১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৪)

যুদ্ধের সময় উপস্থিত হলে জোরালো মদ দিয়ে এদের মত্ত করা হত, আর তখন বিপক্ষের শত্রুদলে এরা ঝড়ের মত পড়ে সমস্ত ধ্বংস করত।

হর্ষবর্ধন হিউ এনচাঙের কী রকম সাহায্যকারী বন্ধু ছিলেন আর হিউএনচাঙ তাঁর কী রকম আন্তরিক গুণগ্রাহী আর ভক্ত ছিলেন, তা পরে দেখা যাবে। তবু হিউএনচাঙ পুলকেশিনের পরাক্রম বর্ণনা করতে কৃপণতা করেন নি। তিনি বলেছেন, পুলকেশিনের ধর্মমত উদার ও গভীর, তাঁর রাজ্য বহুদূরব্যাপী। তাঁর প্রজারা তাঁর অনুরক্ত, সেবাপরায়ণ। তিনি সমরপ্রিয় আর সমরের গৌরবকেই তিনি প্রধান মনে করেন। সেই জন্যেই তাঁর রাজ্যে পদাতিক আর অশ্বারোহী সৈনিকদের সমরোপ-যোগী সাজসজ্জার বিষয়ে খুব বেশী লক্ষ্য রাখা হয় আর সামরিক নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে পালিত হয়।

হিউএনচাঙ আরও লিখেছেন এই রাষ্ট্রের কয়েক শত অসমসাহসিক যোদ্ধা আছে। প্রত্যেকবার যুদ্ধে যাবার আগে তারা মদ্য পান করে এ রকম মত্ত হয় যে, সে সময়ে এদের এক একজন এক-একটা বর্শা হাতে করে শত্রুর দশ হাজার সৈন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। এ অবস্থায় তার পথরোধকারী যে-কোনো লোককে যদি সে হত্যা করে, তা হলেও আইনত তার কোনো শাস্তি হয় না। যুদ্ধের সময়ে এই বীরগণ দামামার শব্দে সব সৈন্যদলের সম্মুখে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ করে। এ ছাড়া মহারাষ্ট্ররাজ কয়েক শত হিংস্র হাতী তাঁর পিলখানায় রাখতেন।

যুদ্ধের সময় উপস্থিত হলে জোরালো মদ দিয়ে এদের মত্ত করা হত, আর তখন বিপক্ষের শত্রুদলে এরা ঝড়ের মত পড়ে সমস্ত ধ্বংস করত। হিউএনচাঙ বলেন, বর্তমান সময়ে মহারাজ হর্ষ পূব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত দেশ জয় করেছেন। সীমানার বাইরের জাতিরাও তাঁর ভয়ে কম্পমান, কেবল এই জাতিই তাঁর বশীভূত হয় নি! যদিও তিনি অনেকবার স্বয়ং পঞ্চভারতের সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে এদের বিরুদ্ধে এসেছেন, তবুও কখনই তিনি এদের হটাতে পারেন নি। হিউএনচাঙ এদের যুদ্ধের বিষয়েই শুধু বলেন নি। তিনি বলেন, অধ্যয়নে অধিবাসীদের প্রবল অনুরাগ।

‘চালুক্যরা হিন্দু শৈব ছিলেন, তবে ভারতের রীতি অনুসারে বৌদ্ধরাও এখানে শান্তিতে বাস করত। হিউএনচাঙ বলেন, ‘কোকোন্ আর মহারাষ্ট্রে দুশো বৌদ্ধ মঠ আর অনেক শত দেবমন্দির আছে।’

হিউ এনচাঙ ৬৪১ খৃস্টাব্দের বর্ষাকালটা সম্ভবত পুলকেশিনের রাজধানী নাসিকে কাটিয়েছিলেন। হিউ এনচাঙ যে সময়ে মহারাষ্ট্র দেশে এসেছিলেন সেই সময়েই এদেশের দক্ষ কারিগররা গুহা-ভাস্কর্যের চমৎকার নিদর্শন নির্মাণ করছিলেন। ‘বাতাশি’ বা ‘বাদামি’র ‘মালেগিত্তি’ শিবালয় ইত্যাদি, এলোরার ‘রারণ কা খই,’ ‘ধুমার লেনা’, ‘রামেশ্বরম’ ইত্যাদি মূর্তিখোদিত গুহাগুলি এই সময়েই নির্মিত হয়।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)

 

জনপ্রিয় সংবাদ

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৪)

