তৃতীয় অধ্যায়
ইংরেজদের এ দেশে বসবাসের মধ্য দিয়ে বাংলার ও বাঙালির শিল্পোন্নতি কৃষকের দুর্দশা দূরীকরণ, আর্থিক সাংস্কৃতিক, মনোন্নয়ন সবই স্বপ্ন থেকে গেল। অবাধ বাণিজ্যনীতি ও নীল চাষ সমর্থনের খেসারত চাষিরা তাদের চোখের জলে আগামী দিনে এই পাপ মুছে ফেলার চেষ্টা করল। পৃথিবীতে কোন দেশই নিজের দেশের শিল্প বিকাশের স্বার্থে অবাধ বাণিজ্য নীতি মেনে নেয়নি।
কঠোর সংরক্ষণ নীতির মধ্য দিয়ে দেশীয় শিল্পকে গড়ে তুলেছে। পরাধীন জাতি তার অবাধ বাণিজ্য নীতির মধ্য দিয়ে তার কুটির শিল্পের মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে-১৮৩০-৫০ এর মধ্যে ভারতের শিল্পজাত সামগ্রীর উৎপাদন কমেছে আর বিদেশি জিনিস বেশি বেশি করে ভারতের বাজার দখল করেছে।
১৮ শতকের শেষের দিকে বারাসতে মধুমুরুলি পুকুরের পাশে নীলকুঠি তৈরির খবর জানা থাকলেও সুন্দরবনের উত্তরাংশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপকভাবে নীলকুঠিগুলি গড়ে ওঠে উনিশ শতকের শুরুতে। ১৮১০ খ্রীষ্টাব্দে বনগাঁর নিকটে ইছামতী নদীর তীরে মোল্লাহাটি কুঠিকে কেন্দ্র করে চাঁদুড়িয়া, বেড়িগোপালপুর, খাটুরা, মাগুরা, চারঘাট, তেঁতুলিয়া, মালঙ্গপাড়া, হাকিমপুর, কেশবপুর প্রভৃতি স্থানে অসংখ্য নীলকুঠি গড়ে ওঠে।
বাদুড়িয়ার রুদ্রপুর নীল কনসার্নকে কেন্দ্র করে ইছামতী নদীর উভয় পার্শ্বে অসংখ্য নীলকুঠি গড়ে ওঠে-তারাগুনিয়া, মেদে, গুঁড়া, খোড়গাছি, আটুরিয়া, ইটিন্ডা, নৈহাটি, বাগুন্ডী, দণ্ডীরহাট, ধলতিথা প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি তৈরি হয়। অপরদিকে হাবড়া কনসার্নকে কেন্দ্র করে নগরউখড়া, বীড়া, হটিথুবা, বেড়াচাঁপা, হামাদানা, ভাসিলা, চৌরাশি, দেগঙ্গা প্রভৃতি স্থানে নীলকুঠিগুলি গড়ে ওঠে। অপরদিকে বারুইপুর নীল কনসার্ণকে কেন্দ্র করে গড়িয়া, বাঁশদ্রোণী, নাকতলা, সোনারপুর, আমতলা, প্রভৃতি এলাকায় ক্যাপক নীল চাষ শুরু হয়। এই নীলকে বলা হত বারুইপুরী নীল।
বারুইপুরে রাস্তার ধারে নীলকর সাহেবদের অফিস ছিল এই অফিস থেকে নীল কলকাতায় পাঠানো হত একটা খালের মাধ্যমে আদিগঙ্গা দিয়ে কলকাতায়। সরকারি তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে ১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে বারুইপুর নীল কনসার্ন ঐ বছরের জন্য চাবিদের প্রায় ৩ লক্ষ টাকা অগ্রিম হিসাবে দিচ্ছে নীল উৎপাদনের জন্য। মোল্লাহাটির কুঠি ছিল সে যুগে বিশাল এলাকা জুড়ে। কুঠির অভ্যন্তরে বিশাল প্রান্তরে হরিণ থেকে শুরু করে বিলাসের নানারকম আয়োজন ছিল।