সেদিন কয়েক বন্ধু বলিতেছিল, লটারি পদ্ধতি বাঙালির ইতিহাসের অনেক গভীরে রহিয়াছে। ক বঙ্গাল মুলুকে যখন মাত্স্যান্যায় চলিতেছিল তখন সকলে মিলিয়া গণেশকে ধরিয়া আনিয়া রাজা করিয়া দিয়াছিল। ইহাই নাকি আমাদের লটারি পদ্ধতির শুরু।
তাহাদের কথার প্রতিত্তুরে কহিলাম, তাহলে রূপকথার কাহিনীগুলো কি শুধু-শুধুই জন্ম লইয়াছিল? ইহা কি ওই সময়ের প্রতিচ্ছবি নহে?
বন্ধুরা বলিল, বলিতেছি রাষ্ট্র নামক গুরুত্বপূর্ণ একটি আধুনিক বিষয়ের কথা, আর তুমি বেকুবের মতো তাহার মধ্যে রূপকথা টানিয়া আনিলে।
মাথা চুলকাইয়া বলিলাম, সমস্যাটি আমার নহে, পরলোকগত আমার দাদাঠাকুর মহাশয়ের। তিনি রূপকথা শুনাইয়া কীভাবে যে মগজে গুঁজিয়া দিয়াছেন—তাহার পরে জীবন, যৌবনসহ কত কিছুর ওপর দিয়া কত কত ঝড়ঝাপটা চলিয়া যাইতে দেখিলাম, কিন্তু রূপকথা মগজের কোষ হইতে বাহির হইল না।
তাই তোমরা গণেশের কথা বলিলে, আমার মাথায় রূপকথা জাগিয়া উঠিল—গণেশের অনেক আগেই তো হাতির শুঁড় দিয়া রাজা নির্বাচন হইত।

রাজ্যে কোনো কারণে রাজার পতন ঘটিলে বা রাজা না থাকিলে বা রাজা প্রজাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হইয়া বনবাসে চলিয়া গেলে—তখন রাজকর্মচারীরা মস্তবড় হাতিকে রাজপথে ছাড়িয়া দিত। হাতির যাহার পছন্দ হইত তাহাকে শুঁড় দিয়া ধরিয়া আনিয়া সিংহাসনে বসাইয়া দিত। তিনি মহানন্দে ভুরি ভোজ খাইয়া, পারিষদবর্গের তোষামুদিতে মাতিয়া সঠিকভাবে রাজকার্য পরিচালনা করিয়া যাইতেন।
এইরূপ ঘটনা যদি নাই থাকিত, তাহা হইলে রূপকথায় ইহা কোথা হইতে আসিল? যাহা সমাজে থাকে তাহাই তো সাহিত্যে উঠিয়া আসে। আর রূপকথা হেলা-ফেলা করিয়া ফেলিয়া দিবার শক্তি কাহার কতটুকু আছে! হাড়হিম করা শীতের রাতে বস্ত্রহীন দরিদ্র চোরের ছবি আধুনিক কোনো সাহিত্যিক আঁকিতে পারিয়াছেন?
