০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)

বিখ্যাত সম্রাট পুলকেশিন উত্তর-ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধনের প্রত্যেক আক্রমণ রোধ করে তাঁর দাক্ষিণাত্যে অগ্রসরের চেষ্ট। ব্যর্থ করে দেন।

হিউ এনচাঙ ৬৪০ খৃস্টাব্দে পল্লভদেশে অনেকদিন কাটান।কাঞ্চীপুরে তিনি তাঁর গুরুর-গুরু মহাযানী দার্শনিকপ্রবর ধর্মপালের স্মরণচিহ্ন দেখেন। হিউএনচাঙ বলেন যে, ধর্মপাল কাঞ্চীপুরের এক রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ প্রত্যাখ্যান করে ধর্মজীবন অবলম্বন করেছিলেন।

যাহোক এখানে এসে হিউএনচাঙ যে খবর পেলেন, তাতে তাঁকে সিংহল যাবার আশা ত্যাগ করতে হল। তিনি শুনলেন যে, এ সময়ে সিংহলে গৃতযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ, দুইই আরম্ভ হয়েছে। এমন কি, হিউএনচাঙের কাঞ্চীপুরে অবস্থানের সময়েই জনকতক ভিক্ষু সিংহল থেকে পালিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন, আর তাঁরা হিউএনচাঙকে সিংহল যাওয়ার সংকল্প থেকে নিরস্ত করলেন।

অগত্যা হিউ এনচাঙ সিংহল যাওয়ার সংকল্প ত্যাগ করে দাক্ষিণাত্য পরিক্রমণেই অগ্রসর হলেন।

ফিরবার পথে হিউএনচাঙ আরব্যোপসাগরের তীরে কোন্কান্ ও মহারাষ্ট্র প্রদেশ পার হয়ে আসেন। হিউ এনচাঙ এদেশের নির্ভুল বিবরণ দিয়েছেন। সমুদ্রের উপকূল আর ঘাটপর্বত থাকায় এদেশের জল-হাওয়া খুব গরম নয়। যুদ্ধপ্রিয় মারাঠাদের তিনি বিবরণ দিয়েছেন-‘অধিবাসীরা দীর্ঘকায়; আর সরল প্রকৃতি হলেও এরা খুব গর্বিত আর কোপনস্বভাব। এরা যশ অন্বেষণে আর কর্তব্যে দৃঢ়। মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে।

এদের কেউ উপকার করলে এরা খুবই কৃতজ্ঞ হয়, কিন্তু কেউ অপকার করলে এদের প্রতিহিংসা অব্যর্থ। অপমানের প্রতিশোধ নিতে এরা জীবন তুচ্ছ জ্ঞান করে। কিন্তু বিপদে কেউ সাহায্যপ্রার্থী হলে এরা নিজের প্রয়োজন তুচ্ছ জ্ঞান করে সাহায্য করে। কোনো লোকের উপর প্রতিশোধ নিতে হলে শত্রুকে এরা আগে সতর্ক করে। তার পর দুই পক্ষই প্রস্তুত হয়ে বর্শা হাতে নিয়ে অগ্রসর হয়। যুদ্ধে পলাতককে এরা অনুসরণ করে কিন্তু শরণার্থীকে হত্যা করে না।

নিজেদের কোনো সেনাপতি যদি যুদ্ধে হেরে যায় তা হলে তার কোনো দৈহিক শাস্তি হয় না; কেবল তাকে স্ত্রীলোকের পরিচ্ছদ পরিয়ে দেওয়া হয়। তার ফলে অনেক সময় অপমান থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে সে আত্মহত্যা করে।

কিন্তু মহারাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্রকুটরা এসময়ে চালুক্যবংশীয় সম্রাট দ্বিতীয় পুলকেশিনের অধীন ছিলেন। এই বিখ্যাত সম্রাট পুলকেশিন উত্তর-ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধনের প্রত্যেক আক্রমণ রোধ করে তাঁর দাক্ষিণাত্যে অগ্রসরের চেষ্ট। ব্যর্থ করে দেন। নর্মদা থেকে কাবেরী পর্যন্ত সমস্ত দক্ষিণভারত এর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইনিই আবার পরে পল্লভবংশীয় নরসিংহ বর্মণ দ্বারা পরাজিত হন, সে কথা আগেই বলেছি। হিউ এনচাঙ যখন মহারাষ্ট্র দেশে আসেন, তখন পুলকেশিনের সমৃদ্ধির চরম অবস্থা।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩৩)

