নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়া – সিনেমার জম্বি আসলে কী?
“২৮ ডেজ লেটার” (২০০২) সিনেমার জম্বিরা আসলে প্রচলিত অর্থে জম্বি নয়। ওরা মরেনি এবং পুনরায় জীবিত হয়নি, বরং “রেজ ভাইরাসে” আক্রান্ত হয়ে খুনে উন্মাদে পরিণত হয়েছে। তবুও, এরা জম্বির মতোই অন্ধ, হিংস্র এবং নিস্তেজ বিবেকের।
ড্যানি বয়েল পরিচালিত ও অ্যালেক্স গারল্যান্ড রচিত এই সিনেমা জম্বি ঘরানাকে আধুনিক সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে এনেছে। এর প্রভাব “ডন অফ দ্য ডেড”, “শনের অফ দ্য ডেড”, “দ্য ওয়াকিং ডেড”, “দ্য লাস্ট অফ আস”-এর মতো সিনেমা, টিভি সিরিজ আর গেমে স্পষ্ট।
জম্বির ব্যঙ্গ: সমকালীন বিভাজন আর ভয়
হাইতিয়ান লোককাহিনী থেকে উৎপন্ন জম্বি চরিত্র ২১শ শতকে নতুন তাৎপর্য পেয়েছে। এগুলো এখন “আমরা বনাম ওরা” মানসিকতা প্রকাশ করে—যেখানে দর্শক নিজেদের বীর বিদ্রোহী ভাবেন আর প্রতিপক্ষকে মস্তিষ্কহীন হিংস্র শত্রু হিসেবে কল্পনা করেন।
এ ছাড়া, সমাজের চুক্তি ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও জম্বি আখ্যানকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। প্রথম সিনেমার ফাঁকা রাস্তাগুলোর শট কোভিড-১৯ মহামারির সময়ের নগর দৃশ্যকে অজান্তেই ইঙ্গিত করেছিল।
“২৮ ইয়ার্স লেটার”: নতুন পর্বে ব্রেক্সিটের ছায়া
২০০৭ সালে “২৮ উইক্স লেটার” করেছিলেন অন্য নির্মাতারা। কিন্তু ২০২৫ সালে মুক্তি পাওয়া “২৮ ইয়ার্স লেটার”-এ বয়েল ও গারল্যান্ড আবার একসাথে কাজ করেছেন। দুই দশক ধরে জম্বি গল্পের বন্যা চললেও এই নতুন সিনেমা আলাদা ও নতুন রকম।
নির্মাতারা স্বীকার করেছেন যে কোভিড-১৯ এর অভিজ্ঞতা এবং ব্রেক্সিট-পরবর্তী ব্রিটেনের বিচ্ছিন্নতা তাদের ভাবনা গঠন করেছে। নতুন সিনেমায় দেখা যায়—বাকি বিশ্ব ভাইরাসমুক্ত হলেও ব্রিটেন এখনো রেজ ভাইরাসে আক্রান্ত। মূল ভূখণ্ড কোয়ারেন্টিনে; ন্যাটো নৌকাগুলো পালানোর পথ বন্ধ করে রাখে। তবে উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের ছোট একটি দ্বীপে কেউ সংক্রমিত নয়।
গল্পের মূল চরিত্র: বেঁচে থাকার লড়াই
এই দ্বীপের কৃষিজীবী জনগণকে মূল ভূখণ্ডে গিয়ে তীর-ধনুক দিয়ে আক্রান্তদের শিকার করতে হয়। সিনেমার কেন্দ্রে আছে এক বাবা (অ্যারন টেলর-জনসন) যিনি তাঁর ১২ বছরের ছেলেকে (আলফি উইলিয়ামস) প্রথম শিকারে নিয়ে যান। ছেলেটি দূরে আগুন দেখে শোনে যে একজন ডাক্তার (রালফ ফাইনস) সেখানে আছেন—যিনি হয়তো তার মুমূর্ষু মাকে (জোডি কমার) বাঁচাতে পারবেন।
সিনেমার বার্তা: ব্রিটেন কি এমনটাই চায়?
“২৮ ইয়ার্স লেটার” কেবল ভয়ঙ্কর দৌড় আর রক্তাক্ত মৃত্যু নয়—এটি এক চতুর রাজনৈতিক ব্যঙ্গ। বয়েল আর গারল্যান্ড যেন জিজ্ঞেস করছেন—এটাই কি ব্রিটেনের নাগরিকেরা চেয়েছিল? এক বিচ্ছিন্ন, সামরিককরণে আচ্ছন্ন, সরল কিন্তু সহিংস সমাজ?
মজার বিষয় হলো, সিনেমার পোস্ট-সভ্যতা গ্রামাঞ্চল কোনো শুষ্ক মরুভূমি নয়, বরং শিকারে পরিপূর্ণ সবুজ ভূমি—যেখানে হরিণ নির্ভয়ে ঘোরে। একদিকে এই “সবুজ ও মনোরম” ভূমি, অন্যদিকে সর্বত্র হিংস্র দানবের ভয়।
“২৮ ইয়ার্স লেটার” জম্বি ঘরানাকে ব্যবহার করে ব্রিটেনের সমকালীন বিভাজন, জাতীয়তাবাদী অহং আর বিচ্ছিন্নতার সমস্যাকে ব্যঙ্গ করে দেখায়। দর্শককে ভাবায়—আমরা কি সত্যিই এমন এক সমাজ চাই?