বন্ধুরা আবার আমার দোষ ধরিল, বলিল, তুমি একবার কথা বলিতে লাগিলে কেবলই ডালপালা গজাইতে সৃষ্টি কর। আমরা বলিতেছি লটারি পদ্ধতি ও রাজা গণেশের ইতিহাস, তুমি তাহার ভেতর রূপকথা আনিয়া আলোচনার বারোটা বাজাইতে শুরু করিয়াছ।
বলিলাম, বয়স বাড়িলে মানুষ বাচাল হইয়া থাকে, ইহা তাহার দোষ হইতে পারে। দেখো না, বয়সের দোষে কেহ কেহ মাথার মণি হইয়াও কেমন করিয়া সাগর, পাহাড়, নদীর গার্ডিয়ান হইয়া যায়। শুধু তাহাই নহে, অন্যের রাজ্যকেও নিজের রাজ্য মনে করিয়া বসেন।
সেখানে আমি শুধুমাত্র রূপকথার উপমা তুলিয়াছি। তাহাতে তোমরা এমন করিয়া খেপিয়া গেলে প্রতিপক্ষের অবস্থা কী হয়, তাহা কি একবার ভাবিয়া দেখো।
আসলে দোষটি তোমাদের নয়। দোষটি শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি এই দেশটি স্বাধীন করিয়া যেমন যত তালগোল পাকাইবার স্থান করিয়া দিয়াছেন—যাহা পাকিস্তানি কাঠামোর মধ্যে থাকিলে কখনই ঘটিত না। কারণ, তাহাদের হাতে “ডান্ডা ভি” আছে। তেমনি তিনি সকল আলোচনা শুষ্ক মুখে করিবার ব্যবস্থা করিয়া দিয়া গিয়াছেন, যাহা পাক-পাকিস্তানেও ঘটে না। এ কারণেই তোমাদের মাথা এত যন্ত্রণাদায়ক হইতেছে।
বন্ধুরা আরো বিরক্ত হইল। তাহারা অনেকে উঠিবার জন্যে খুসখুস করিতে লাগিল। আড্ডায় এমন অবস্থায় রাজশেখর বসুর সৃষ্ট চরিত্র একজন চাটুজ্যে মহাশয় লাগে। তাহার সঙ্গে যেমন একজন উদয় ছিল, তেমনি তাহাকেও দরকার হয়। কারণ, উদয় (উদো) তাহার শ্বশুরবাড়ির কথা বলিবে, আর চাটুজ্যে মহাশয় ধমক দিয়া মূল প্রসঙ্গ ফিরাইয়া আনিবেন।
কিন্তু আজকাল তো আর চাটুজ্যেদেরও ভাত নেই—উদয়ও ডেলিভারি বয় হইয়া গিয়াছে।
তাই নিজেদেরই আবার শান্ত হইয়া কথায় ফিরিতে হইল। বন্ধুদের একজন বলিল, এই যে লটারিতে ডিসি, এসপি, ইউএনও নিয়োগ করা হইতেছে, ইহাতে কি মেধার মৃত্যু ঘটিতেছে না? বা বিষয়টি কি সঠিক হইতেছে?
মেধার কথা শুনিলেই চোখের সামনে ভাসিয়া ওঠে জুলাই আন্দোলনের সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াইয়া পড়া একটি ভিডিও। একজন কাজের বুয়া একটি বস্তির ঘরের সামনে দাঁড়াইয়া স্লোগান দিয়া নাচিতেছেন, “কোটা না মেধা—মেধা, মেধা।” তখন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকারের কথা মনে পড়িয়া যায়। আশির দশকের শেষের দিকে তিনি এক বিশেষ লেখকের নাটক সম্পর্কে মন্তব্য করিতে গিয়া বলিয়াছিলেন, তিনি কখনও ওই নাটক দেখেননি, তবে যেদিন ওই লেখকের নাটক বা টিভি সিরিয়াল থাকে, সেদিন তাহার বাড়ির কাজের বুয়া ব্যস্ত হইয়া যায় টেলিভিশন সেটের সামনে বসিবার জন্যে।
সিরাজুল ইসলাম স্যাররা নিঃসঙ্গ হইয়া গিয়াছেন। তাঁহারা সমাজে মেধার এই রূপান্তর ঠেকাইতে পারেননি। আর রূপান্তর যখন ঘটিয়া গিয়াছে, তখন লটারিতে যদি মেধা মরিয়া যায় তাহাতে কী এমন আসে যায়? বরং প্রেমেন্দ্র মিত্রকেই সত্য মানা উচিত—
“কার চুল এলোমেলো,
কিবা তাতে এলো গেলো!
কার চোখে কত জল
কে বা তা মাপে?