০৯:০০:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

বিখ্যাত সম্রাট পুলকেশিন উত্তর-ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধনের প্রত্যেক আক্রমণ রোধ করে তাঁর দাক্ষিণাত্যে অগ্রসরের চেষ্ট। ব্যর্থ করে দেন।

হিউ এনচাঙ ৬৪০ খৃস্টাব্দে পল্লভদেশে অনেকদিন কাটান।কাঞ্চীপুরে তিনি তাঁর গুরুর-গুরু মহাযানী দার্শনিকপ্রবর ধর্মপালের স্মরণচিহ্ন দেখেন। হিউএনচাঙ বলেন যে, ধর্মপাল কাঞ্চীপুরের এক রাজকন্যার সঙ্গে বিবাহ প্রত্যাখ্যান করে ধর্মজীবন অবলম্বন করেছিলেন।

যাহোক এখানে এসে হিউএনচাঙ যে খবর পেলেন, তাতে তাঁকে সিংহল যাবার আশা ত্যাগ করতে হল। তিনি শুনলেন যে, এ সময়ে সিংহলে গৃতযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ, দুইই আরম্ভ হয়েছে। এমন কি, হিউএনচাঙের কাঞ্চীপুরে অবস্থানের সময়েই জনকতক ভিক্ষু সিংহল থেকে পালিয়ে সেখানে উপস্থিত হলেন, আর তাঁরা হিউএনচাঙকে সিংহল যাওয়ার সংকল্প থেকে নিরস্ত করলেন।

অগত্যা হিউ এনচাঙ সিংহল যাওয়ার সংকল্প ত্যাগ করে দাক্ষিণাত্য পরিক্রমণেই অগ্রসর হলেন।

ফিরবার পথে হিউএনচাঙ আরব্যোপসাগরের তীরে কোন্কান্ ও মহারাষ্ট্র প্রদেশ পার হয়ে আসেন। হিউ এনচাঙ এদেশের নির্ভুল বিবরণ দিয়েছেন। সমুদ্রের উপকূল আর ঘাটপর্বত থাকায় এদেশের জল-হাওয়া খুব গরম নয়। যুদ্ধপ্রিয় মারাঠাদের তিনি বিবরণ দিয়েছেন-‘অধিবাসীরা দীর্ঘকায়; আর সরল প্রকৃতি হলেও এরা খুব গর্বিত আর কোপনস্বভাব। এরা যশ অন্বেষণে আর কর্তব্যে দৃঢ়। মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে।

এদের কেউ উপকার করলে এরা খুবই কৃতজ্ঞ হয়, কিন্তু কেউ অপকার করলে এদের প্রতিহিংসা অব্যর্থ। অপমানের প্রতিশোধ নিতে এরা জীবন তুচ্ছ জ্ঞান করে। কিন্তু বিপদে কেউ সাহায্যপ্রার্থী হলে এরা নিজের প্রয়োজন তুচ্ছ জ্ঞান করে সাহায্য করে। কোনো লোকের উপর প্রতিশোধ নিতে হলে শত্রুকে এরা আগে সতর্ক করে। তার পর দুই পক্ষই প্রস্তুত হয়ে বর্শা হাতে নিয়ে অগ্রসর হয়। যুদ্ধে পলাতককে এরা অনুসরণ করে কিন্তু শরণার্থীকে হত্যা করে না।

নিজেদের কোনো সেনাপতি যদি যুদ্ধে হেরে যায় তা হলে তার কোনো দৈহিক শাস্তি হয় না; কেবল তাকে স্ত্রীলোকের পরিচ্ছদ পরিয়ে দেওয়া হয়। তার ফলে অনেক সময় অপমান থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে সে আত্মহত্যা করে।

কিন্তু মহারাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্রকুটরা এসময়ে চালুক্যবংশীয় সম্রাট দ্বিতীয় পুলকেশিনের অধীন ছিলেন। এই বিখ্যাত সম্রাট পুলকেশিন উত্তর-ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধনের প্রত্যেক আক্রমণ রোধ করে তাঁর দাক্ষিণাত্যে অগ্রসরের চেষ্ট। ব্যর্থ করে দেন। নর্মদা থেকে কাবেরী পর্যন্ত সমস্ত দক্ষিণভারত এর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইনিই আবার পরে পল্লভবংশীয় নরসিংহ বর্মণ দ্বারা পরাজিত হন, সে কথা আগেই বলেছি। হিউ এনচাঙ যখন মহারাষ্ট্র দেশে আসেন, তখন পুলকেশিনের সমৃদ্ধির চরম অবস্থা।

(চলবে)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২)

হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২)