনের মোড় নিয়েছেন। পরিবেশ সুরক্ষার বহু বিধিনিষেধ শিথিল বা বাতিল করা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানিকে দেওয়া হয়েছে অগ্রাধিকার, আর নবায়নযোগ্য শক্তির গতি পড়েছে ধাক্কায়। এই পরিবর্তনের প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু কূটনীতিতেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে
পরিবেশ সুরক্ষায় বিধিনিষেধ শিথিল
গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে থাকা একাধিক নিয়ম শিথিল বা বাতিল করেছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারদ নির্গমন কমানোর নিয়ম প্রত্যাহার করা হয়েছে। জলাভূমি ও খালবিলের ওপর ফেডারেল সুরক্ষা তুলে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ফলে লাখ লাখ একর এলাকা ঝুঁকিতে পড়ছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রিনহাউস গ্যাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর—এই বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকারের আইনগত ভিত্তিকেই দুর্বল করছে।
জ্বালানি নীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানির উত্থান
ক্ষমতায় ফেরার প্রথম দিন থেকেই ট্রাম্প তেল, গ্যাস ও কয়লার উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দেন। বিশাল ফেডারেল জমি ও জলভাগ তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পুরোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের পরিকল্পনা থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদনের গতি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে সৌর ও বায়ুশক্তির ভর্তুকি বাতিল হওয়ায় বহু প্রকল্প থমকে গেছে। এর ফলে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমে গিয়ে কয়েকশ কোটি ডলারের পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নিয়ে বিতর্ক
প্রশাসন কম জ্বালানি মূল্যের দাবি করলেও বাস্তবে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। গত বছরে বিদ্যুতের দাম মূল্যস্ফীতির চেয়েও দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নবায়নযোগ্য শক্তির পথ রুদ্ধ হলে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়তে পারে। তবু প্রশাসনের দাবি, তেল ও গ্যাসের প্রাচুর্য দীর্ঘমেয়াদে বাজারকে স্থিতিশীল রাখবে।
জলবায়ু বিজ্ঞান ও গবেষণায় কাটছাঁট
জলবায়ু পরিবর্তন যখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে, তখন গবেষণায় বরাদ্দ কমানো হয়েছে। পরিবেশ সংস্থার গবেষণা শাখা বন্ধ, জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইট থেকে সরানো এবং গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মূল্যায়ন প্রতিবেদন দুর্বল করা হয়েছে। এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সংশয়ী মতের গবেষকদের দিয়ে নতুন মূল্যায়ন করানো হচ্ছে, যা বিজ্ঞানীদের বড় অংশের সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক জলবায়ু কূটনীতিতে চাপ
যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে বাণিজ্য ও কূটনীতির মাধ্যমে অন্য দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি কিনতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। নৌপরিবহনের দূষণ কমানোর আন্তর্জাতিক চুক্তিও যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আটকে গেছে। এতে বৈশ্বিক জলবায়ু উদ্যোগে বড় ধাক্কা লেগেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় শঙ্কা
বন্যা ও দাবানলের মতো দুর্যোগে সাড়া দেওয়ার সংস্থায় জনবল কমানো হয়েছে। ব্যয় অনুমোদনের জটিলতায় সহায়তা পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শূন্যতা ভবিষ্যতে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে, কারণ দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতিতে কার্যত বিরতি পড়ে গেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