দিনগুলি কুড়োতে,
কত কি হারালো।”
আসলে কতই তো হারাইয়া যায়। যেমন মেধার অভাবে ডিসি পরীক্ষায় পাস করিতে পারেন নাই বিচারপতি সাহাবুদ্দিন। বাধ্য হইয়া জজিয়তিতে গিয়াছিলেন। তিনি প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রপতি—সবই হইয়াছেন। যাহারা তাহার সঙ্গে ওই পরীক্ষায় বসিয়া পাস করিয়াছিলেন, তাহারা তো আর এতদূর যাইতে পারেন নাই।
তাহা হইলে মেধার থেকে কি লটারি বড় নয়? প্রধান বিচারপতি নিয়োগ লইয়া রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদের সঙ্গে বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন। তখন জেনারেল এরশাদ তাহার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন—তিনি একজন জমিদার বামপন্থীকে কাজে লাগাইয়া তাহার ক্যান্ডিডেট বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নাম কম্প্রোমাইজ ক্যান্ডিডেট হিসেবে আন্দোলনকারী আইনজীবীদের কাছে প্রস্তাব করানোর ব্যবস্থা করেন—প্রধান বিচারপতি হিসাবে। ওই বামপন্থীর প্রস্তাব আইনজীবীরা লুফিয়া নিয়াছিলেন। সাহাবুদ্দিন এ কারণে এরশাদের প্রতি প্রথমে কৃতজ্ঞ ছিলেন। তিনি অষ্টম সংশোধনী বাতিলের রায়ে এরশাদের ভোটের রাজনীতির ক্ষতি করেন নাই। তিনি বিচারবিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ বাতিল করিয়া সিনিয়র আইনজীবীদের আয়-রোজগারের স্থিতিশীলতা রাখিয়া আন্দোলনরত আইনজীবীদের যেমন শান্ত করিয়াছিলেন, তেমনি রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি সেনসেটিভ বলিয়া পাশ কাটাইয়া গিয়া এরশাদের ভোটের রাজনীতিও রক্ষা করিয়াছিলেন।
আবার পৃথিবীতে কেউ পড়িয়া গেলে সাধারণ কেহই হাত বাড়ায় না। বরং বিজয়ীদের দিকে লেজ উঁচু করিয়া ছুটিতে থাকে। যদিও এরশাদের পদত্যাগের একটি অলিখিত শর্ত ছিল তাহাকে নির্বিঘ্নে রাজনীতি করিতে দিতে হইবে। কিন্তু মুক্ত এরশাদ রাজনীতি করিলে যেহেতু নির্বাচনে বিএনপিরই ভোট কাটিবেন, তাই ডাকসু ও ছাত্রদলের চাপে সাহাবুদ্দিন দ্রুতই তাহাকে একটি নগদ টাকা কাছে রাখার মামলা সাজাইয়া জেলে পাঠাইয়া দিলেন।
সাহাবুদ্দিনও ভুলিয়া গেলেন—তিনিও এক ধরনের লটারির বা হাতির শুঁড়ের মাধ্যমে এই স্থানে বসিয়াছেন। আর লটারি ভাগ্যবাদের বিষয়—তাই ভাগ্যবাদীরা মনে করিতেই পারেন লটারি একবার যাহার কপালে বাঁধে, বারবার তাহার কপালে বাধিতে থাকে।
যেমন দেখিয়াছি রেস খেলায় একবার কাহারো ঘোড়া জিতিয়া গেলে—অনেকেই পরে ঘোড়ার টিকিট কিনিবার আগে তাহার হাত ছুইয়া লয়। শেখ হাসিনাও তাহাই করিয়াছিলেন—তিনি রেসের ঘোড়ায় জিতিয়া যাওয়া সাহাবুদ্দিনের হাত ছুইয়া লইয়াছিলেন। ১৯৯৬-তে তাহার দলে যোগ্য, শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে বিজ্ঞ অনেক বড় বড় নেতা থাকিতে তিনি সাহাবুদ্দিনের হাত ছুইয়া লইয়াছিলেন ভাগ্যের আশায়। তাহাকে আবার নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপতি বানাইয়া দিলেন।
