১০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
স্কোরলাইনের বাইরে যে ছবিগুলো লিখে দিল ক্রীড়াবর্ষের ইতিহাস রাঙামাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু গুলিতে মৃত্যুর হুমকি দিয়ে চিরকুট, আতঙ্কে ছাত্রনেতা সায়মন জিয়নের পরিবার তারেক রহমান ও জামায়াত আমিরের চেয়েও বেশি নাহিদ ইসলামের বার্ষিক আয় সৌদি হামলায় ফাটল স্পষ্ট: ইয়েমেনে অস্ত্র চালান ঘিরে সৌদি–আমিরাত উত্তেজনা জলবায়ু সাংবাদিকতায় এক অনন্য কণ্ঠের বিদায়: তাতিয়ানা শ্লসবার্গের মৃত্যুতে নীরব হলো পরিবেশের গল্প রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় খালেদা জিয়ার শেষযাত্রা, ভুটানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের শ্রদ্ধা সিরিয়ায় আইএসবিরোধী অভিযানে মার্কিন বাহিনীর বড় সাফল্য, নিহত সাত জঙ্গি, আটক আরও বহু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি টিকে আছে, তবু স্বস্তি নেই সাধারণ মানুষের জীবনে জলবায়ু নীতিতে উল্টো স্রোত: ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়

সৌদি হামলায় ফাটল স্পষ্ট: ইয়েমেনে অস্ত্র চালান ঘিরে সৌদি–আমিরাত উত্তেজনা

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী আল-মুকাল্লায় সৌদি আরবের সাম্প্রতিক বিমান হামলা উপসাগরীয় রাজনীতিতে নতুন করে বড় ধরনের টানাপোড়েন তৈরি করেছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাঠানো একটি অস্ত্রবাহী চালান সেখানে নামানো হচ্ছিল, যা ইয়েমেনের দক্ষিণে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। এই ঘটনায় দীর্ঘদিনের মিত্র দুই দেশের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরল ও গভীর মতভেদ সামনে এসেছে

হামলার পটভূমি ও সৌদি অবস্থান
সৌদি সামরিক সূত্র জানায়, আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দর থেকে আসা দুটি জাহাজ অনুমতি ছাড়াই আল-মুকাল্লা বন্দরে ভিড়ে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়। পরে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান খালাস করা হয়। সৌদি নেতৃত্বের ভাষ্য অনুযায়ী, এই চালান ইয়েমেনের দক্ষিণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের জন্য ছিল, যারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ ইয়েমেনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও বিস্তৃত করছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে তারা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না।

আমিরাতের পাল্টা বক্তব্য
এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইয়েমেনে পাঠানো যানগুলো কোনো ইয়েমেনি পক্ষের জন্য নয়, বরং আমিরাতি বাহিনীর নিজস্ব ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল এবং সেগুলোতে অস্ত্র ছিল না। সৌদি হামলায় বিস্ময় প্রকাশ করে তারা বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এর মধ্যেই আমিরাত ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইয়েমেনে থাকা অবশিষ্ট সন্ত্রাসবিরোধী দলগুলো প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে।

Saudi Airstrikes Hit Arms Shipment at Yemen's Mukalla Port, Escalating Gulf  Rift

দক্ষিণ ইয়েমেনে ক্ষমতার লড়াই
এই উত্তেজনার মূল রয়েছে দক্ষিণ ইয়েমেনের ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসে। দক্ষিণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিল চলতি মাসে হাদরামাউত ও মাহরা অঞ্চলে দ্রুত অগ্রসর হয়ে সৌদি-সমর্থিত বাহিনীকে হটিয়ে দেয়। যদিও সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ ইয়েমেনের পক্ষে, আমিরাত-সমর্থিত এই গোষ্ঠী দক্ষিণ ইয়েমেনকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। ফলে হুথিদের বিরুদ্ধে যৌথ অবস্থান থাকলেও, ভবিষ্যৎ ইয়েমেন নিয়ে দুই মিত্রের কৌশল এখন মুখোমুখি সংঘর্ষে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে সংযম ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। আরব লিগ দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে এবং ওমান সহ প্রতিবেশী দেশগুলো উত্তেজনা কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরব ও আমিরাতের এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ভারসাম্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

