বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘গঙ্গাবতরণ’ যখন খোদা হয় সে সময় নিজেই উপস্থিত ছিলেন।
কোশল থেকে হিউ এনচাঙ আবার দক্ষিণ দিকে এক দ আশি মাইল অরণ্য ইত্যাদি পার হয়ে অন্ধ্রদেশে এলেন। দক্ষিণ-কোশল দেখবার জন্যে হিউ এনচান্ডের অন্তত দুইশত মাইল দুর্গম পথ বেশী অতিক্রম করতে হয়েছিল। বোধিসত্ত্ব (অর্থং) রূপে পূজিত অসামান্ত মহাযানী পণ্ডিত নাগার্জুনের প্রতি তাঁর কি রকম ভক্তি ছিল, তা এর থেকে বোঝা যায়।
অস্ত্রদেশ গোদাবরী ও কৃষ্ণা নদীর মধ্যে আধুনিক তেলিঙ্গানায় ছিল। এর অল্প কিছুদিন আগে চালুক্য বংশীয়েরা এই প্রদেশ মহারাষ্ট্রীয়দের কাছ থেকে জয় করে নিয়ে এলুরা হ্রদের তীরে বেংগিপুরায় রাজধানী স্থাপন করেছিল।
প্রাচীন অস্ত্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ, যেখানে কৃষ্ণা নদীর দুই তীরে বেজওয়াদা ও অমরাবতী ছিল, সে অংশ সপ্তম খৃস্টাব্দে ধনকটক নামে অন্ত রাজত্ব ছিল। অমরাবতী থেকে উজানে আর কৃষ্ণা নদীর দক্ষিণ তীরে গোলি আর নাগার্জু নিকুণ্ডা নামক পুরাতত্ত্বে প্রসিদ্ধ দুই স্থান ছিল।
অমরাবতী, গোলি, নাগার্জু নিকুণ্ডায় দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ ও পঞ্চম খৃস্টাব্দের হিন্দু শিল্পের অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এর নমুনা লণ্ডন, প্যারিস আর মাদ্রাজ যাদুঘরে রক্ষিত আছে। সামান্ত কিছু কিছু কলকাতার যাদুঘরেও আছে।
হিউএনচাঙ অময়াবতীর বিহারগুলি দেখে দক্ষিণ-পশ্চিমে নাগার্জু-নিকুণ্ডা হয়ে পেনার নদী ধরে দক্ষিণে কর্নাট প্রদেশে এলেন। এই তামিল প্রদেশকেই তিনি দ্রাবিড় দেশ বলেছেন। এই সময়ে এখানে পল্লভবংশীয়েরা রাজত্ব করছিলেন। তাঁদের রাজধানী ছিল কাঞ্চীপুরে (আধুনিক কাঞ্জিভেরাম), আর মহাবলীপুরনে এ’দের প্রধান বন্দর ছিল।
এই পল্লভবংশীয়েরা খুব পরাক্রমশালী ছিল। হিউএনচান্ডের সময়ে (৬৪ খৃস্টাব্দে) যিনি রাজা ছিলেন, নরসিংহ বর্মন, তিনি পরে ৬৪২ খৃস্টাব্দে চালুক্যবংশীয় পরাক্রান্ত রাজা দ্বিতীয় পুলকেশিনকে জয় ও বধ করেন। এদের রাজত্বকালে হিন্দু ভাস্কর্যেরও খুব উন্নতি হয়েছিল।
হিউএনচাঙ নিশ্চয়ই এর কিছু কিছু দেখেছিলেন। মহাবলীপুরমের ভাস্কর্যের মধ্যে অন্তত দুইটা- ‘যমপুরী’ আর ‘বলদলন্ধর’- গুহায় বিষ্ণুর অবতারগুলির যে ভাস্কর্য আছে তা সপ্তম শতাব্দীতেই তৈয়ারী হয়। হয়তো তিনি বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘গঙ্গাবতরণ’ যখন খোদা হয় সে সময় নিজেই উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য গোঁড়া বৌদ্ধ হিউএনচাও এসমস্ত হিন্দুমুতি দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন কি না বলা কঠিন।
(চলবে)