তাহার ফলও শেখ হাসিনা ভোগ করিয়াছিলেন। কারো হাতে একবার রেসের ঘোড়া জিতিয়াছে বলিয়া তাহার হাত ছুইয়া বারবার রেস খেলিতে গেলে যে অনেক বড় লোকসানের বোঝা মাথায় লইয়া ফিরিতে হয়, তাহা শেখ হাসিনা বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি করিয়া ২০০১-এ বুঝিতে পারিয়াছিলেন।
কিন্তু ২০০১ হইতে মাত্র পাঁচ বছর পরে আবার লটারি ফিরিয়া আসিল। বেগম জিয়া যখন ২২ জানুয়ারি ২০০৭-এ আবার তাহার ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬-এর নির্বাচনের মতো একদলীয় নির্বাচন করিতে গেলেন—তখন রাজপথ যেমন উত্তপ্ত হইল, সেনাবাহিনীও তাহার সহিত হাত মিলাইল।
দেশে আবার লটারি আসিল। রাজনীতি ব্যর্থ হইলে দেশের অর্গানাইজড শেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করিবার নিয়ম। কিন্তু তাহা না করিয়া তাহারা হাতির শুঁড় বা লটারি পদ্ধতিতে চলিয়া গেলেন।
তাহারা একপক্ষীয় নির্বাচন বন্ধ করিবার জন্যে হাতির শুঁড় বা লটারি পদ্ধতিতে একজন সরকারপ্রধান বা গণেশ খুঁজিতে লাগিলেন।
মান্নান ভূঁইয়ার মুখে শুনিয়াছি—সত্য কিনা জানি না—ঘটনাটা এমন ছিল, গণেশ খুঁজিতে প্রথমে আজকের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে নাকি গিয়াছিলেন—ইন্টারিম গভর্নমেন্টের প্রধান হইবার জন্যে। তাহাদের প্রস্তাবের বিপরীতে নাকি দশ বছর ক্ষমতায় রাখিতে হইবে এমন একটা শর্ত ছিল—কারণ তাহার মতে দেশের যে দুরবস্থা হইয়া গিয়াছে, তাহা বিদ্যাসাগরের ভাষায় “দুরবস্থার মধ্যে লাঠি ঢুকিয়া যাইবার” মতো। তাই দশ বছরের কম সময়ে এই বানান শেখানো বা লাঠি সরানো সম্ভব নয়।
দশ বছর তাহাদের সমর্থের মধ্যে না থাকায় তাহারা অন্য একজন প্রফেসরের কাছে গিয়াছিলেন। তিনি ভীতু মানুষ। একজনের অধীনে কাজ করিতে পারেন, কিন্তু প্রধান হইতে ভয় পান—তাই তিনি তাহাদের কাছে অপারগতা জানাইয়া বলিয়াছিলেন—ফখরুদ্দিন তাহার কাছে আসিয়াছিল, তাহার একটি চাকরির দরকার। যাহোক, তাহার নিকট হইতে খবর পাইবার পর—রাজা গণেশ নির্বাচিত হইল।
এই পর্যন্ত বকরবকর করিবার পরে বন্ধুরা কহিল, রাখো তোমার গণেশ নির্বাচনের কথা। আসলে এই দেশে লটারি পদ্ধতি জোরদারভাবে চালু করিয়াছেন শেখ হাসিনার শিক্ষামন্ত্রী হাফেজ মৌলনা নাহিদ।
শেখ হাসিনার ওই শিক্ষামন্ত্রীকে বামপন্থী বলিয়া জানিতাম, কিন্তু বন্ধুবর যেহেতু সিলেটের—তাই আর তাহার সহিত ইহা লইয়া বিতর্কে না গিয়া বলিলাম—
ইহা সত্য, দেশের মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে, বিশেষ করিয়া মৌলিক শিক্ষা যেখানে হয়—সেই স্কুলগুলিতে লটারি পদ্ধতি চালু করিয়া তিনি দেশের মৌলিক শিক্ষার বারোটা বাজাইয়া গিয়াছেন।
