১২:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

আসিফ মাহমুদের হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন, আলোচনায় কয়েকটি প্রশ্ন

আসিফ মাহমুদ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিমানবন্দরের স্ক্যানারে তার হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনাকে ‘ভুলবশত ঘটেছে’ বলে দাবি করলেও সেটা কীভাবে ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম চেকিং পার হয়ে গেলো- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একই সঙ্গে তিনি কবে কীভাবে এই অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন এবং লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা অস্ত্র ব্যবহার ও গুলির ব্যবস্থাপনা তিনি কতটা জানেন- এসব প্রশ্নও নিয়েও তোলপাড় চলছে সামাজিক মাধ্যমে।

ফেসবুকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মি. মাহমুদ অবশ্য বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে। এর উদ্দেশ্য সরকারি সিকিউরিটি যখন থাকে না, তখন নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেছেন, “..প্যাকিং করার সময় অস্ত্র সহ একটা ম্যাগাজিন রেখে আসলেও ভুলবশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। যেটা স্ক্যানে আসার পর আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে আসি। বিষয়টি সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল”।

কিন্তু কোনো কারণে গুলি ভর্তি এই ম্যাগাজিন ‘ফাইনাল চেকিংয়েও’ ধরা না পড়লে- এ নিয়ে বড় সংকট তৈরি হতো বলে মনে করছেন এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন সময় এভাবে ঘোষণা না দিয়ে অস্ত্র বা গুলিসহ ঢাকায় বিমানবন্দরে যাওয়ার পর লাইসেন্স করা অস্ত্রসহ গ্রেফতারের উদাহরণও আছে।

কিন্তু মি. মাহমুদের বিষয়ে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং তার হাত ব্যাগে পাওয়া গুলির ম্যাগাজিন তিনি নিজেই তার প্রটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে নির্ধারিত ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে গেছেন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ টার্মিনালে প্রবেশের আগেই প্রবেশ গেটে ঘোষণা করতে হবে। এসব বিষয়ে চেক-ইন কাউন্টারে এয়ারলাইন্সকেও ঘোষণা করতে হবে, সাথে দেখাতে হবে বৈধ লাইসেন্স।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন, একাধিক স্ক্যানিং পার হয়ে এয়ারক্রাফটে উঠতে হয় বলে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন নিয়ে এয়ারক্রাফটে ওঠার সুযোগ কোনো যাত্রীরই হতো না।

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা ইস্যুতে দুর্বলতার কারণে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা দ্যা ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএ ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে পারছে না।

ফলে এই বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজ সরাসরি নিউইয়র্কসহ অনেক বিমানবন্দরে যেতে পারে না।

বিমানবন্দরে যাত্রী তল্লাশির দৃশ্য (ফাইল ফটো)

কীভাবে গুলির ম্যাগাজিন ধরা পড়লো

আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া রবিবার ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশ নিতে মরক্কোর মারাকেশে যাচ্ছিলেন। বিমানবন্দরে বোর্ডিংয়ের আগে তার ব্যাগ স্ক্যানার মেশিনে স্ক্যানিংয়ের সময় গুলিসহ ম্যাগাজিন থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।

এরপরই সামাজিক মাধ্যমে ও দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনে বিমানবন্দরের মি. মাহমুদ ও তার সফরসঙ্গীদের তল্লাশি ও মেটাল ডিটেক্টর পার হওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

এতে দেখা যাচ্ছে মি. মাহমুদসহ কয়েকজন মেটাল ডিটেক্টর পার হয়ে গেছেন। এরপর স্ক্যানার মেশিনে তার হাতব্যাগে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন শনাক্ত হলে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এক পর্যায়ে মি. মাহমুদ আবার ফিরে এসে ওই ম্যাগাজিন আরেকজনের কাছে দিয়ে দেন এবং এরপর তিনি ভেতরের দিকে চলে যান।

ভিডিওটিকে নিয়ে যেসব সংবাদ এসেছে, সেগুলোতে এটি বিমানে ওঠার আগের চেক পয়েন্ট বলে দাবি করা হচ্ছে। এর আগেও তার আরো একটি চেক পয়েন্ট ও স্ক্যানার চেকিং পার হয়ে আসার কথা।

এই দাবি সত্যি হলে এই শেষ স্ক্যানারেও ধরা না পড়লে, তিনি হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন নিয়েই এয়ারক্রাফটে উঠে পড়তেন বলে মনে করা হচ্ছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বেশ কিছু প্রশ্ন

ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আসার পরপরই প্রশ্ন উঠে যে ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম চেকিং পার হয়ে এই গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনসহ তিনি ভেতরে গেলেন কীভাবে।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি।

তবে একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভিআইপিরা, বিশেষ করে প্রভাবশালী ভিআইপিরা অনেক সময় ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম গেটে হাতে বহনযোগ্য ব্যাগ তল্লাশির ক্ষেত্রে সহযোগিতা কম করেন। বিশেষ করে এ ধরনের ব্যাগ তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের কাছে থাকলে তারা নিরাপত্তা তল্লাশিতে কম সহযোগিতা করেন।

ঘোষণা ছাড়া গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন ভেতরে নিয়ে স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ার পড়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন- এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

একই বিমানবন্দরে ঘোষণা ছাড়াই অস্ত্র ও গুলি নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন সাতক্ষীরা ও যশোরের দুইজন রাজনৈতিক নেতা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে একই অভিযোগে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার উদাহরণ আছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন সেই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, অস্ত্র বা গুলি নিলে অবশ্যই আগেই ঘোষণা দেয়ার নিয়ম আছে।

“কিন্তু ভুলক্রমে কেউ নিয়ে আসলে লাইসেন্স থাকলেও সেটি নিতে দেয়া হয় না। এ বিষয়ে যেসব প্রক্রিয়া আছে সেটি অনুসরণ করা হয়,” বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান, ভুলক্রমে কেউ নিয়ে আসলে চেক ইনে ধরা পড়লে সেটি জানানো হয় এবং এরপর লাইসেন্স সম্পর্কে জেনে বৈধ হলে তাকে ফেরত দেয়া হয়। কিন্তু ওই যাত্রী সেটি নিয়ে এয়ারক্রাফটে যেতে পারেন না।

“আর লুকিয়ে বা ঘোষণা ছাড়া আনা অস্ত্র বা গুলি অবৈধ হলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়,” বলছিলেন তিনি।

অথচ ২০১৯ সালে এস এম মুজিবুর রহমান ও মেহেদী মাসুদ হোসেন নামে দুই জনকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটকের পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন যে, এরপর ঘোষণা ছাড়া কারও কাছ থেকে অস্ত্র বা এক্সপ্লোসিভ পাওয়া গেলেই তাকে আটক করা হবে।

আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ নিয়ে নির্দেশনাবলী

অস্ত্র পেলেন কবে? তিনি অস্ত্র পাওয়ার যোগ্য?

ঢাকা বিমানবন্দরে আসিফ মাহমুদের হাতব্যাগে গুলিসহ ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছে যে তিনি কবে কীভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন, কারণ এ ধরনের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট বয়সসহ কিছু শর্ত থাকে।

লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬ এর ধারা ৩(খ) অনুযায়ী, লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়সী হতে হবে। ৩(ঘ) তিন বছর ধারাবাহিক ভাবে এক থেকে তিন লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব নিয়মের ব্যত্যয়ের সুযোগ আছে। নীতিমালা ৩২(২) অনুযায়ী, মন্ত্রী বা পদমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সহ কয়েকটি শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

কিন্তু সরকারি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন অস্ত্র ও গুলি রাখেন এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা তিনি জানেন কি-না- তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়।

পরে মারাকেশে পৌঁছে মি. মাহমুদ তার ফেসবুক পাতায় এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়ে ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ ‘আনইন্টেনশনাল’ বলে উল্লেখ করেছেন।

যদিও ওই ব্যাখ্যায় তিনি এই অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা কবে কোথায় শিখেছেন বা কতদিন ধরে এগুলো তার কাছে আছে তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

স্ক্যানিং পার হয়ে গেলে কী হতো?