০৯:০০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

যুদ্ধের সময় উপস্থিত হলে জোরালো মদ দিয়ে এদের মত্ত করা হত, আর তখন বিপক্ষের শত্রুদলে এরা ঝড়ের মত পড়ে সমস্ত ধ্বংস করত।

হর্ষবর্ধন হিউ এনচাঙের কী রকম সাহায্যকারী বন্ধু ছিলেন আর হিউএনচাঙ তাঁর কী রকম আন্তরিক গুণগ্রাহী আর ভক্ত ছিলেন, তা পরে দেখা যাবে। তবু হিউএনচাঙ পুলকেশিনের পরাক্রম বর্ণনা করতে কৃপণতা করেন নি। তিনি বলেছেন, পুলকেশিনের ধর্মমত উদার ও গভীর, তাঁর রাজ্য বহুদূরব্যাপী। তাঁর প্রজারা তাঁর অনুরক্ত, সেবাপরায়ণ। তিনি সমরপ্রিয় আর সমরের গৌরবকেই তিনি প্রধান মনে করেন। সেই জন্যেই তাঁর রাজ্যে পদাতিক আর অশ্বারোহী সৈনিকদের সমরোপ-যোগী সাজসজ্জার বিষয়ে খুব বেশী লক্ষ্য রাখা হয় আর সামরিক নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে পালিত হয়।

হিউএনচাঙ আরও লিখেছেন এই রাষ্ট্রের কয়েক শত অসমসাহসিক যোদ্ধা আছে। প্রত্যেকবার যুদ্ধে যাবার আগে তারা মদ্য পান করে এ রকম মত্ত হয় যে, সে সময়ে এদের এক একজন এক-একটা বর্শা হাতে করে শত্রুর দশ হাজার সৈন্যকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। এ অবস্থায় তার পথরোধকারী যে-কোনো লোককে যদি সে হত্যা করে, তা হলেও আইনত তার কোনো শাস্তি হয় না। যুদ্ধের সময়ে এই বীরগণ দামামার শব্দে সব সৈন্যদলের সম্মুখে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ করে। এ ছাড়া মহারাষ্ট্ররাজ কয়েক শত হিংস্র হাতী তাঁর পিলখানায় রাখতেন।

যুদ্ধের সময় উপস্থিত হলে জোরালো মদ দিয়ে এদের মত্ত করা হত, আর তখন বিপক্ষের শত্রুদলে এরা ঝড়ের মত পড়ে সমস্ত ধ্বংস করত। হিউএনচাঙ বলেন, বর্তমান সময়ে মহারাজ হর্ষ পূব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত দেশ জয় করেছেন। সীমানার বাইরের জাতিরাও তাঁর ভয়ে কম্পমান, কেবল এই জাতিই তাঁর বশীভূত হয় নি! যদিও তিনি অনেকবার স্বয়ং পঞ্চভারতের সমস্ত সৈন্যদল নিয়ে এদের বিরুদ্ধে এসেছেন, তবুও কখনই তিনি এদের হটাতে পারেন নি। হিউএনচাঙ এদের যুদ্ধের বিষয়েই শুধু বলেন নি। তিনি বলেন, অধ্যয়নে অধিবাসীদের প্রবল অনুরাগ।

‘চালুক্যরা হিন্দু শৈব ছিলেন, তবে ভারতের রীতি অনুসারে বৌদ্ধরাও এখানে শান্তিতে বাস করত। হিউএনচাঙ বলেন, ‘কোকোন্ আর মহারাষ্ট্রে দুশো বৌদ্ধ মঠ আর অনেক শত দেবমন্দির আছে।’

হিউ এনচাঙ ৬৪১ খৃস্টাব্দের বর্ষাকালটা সম্ভবত পুলকেশিনের রাজধানী নাসিকে কাটিয়েছিলেন। হিউ এনচাঙ যে সময়ে মহারাষ্ট্র দেশে এসেছিলেন সেই সময়েই এদেশের দক্ষ কারিগররা গুহা-ভাস্কর্যের চমৎকার নিদর্শন নির্মাণ করছিলেন। ‘বাতাশি’ বা ‘বাদামি’র ‘মালেগিত্তি’ শিবালয় ইত্যাদি, এলোরার ‘রারণ কা খই,’ ‘ধুমার লেনা’, ‘রামেশ্বরম’ ইত্যাদি মূর্তিখোদিত গুহাগুলি এই সময়েই নির্মিত হয়।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)