মানবিক উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কৌশলগত দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হবে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষকে। বছরের পর বছর যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও অবরোধে জর্জরিত দেশটি নতুন করে আরেক দফা অস্থিরতার মুখে পড়তে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্কোরলাইনের বাইরে যে ছবিগুলো লিখে দিল ক্রীড়াবর্ষের ইতিহাস

সৌদি হামলায় ফাটল স্পষ্ট: ইয়েমেনে অস্ত্র চালান ঘিরে সৌদি–আমিরাত উত্তেজনা

০৮:১৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী আল-মুকাল্লায় সৌদি আরবের সাম্প্রতিক বিমান হামলা উপসাগরীয় রাজনীতিতে নতুন করে বড় ধরনের টানাপোড়েন তৈরি করেছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পাঠানো একটি অস্ত্রবাহী চালান সেখানে নামানো হচ্ছিল, যা ইয়েমেনের দক্ষিণে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। এই ঘটনায় দীর্ঘদিনের মিত্র দুই দেশের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরল ও গভীর মতভেদ সামনে এসেছে

হামলার পটভূমি ও সৌদি অবস্থান
সৌদি সামরিক সূত্র জানায়, আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দর থেকে আসা দুটি জাহাজ অনুমতি ছাড়াই আল-মুকাল্লা বন্দরে ভিড়ে ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে দেয়। পরে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান খালাস করা হয়। সৌদি নেতৃত্বের ভাষ্য অনুযায়ী, এই চালান ইয়েমেনের দক্ষিণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের জন্য ছিল, যারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দক্ষিণ ইয়েমেনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও বিস্তৃত করছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে তারা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না।

আমিরাতের পাল্টা বক্তব্য
এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইয়েমেনে পাঠানো যানগুলো কোনো ইয়েমেনি পক্ষের জন্য নয়, বরং আমিরাতি বাহিনীর নিজস্ব ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল এবং সেগুলোতে অস্ত্র ছিল না। সৌদি হামলায় বিস্ময় প্রকাশ করে তারা বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এর মধ্যেই আমিরাত ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইয়েমেনে থাকা অবশিষ্ট সন্ত্রাসবিরোধী দলগুলো প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে।

Saudi Airstrikes Hit Arms Shipment at Yemen's Mukalla Port, Escalating Gulf  Rift

দক্ষিণ ইয়েমেনে ক্ষমতার লড়াই
এই উত্তেজনার মূল রয়েছে দক্ষিণ ইয়েমেনের ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসে। দক্ষিণ ট্রানজিশনাল কাউন্সিল চলতি মাসে হাদরামাউত ও মাহরা অঞ্চলে দ্রুত অগ্রসর হয়ে সৌদি-সমর্থিত বাহিনীকে হটিয়ে দেয়। যদিও সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ ইয়েমেনের পক্ষে, আমিরাত-সমর্থিত এই গোষ্ঠী দক্ষিণ ইয়েমেনকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। ফলে হুথিদের বিরুদ্ধে যৌথ অবস্থান থাকলেও, ভবিষ্যৎ ইয়েমেন নিয়ে দুই মিত্রের কৌশল এখন মুখোমুখি সংঘর্ষে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করে সংযম ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। আরব লিগ দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে এবং ওমান সহ প্রতিবেশী দেশগুলো উত্তেজনা কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরব ও আমিরাতের এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ভারসাম্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

মানবিক উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর কৌশলগত দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হবে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষকে। বছরের পর বছর যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও অবরোধে জর্জরিত দেশটি নতুন করে আরেক দফা অস্থিরতার মুখে পড়তে পারে।