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানে ওঠার আগে কোনো না কোনো পর্যায়ে বিষয়টি চিহ্নিত না হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরেও কোনো কারণে এ অস্ত্র, গুলি বা এ ধরনের দ্রব্যাদি বিমানে করে কেউ নিয়ে গেলে বহনকারীকে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হতো।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম একটি বেসরকারি এয়ারওয়েজের পরিচালক ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ঢাকা বিমানবন্দরে স্ক্যানিংয়ে এসব দ্রব্য অবশ্যই ধরা পড়বে, তারপরেও কোনো ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর ব্যাগে এমন কিছু থেকে গেলে অন্য দেশে গেলেই গ্রেফতার হয়ে যেতে হতো।

“এসব ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে এভাবে যাবে সেই দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আরেকজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলছেন, রবিবারের ঘটনায় ভিআইপি টার্মিনালে ঢুকতেই যে চেক করা হয়, সেখানে কেন ঠিকমতো চেক হলো না-সেটিই বড় প্রশ্ন।

“সাধারণত একাধিকবার চেক করা হয়। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছে । বোর্ডিং ব্রিজে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছে। তাই প্রসেস ঠিক ছিলো। কিন্তু পরে বা অন্য দেশে গিয়ে চিহ্নিত হলে দায়টা ঢাকা বিমানবন্দরের সিকিউরিটির হতো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) বিমানবন্দরের জন্য সেবা কার্যক্রম ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো মনিটর করে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিমানে ওই ধরনের দ্রব্য নিয়ে কেউ উঠলে পরে তা সংস্থাটির নজরে আসতো।

আর এ ধরনের ঘটনায় সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো ও নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারতো, বলছিলেন মি. আলম।

আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা

আসিফ মাহমুদের পূর্ণ ব্যাখ্যা

ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ তার লিখিত ব্যাখ্যায় বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র আছে।

“গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের উপরে যেভাবে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে কয়েকদফা তাতে রাখাটাই স্বাভাবিক। যখন সরকারি প্রোটোকল বা সিকিউরিটি থাকে না তখন নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে লাইসেন্স অস্ত্র রাখা,” বলেছেন তিনি।

ওই ব্যাখ্যায় তিনি জানান, মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের জন্য আজ (রবিবার) ভোর ৬ টা ৫০ মিনিটে তার ফ্লাইট ছিল।

“ভোরে প্যাকিং করার সময় অস্ত্র সহ একটা ম্যাগাজিন রেখে আসলেও ভুল বশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। যেটা স্ক্যানে আসার পর আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে আসি। বিষয়টি সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল। শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কি করবো ভাই? ইন্টেনশন থাকলে অবশ্যই অস্ত্র রেখে আসতাম না। এখানে অবৈধ কিছু না থাকলেও অনেকের জন্যই এটা আলোচনার খোরাক বটে,” বলেছেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে অনেকে অভিযোগ করেছেন এ ঘটনায় সংবাদমাধ্যমগুলোকে চাপ দিয়ে নিউজ করাতে বাধা দেয়া হয়েছে, যা মি. মাহমুদ অস্বীকার করেছেন।

“চাপ দিয়ে নিউজ সরানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ঘটনার পর আমি টিমসহ টানা ১০ ঘণ্টা ফ্লাইটে ছিলাম। ট্রানজিটে নেমেও দীর্ঘক্ষণ পর অনলাইনে এসে দেখতে পাচ্ছি যে এতকিছু ঘটেছে। নাগরিক হিসেবে আপনারও যদি নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে, যথাযথ নিয়ম ফলো করে আপনিও অস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন,” তার দেয়া ব্যাখ্যায় বলেছেন মি. মাহমুদ।

এই ইস্যুতে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ”একটি পিস্তলের খালি একটি ম্যাগাজিন ছিল। সেটি ভুলে রয়ে গিয়েছিল। এটা আসলে ভুলেই হয়েছে। অনেক সময় এমন হয় যে— আপনি একটা চশমা নিয়ে যাবেন কিন্তু চশমা না নিয়ে মোবাইল নিয়ে রওনা হয়ে গেছেন। এটা জাস্ট একটা ভুল। উনি যদি আগে জানতে পারতেন তাহলে কোনো অবস্থাতেই এটা নিতেন না।”

কীভাবে বিমানবন্দরের স্ক্যানিং পার হয়ে গেল, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নেতা হলে অনেক সময় বিমানবন্দরে অন্যদের থেকে কিছুটা প্রিভিলেজ পায়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ভবিষ্যতে কারো ক্ষেত্রে যেন বিমানবন্দরে বিশেষ সুবিধা দেয়া না হয়, সবার ক্ষেত্রে আইন যেন একইভাবে প্রয়োগ করে সে জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

আসিফ মাহমুদের হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন, আলোচনায় কয়েকটি প্রশ্ন