ইহাতে অবশ্য মি. নাহিদের কোনো দোষ নাই। কারণ, তিনি সারা জীবন স্লোগান ছুড়িয়াছেন—“শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার।” আর অধিকার আদায়ের বড় অংশেরই শরীর নির্ভর হইলে চলে, তাহাদের মস্তিষ্কের খুব বেশ প্রয়োজন পড়ে না।
এক বন্ধু বলিলেন, আমাদের বাংলাদেশে একটা কথাই তো আছে—একবার কোনো কিছু নামিতে শুরু করিলে তাহা কেবলই নামিতে থাকে।
দেশের বা মানুষের দোষ এভাবে দেওয়া উচিত নহে। সারা পৃথিবীতে আসলেই এই রোগটি বড়ই ছোঁয়াচে—যে কারণে তাহারা ব্যক্তি হইতে সিস্টেমের দিকে বেশি জোর দিয়া থাকে। কারণ, সিস্টেম অনেকটা মেশিনের মতো—আর ইদি আমিন তো বলিয়াই গিয়াছেন, মানুষ আর যাই হোক গরু বা মহিষ নহে—মেশিনের মতো। চার্লি তো তাহার ফিল্মে মেশিন দ্বারা খাবার খাওয়া শুরু করিয়া শেষ অবধি নিজে মেশিনের উৎপাদিত প্রোডাক্টের পথেই শরীর লইয়া চলিয়া গেল।
ইহার পরে তো আরও বহুকাল কাটিয়া গিয়াছে। যেমন নাহিদের পরে নতুন নাহিদ আসিয়া গিয়াছে। চাকরির বৈষম্য দূর করিতে গিয়া রাজনীতির চাকরি লইয়া ভালোই আছে।

শুধু ইহাতেই শেষ নয়—তাহারাও তো নব্য গণেশ তৈরি করিয়াছে। আর বিষয়টা যে গণেশের মতোই, তাহা মুহাম্মদ ইউনুসও বলিয়া দিয়াছেন। যেমন আগে কয়েকবার গণেশের বদলে যখন সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট হইয়াছে—তখন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাহারা পরিচিত ছিলেন, তাহাদের উপদেষ্টা করা হইত।
কিন্তু গণেশাধিক্যের আমল শুরু হইতেই এই নিয়ম বদলাইতে থাকে। ম্যাজিস্ট্রেসিতে চাকরিচ্যুত হইয়া এনজিওর নামে অনেক কিছু করা “আশা”র প্রধানও উপদেষ্টা হইয়াছেন এদেশে। আর এবার মুহাম্মদ ইউনুস সত্য কথা বলিয়া দিয়াছেন—যেহেতু হাতে সময় বেশি ছিল না, তাই হাতের কাছে যাহাদের পাওয়া গিয়াছিল, তাহাদেরকে উপদেষ্টা বানানো হইয়াছে। ইহাকেও কি “গণেশ পদ্ধতি”, “হাতির শুঁড় পদ্ধতি”, বা বর্তমান কালের লটারি বলিলে ভুল হইবে?
তাই তাহারা এখন সর্বোত্তম পন্থা বাহির করিয়াছেন—পোস্টিং-এ লটারি পদ্ধতি।
দেশের ইতিহাসের পথ বিবেচনা করিলে এই পদ্ধতি এক সময়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও চলিয়া যাইতে পারে। দেশের সেরা স্কুলে ভর্তি ক্ষেত্রে যখন লটারিতে হয়, তখন ইহাতে খুব দোষ ধরিবার কিছু থাকিবে না।
আর গণেশ পদ্ধতিতে যেহেতু রাষ্ট্র চলিতেছে—তাহা হইলে দেশের অর্থ ব্যয় করিয়া নির্বাচন অনুষ্ঠান কি একান্তই আবশ্যক? লটারি পদ্ধতি দিয়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করিয়া—দেশের অর্থ-সংকটকালে অর্থ বাঁচাইলে কি বেশি বাহবা মিলিবে না? আর তাহা কি নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে আয়োজন দেখা যাইতেছে, ওই নির্বাচনের চাইতে খুব বেশি খারাপ হইবে?
লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক, সারাক্ষণ, The Present World.

স্বদেশ রায় 


















