১০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

ঢাকা-৮ আসনে গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি: স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন চাঞ্চল্য

ভোটের তফসিল ঘোষণার মাত্র একদিন পর ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনা দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

অতীত থেকে আলোচনায় ওসমান হাদি

জুলাই আন্দোলন এবং ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ’ আন্দোলনের সময় থেকে ওসমান হাদি ছিলেন একটি পরিচিত মুখ। তাঁর তীব্র ভাষার বক্তব্য, স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান এবং সাংগঠনিক ভূমিকার কারণে তিনি দ্রুত আলোচনায় উঠে আসেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০–১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন হাদি। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে তিনি আরও পরিচিতি পান।

শিক্ষাজীবন ও পেশা

হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে। বাবার পেশা ছিল মাদ্রাসা শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শুরু করে পরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
একসময় সাইফুর’স-এ শিক্ষকতা করেছেন তিনি। সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন বলেই জানা যায়।

মাদ্রাসায় পড়াশোনা ও পোশাক–পরিচ্ছদের কারণে অনেকে তাকে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহ করতেন, কিন্তু সহকর্মীদের দাবি—জুলাই অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিয়মিত কাজ করতেন এবং বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন।

ইনকিলাব মঞ্চ: হাদির নেতৃত্বে নতুন প্ল্যাটফর্ম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর হাদির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য—সব ধরনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন।

ডাকসু নির্বাচনে শিবির নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকেও ভোট করলেও ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা জিতে যান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে।

Daily Shomoyer Alo

কড়া রাজনৈতিক বক্তব্যে আলোচনার কেন্দ্র

ওসমান হাদি বহুবার ক্ষমতাসীন দল, সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডপ্রদত্ত রায়ের পর তিনি মন্তব্য করেন—“এই রায় পৃথিবীর জন্য নজির।”

গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরনো ধারা’তে রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও টিকবে না।

গোপালগঞ্জ ইস্যুতে বিতর্ক

এনসিপির ডাকা মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচির পর হাদি তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন এবং গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান। সমালোচনা বাড়লে তিনি সেই বক্তব্যকে ‘মুক্তির মহাকাব্য’ বলে ব্যাখ্যা করেন এবং আপত্তি পেলে দুঃখ প্রকাশ করেন।

জীবনের ওপর হুমকি দাবি

গত নভেম্বর তিনি ফেসবুকে লেখেন, দেশি–বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি এবং তাঁর মা–বোন–স্ত্রীকে নির্যাতনের হুমকির কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

হাদির দাবি—আওয়ামী লীগের ‘খুনি সমর্থকরা’ তাকে নজরদারিতে রেখেছে। ‘জীবননাশের আশঙ্কা’ সত্ত্বেও তিনি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি

মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানার সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন হাদি। প্রতি শুক্রবারে জনসংযোগ করছিলেন তিনি।

এক সহযোদ্ধার ভাষায়, জুমার নামাজের পর তাদের লিফলেট-বিলির কর্মসূচি ছিল। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একসঙ্গে খাবার ও আলোচনার কথা ছিল। ঠিক তখনই হামলার খবর আসে।

গুলির ঘটনা: কী জানায় পুলিশ

পুলিশ জানায়, দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন,
“হাদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হয়। তিনি আইসিইউতে আছেন। অবস্থা সংকটাপন্ন।”

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ইসরাফিল জানান,
“হাদি ভাই রিকশায় ছিলেন। মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালায়। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সবাই দোয়া করবেন।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ছাত্রদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন নাসির বলেন,
“তফসিল ঘোষণার পরদিনই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে গুলি করা আসন্ন নির্বাচনে নাশকতার অংশ।”
তিনি দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং হাদির সুস্থতা কামনা করেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা-৮ আসনে গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি: স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন চাঞ্চল্য

০৮:৩০:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

ভোটের তফসিল ঘোষণার মাত্র একদিন পর ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনা দেশের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

অতীত থেকে আলোচনায় ওসমান হাদি

জুলাই আন্দোলন এবং ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ’ আন্দোলনের সময় থেকে ওসমান হাদি ছিলেন একটি পরিচিত মুখ। তাঁর তীব্র ভাষার বক্তব্য, স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান এবং সাংগঠনিক ভূমিকার কারণে তিনি দ্রুত আলোচনায় উঠে আসেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০–১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন হাদি। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে তিনি আরও পরিচিতি পান।

শিক্ষাজীবন ও পেশা

হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে। বাবার পেশা ছিল মাদ্রাসা শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শুরু করে পরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
একসময় সাইফুর’স-এ শিক্ষকতা করেছেন তিনি। সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন বলেই জানা যায়।

মাদ্রাসায় পড়াশোনা ও পোশাক–পরিচ্ছদের কারণে অনেকে তাকে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহ করতেন, কিন্তু সহকর্মীদের দাবি—জুলাই অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিয়মিত কাজ করতেন এবং বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন।

ইনকিলাব মঞ্চ: হাদির নেতৃত্বে নতুন প্ল্যাটফর্ম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর হাদির নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য—সব ধরনের আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন।

ডাকসু নির্বাচনে শিবির নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকেও ভোট করলেও ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা জিতে যান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে।

Daily Shomoyer Alo

কড়া রাজনৈতিক বক্তব্যে আলোচনার কেন্দ্র

ওসমান হাদি বহুবার ক্ষমতাসীন দল, সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডপ্রদত্ত রায়ের পর তিনি মন্তব্য করেন—“এই রায় পৃথিবীর জন্য নজির।”

গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরনো ধারা’তে রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও টিকবে না।

গোপালগঞ্জ ইস্যুতে বিতর্ক

এনসিপির ডাকা মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচির পর হাদি তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন এবং গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান। সমালোচনা বাড়লে তিনি সেই বক্তব্যকে ‘মুক্তির মহাকাব্য’ বলে ব্যাখ্যা করেন এবং আপত্তি পেলে দুঃখ প্রকাশ করেন।

জীবনের ওপর হুমকি দাবি

গত নভেম্বর তিনি ফেসবুকে লেখেন, দেশি–বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি এবং তাঁর মা–বোন–স্ত্রীকে নির্যাতনের হুমকির কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

হাদির দাবি—আওয়ামী লীগের ‘খুনি সমর্থকরা’ তাকে নজরদারিতে রেখেছে। ‘জীবননাশের আশঙ্কা’ সত্ত্বেও তিনি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না।

ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি

মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানার সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন হাদি। প্রতি শুক্রবারে জনসংযোগ করছিলেন তিনি।

এক সহযোদ্ধার ভাষায়, জুমার নামাজের পর তাদের লিফলেট-বিলির কর্মসূচি ছিল। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একসঙ্গে খাবার ও আলোচনার কথা ছিল। ঠিক তখনই হামলার খবর আসে।

গুলির ঘটনা: কী জানায় পুলিশ

পুলিশ জানায়, দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন,
“হাদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হয়। তিনি আইসিইউতে আছেন। অবস্থা সংকটাপন্ন।”

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য ইসরাফিল জানান,
“হাদি ভাই রিকশায় ছিলেন। মোটরসাইকেলে এসে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালায়। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সবাই দোয়া করবেন।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ছাত্রদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন নাসির বলেন,
“তফসিল ঘোষণার পরদিনই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে গুলি করা আসন্ন নির্বাচনে নাশকতার অংশ।”
তিনি দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং হাদির সুস্থতা কামনা করেন।