০৭:০৯:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বিমানবন্দরের স্ক্যানারে তার হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনাকে ‘ভুলবশত ঘটেছে’ বলে দাবি করলেও সেটা কীভাবে ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম চেকিং পার হয়ে গেলো- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একই সঙ্গে তিনি কবে কীভাবে এই অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন এবং লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা অস্ত্র ব্যবহার ও গুলির ব্যবস্থাপনা তিনি কতটা জানেন- এসব প্রশ্নও নিয়েও তোলপাড় চলছে সামাজিক মাধ্যমে।

ফেসবুকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মি. মাহমুদ অবশ্য বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে। এর উদ্দেশ্য সরকারি সিকিউরিটি যখন থাকে না, তখন নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেছেন, “..প্যাকিং করার সময় অস্ত্র সহ একটা ম্যাগাজিন রেখে আসলেও ভুলবশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। যেটা স্ক্যানে আসার পর আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে আসি। বিষয়টি সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল”।

কিন্তু কোনো কারণে গুলি ভর্তি এই ম্যাগাজিন ‘ফাইনাল চেকিংয়েও’ ধরা না পড়লে- এ নিয়ে বড় সংকট তৈরি হতো বলে মনে করছেন এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন সময় এভাবে ঘোষণা না দিয়ে অস্ত্র বা গুলিসহ ঢাকায় বিমানবন্দরে যাওয়ার পর লাইসেন্স করা অস্ত্রসহ গ্রেফতারের উদাহরণও আছে।

কিন্তু মি. মাহমুদের বিষয়ে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং তার হাত ব্যাগে পাওয়া গুলির ম্যাগাজিন তিনি নিজেই তার প্রটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে নির্ধারিত ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে গেছেন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ টার্মিনালে প্রবেশের আগেই প্রবেশ গেটে ঘোষণা করতে হবে। এসব বিষয়ে চেক-ইন কাউন্টারে এয়ারলাইন্সকেও ঘোষণা করতে হবে, সাথে দেখাতে হবে বৈধ লাইসেন্স।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন, একাধিক স্ক্যানিং পার হয়ে এয়ারক্রাফটে উঠতে হয় বলে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন নিয়ে এয়ারক্রাফটে ওঠার সুযোগ কোনো যাত্রীরই হতো না।

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা ইস্যুতে দুর্বলতার কারণে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা দ্যা ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএ ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে পারছে না।

ফলে এই বিমানবন্দর থেকে উড়োজাহাজ সরাসরি নিউইয়র্কসহ অনেক বিমানবন্দরে যেতে পারে না।

বিমানবন্দরে যাত্রী তল্লাশির দৃশ্য (ফাইল ফটো)

কীভাবে গুলির ম্যাগাজিন ধরা পড়লো

আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া রবিবার ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশ নিতে মরক্কোর মারাকেশে যাচ্ছিলেন। বিমানবন্দরে বোর্ডিংয়ের আগে তার ব্যাগ স্ক্যানার মেশিনে স্ক্যানিংয়ের সময় গুলিসহ ম্যাগাজিন থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।

এরপরই সামাজিক মাধ্যমে ও দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনে বিমানবন্দরের মি. মাহমুদ ও তার সফরসঙ্গীদের তল্লাশি ও মেটাল ডিটেক্টর পার হওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

এতে দেখা যাচ্ছে মি. মাহমুদসহ কয়েকজন মেটাল ডিটেক্টর পার হয়ে গেছেন। এরপর স্ক্যানার মেশিনে তার হাতব্যাগে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন শনাক্ত হলে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এক পর্যায়ে মি. মাহমুদ আবার ফিরে এসে ওই ম্যাগাজিন আরেকজনের কাছে দিয়ে দেন এবং এরপর তিনি ভেতরের দিকে চলে যান।

ভিডিওটিকে নিয়ে যেসব সংবাদ এসেছে, সেগুলোতে এটি বিমানে ওঠার আগের চেক পয়েন্ট বলে দাবি করা হচ্ছে। এর আগেও তার আরো একটি চেক পয়েন্ট ও স্ক্যানার চেকিং পার হয়ে আসার কথা।

এই দাবি সত্যি হলে এই শেষ স্ক্যানারেও ধরা না পড়লে, তিনি হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন নিয়েই এয়ারক্রাফটে উঠে পড়তেন বলে মনে করা হচ্ছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বেশ কিছু প্রশ্ন

ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আসার পরপরই প্রশ্ন উঠে যে ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম চেকিং পার হয়ে এই গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনসহ তিনি ভেতরে গেলেন কীভাবে।

বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেন নি।

তবে একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ভিআইপিরা, বিশেষ করে প্রভাবশালী ভিআইপিরা অনেক সময় ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম গেটে হাতে বহনযোগ্য ব্যাগ তল্লাশির ক্ষেত্রে সহযোগিতা কম করেন। বিশেষ করে এ ধরনের ব্যাগ তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের কাছে থাকলে তারা নিরাপত্তা তল্লাশিতে কম সহযোগিতা করেন।

ঘোষণা ছাড়া গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন ভেতরে নিয়ে স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ার পড়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না কেন- এমন প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

একই বিমানবন্দরে ঘোষণা ছাড়াই অস্ত্র ও গুলি নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন সাতক্ষীরা ও যশোরের দুইজন রাজনৈতিক নেতা। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে একই অভিযোগে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার উদাহরণ আছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন সেই কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, অস্ত্র বা গুলি নিলে অবশ্যই আগেই ঘোষণা দেয়ার নিয়ম আছে।

“কিন্তু ভুলক্রমে কেউ নিয়ে আসলে লাইসেন্স থাকলেও সেটি নিতে দেয়া হয় না। এ বিষয়ে যেসব প্রক্রিয়া আছে সেটি অনুসরণ করা হয়,” বলছিলেন তিনি।

তিনি জানান, ভুলক্রমে কেউ নিয়ে আসলে চেক ইনে ধরা পড়লে সেটি জানানো হয় এবং এরপর লাইসেন্স সম্পর্কে জেনে বৈধ হলে তাকে ফেরত দেয়া হয়। কিন্তু ওই যাত্রী সেটি নিয়ে এয়ারক্রাফটে যেতে পারেন না।

“আর লুকিয়ে বা ঘোষণা ছাড়া আনা অস্ত্র বা গুলি অবৈধ হলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়,” বলছিলেন তিনি।

অথচ ২০১৯ সালে এস এম মুজিবুর রহমান ও মেহেদী মাসুদ হোসেন নামে দুই জনকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটকের পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন যে, এরপর ঘোষণা ছাড়া কারও কাছ থেকে অস্ত্র বা এক্সপ্লোসিভ পাওয়া গেলেই তাকে আটক করা হবে।

আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ নিয়ে নির্দেশনাবলী

অস্ত্র পেলেন কবে? তিনি অস্ত্র পাওয়ার যোগ্য?

ঢাকা বিমানবন্দরে আসিফ মাহমুদের হাতব্যাগে গুলিসহ ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশ্ন উঠেছে যে তিনি কবে কীভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন, কারণ এ ধরনের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট বয়সসহ কিছু শর্ত থাকে।

লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬ এর ধারা ৩(খ) অনুযায়ী, লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়সী হতে হবে। ৩(ঘ) তিন বছর ধারাবাহিক ভাবে এক থেকে তিন লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব নিয়মের ব্যত্যয়ের সুযোগ আছে। নীতিমালা ৩২(২) অনুযায়ী, মন্ত্রী বা পদমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সহ কয়েকটি শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

কিন্তু সরকারি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও তিনি কেন অস্ত্র ও গুলি রাখেন এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা তিনি জানেন কি-না- তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়।

পরে মারাকেশে পৌঁছে মি. মাহমুদ তার ফেসবুক পাতায় এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়ে ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ ‘আনইন্টেনশনাল’ বলে উল্লেখ করেছেন।

যদিও ওই ব্যাখ্যায় তিনি এই অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা কবে কোথায় শিখেছেন বা কতদিন ধরে এগুলো তার কাছে আছে তার কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

স্ক্যানিং পার হয়ে গেলে কী হতো?

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানে ওঠার আগে কোনো না কোনো পর্যায়ে বিষয়টি চিহ্নিত না হওয়ার সুযোগ নেই। তারপরেও কোনো কারণে এ অস্ত্র, গুলি বা এ ধরনের দ্রব্যাদি বিমানে করে কেউ নিয়ে গেলে বহনকারীকে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হতো।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম একটি বেসরকারি এয়ারওয়েজের পরিচালক ছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ঢাকা বিমানবন্দরে স্ক্যানিংয়ে এসব দ্রব্য অবশ্যই ধরা পড়বে, তারপরেও কোনো ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর ব্যাগে এমন কিছু থেকে গেলে অন্য দেশে গেলেই গ্রেফতার হয়ে যেতে হতো।

“এসব ক্ষেত্রে যে দেশ থেকে এভাবে যাবে সেই দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আরেকজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলছেন, রবিবারের ঘটনায় ভিআইপি টার্মিনালে ঢুকতেই যে চেক করা হয়, সেখানে কেন ঠিকমতো চেক হলো না-সেটিই বড় প্রশ্ন।

“সাধারণত একাধিকবার চেক করা হয়। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছে । বোর্ডিং ব্রিজে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছে। তাই প্রসেস ঠিক ছিলো। কিন্তু পরে বা অন্য দেশে গিয়ে চিহ্নিত হলে দায়টা ঢাকা বিমানবন্দরের সিকিউরিটির হতো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) বিমানবন্দরের জন্য সেবা কার্যক্রম ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো মনিটর করে থাকে। শেষ পর্যন্ত বিমানে ওই ধরনের দ্রব্য নিয়ে কেউ উঠলে পরে তা সংস্থাটির নজরে আসতো।

আর এ ধরনের ঘটনায় সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো ও নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারতো, বলছিলেন মি. আলম।

আসিফ মাহমুদের ব্যাখ্যা

আসিফ মাহমুদের পূর্ণ ব্যাখ্যা

ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ তার লিখিত ব্যাখ্যায় বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তার লাইসেন্স করা বৈধ অস্ত্র আছে।

“গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের উপরে যেভাবে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে কয়েকদফা তাতে রাখাটাই স্বাভাবিক। যখন সরকারি প্রোটোকল বা সিকিউরিটি থাকে না তখন নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে লাইসেন্স অস্ত্র রাখা,” বলেছেন তিনি।

ওই ব্যাখ্যায় তিনি জানান, মরক্কোর মারাকেশে অনুষ্ঠিতব্য ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের জন্য আজ (রবিবার) ভোর ৬ টা ৫০ মিনিটে তার ফ্লাইট ছিল।

“ভোরে প্যাকিং করার সময় অস্ত্র সহ একটা ম্যাগাজিন রেখে আসলেও ভুল বশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। যেটা স্ক্যানে আসার পর আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে আসি। বিষয়টি সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল। শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কি করবো ভাই? ইন্টেনশন থাকলে অবশ্যই অস্ত্র রেখে আসতাম না। এখানে অবৈধ কিছু না থাকলেও অনেকের জন্যই এটা আলোচনার খোরাক বটে,” বলেছেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে অনেকে অভিযোগ করেছেন এ ঘটনায় সংবাদমাধ্যমগুলোকে চাপ দিয়ে নিউজ করাতে বাধা দেয়া হয়েছে, যা মি. মাহমুদ অস্বীকার করেছেন।

“চাপ দিয়ে নিউজ সরানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ঘটনার পর আমি টিমসহ টানা ১০ ঘণ্টা ফ্লাইটে ছিলাম। ট্রানজিটে নেমেও দীর্ঘক্ষণ পর অনলাইনে এসে দেখতে পাচ্ছি যে এতকিছু ঘটেছে। নাগরিক হিসেবে আপনারও যদি নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে, যথাযথ নিয়ম ফলো করে আপনিও অস্ত্রের লাইসেন্স করতে পারেন,” তার দেয়া ব্যাখ্যায় বলেছেন মি. মাহমুদ।

এই ইস্যুতে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ”একটি পিস্তলের খালি একটি ম্যাগাজিন ছিল। সেটি ভুলে রয়ে গিয়েছিল। এটা আসলে ভুলেই হয়েছে। অনেক সময় এমন হয় যে— আপনি একটা চশমা নিয়ে যাবেন কিন্তু চশমা না নিয়ে মোবাইল নিয়ে রওনা হয়ে গেছেন। এটা জাস্ট একটা ভুল। উনি যদি আগে জানতে পারতেন তাহলে কোনো অবস্থাতেই এটা নিতেন না।”

কীভাবে বিমানবন্দরের স্ক্যানিং পার হয়ে গেল, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নেতা হলে অনেক সময় বিমানবন্দরে অন্যদের থেকে কিছুটা প্রিভিলেজ পায়।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ভবিষ্যতে কারো ক্ষেত্রে যেন বিমানবন্দরে বিশেষ সুবিধা দেয়া না হয়, সবার ক্ষেত্রে আইন যেন একইভাবে প্রয়োগ করে সে জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

বিবিসি নিউজ বাংলা