সংগীতের শক্তি নতুন রূপে
‘সংগীত হলো মানবতার সার্বজনীন ভাষা’—এই কথাটি নতুনভাবে প্রমাণ করে দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনের ১২ বছর বয়সী এক কিশোর। তার নাম যুবি আগরওয়াল। এবার সে তার সংগীত প্রতিভা ব্যবহার করছে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী—কুকুর-বিড়ালদের মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার কাজে।
সংগীতশিল্প থেকে প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা
মাত্র ৪ বছর বয়সে কীবোর্ড বাজানো শুরু করে যুবি। নিজের পরিবারের গোল্ডেন ডুডল জাতের কুকুর বোজোকে সংগীত শুনিয়ে সে প্রথম বুঝতে পারে যে সংগীত পশুদের শান্ত করতে পারে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তার মাথায় আসে আশ্রয়কেন্দ্রের প্রাণীদের জন্য সংগীত বাজানোর উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা।
২০২৩ সালে, মা-বাবার সহযোগিতায় সে গড়ে তোলে একটি অলাভজনক সংগঠন—‘ওয়াইল্ড টিউনস’। এই সংগঠনের মাধ্যমে সে বিভিন্ন সংগীতশিল্পী ও গায়কদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল গড়ে তোলে, যারা হিউস্টন, নিউ জার্সি এবং ডেনভারের নয়টি প্রাণী আশ্রয়কেন্দ্রে সংগীত পরিবেশন করে। বর্তমানে এই দলে ১০০ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক আছেন, যাদের বয়স ও দক্ষতা নানা রকম।

যেভাবে কাজ করছে সংগীত
ডেনভার এনিম্যাল শেল্টারে কীবোর্ড বাজিয়ে বিটলসের ‘হে জুড’ বা এড শিরানের ‘পারফেক্ট’ পরিবেশন করার সময় যুবি বলেছে, “গানের কথা না বুঝলেও সুর, ছন্দ ও হারমোনির মধ্য দিয়েই সংগীত প্রাণীদের স্পর্শ করে, এমনকি মানুষ-পশুর সীমারেখাও অতিক্রম করতে পারে।”
একটি খুদে পুডল কুকুর ‘পিতুকা’র সামনে সংগীত পরিবেশনের সময় যুবি লক্ষ্য করেছে, শুরুতে প্রাণীরা উত্তেজিত থাকলেও কয়েক মিনিট বাজানোর পরই তারা শান্ত হয়ে যায়। অনেকে তো ঘুমিয়ে পড়ে।
সে আরও মনে করে, একবার হিউস্টনে ‘পেনেলোপি’ নামের এক উদ্ধারকৃত কুকুর তার খাঁচা থেকেই বের হতো না। কিন্তু যুবির বাজনার পরই সে যুবিকে চেটে দেয় এবং কানের পাশ দিয়ে আদর করতে শুরু করে।
ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন সাড়া
ডেনভারে যুবির পাশে আরেক স্বেচ্ছাসেবক সারা ম্যাকডোনার মজার একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। তিনি মজার ছলে বলেন, “আমি যখন আমার বাঁশিতে মোৎসার্ট বা বাখ বাজাই, তখন এক বছরের এক বক্সার কুকুর ‘ম্যাক্স’ উচ্চ স্বরে মাথা কাত করে তাকায়!”
সারা একজন পেশাদার সংগীতশিল্পী, যিনি হিউস্টনে যুবির সঙ্গে পরিচিত হন এবং পরে ডেনভারে এসে এই উদ্যোগ চালু করেন। তিনি বলেন, “ছোট খাঁচায় থাকা প্রাণীদের জন্য এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং দত্তক নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে।”

বিজ্ঞান কী বলছে?
যদিও মানুষের উপর সংগীতের প্রভাব নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে, তবে পশুদের ওপর এর প্রভাব এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।
কয়েকটি গবেষণা বলছে, ক্লাসিকাল সংগীত কুকুরদের জন্য আরামদায়ক হতে পারে, বিশেষ করে তারা যখন পশু চিকিৎসাকেন্দ্র বা আশ্রয়কেন্দ্রে থাকে। তবে গবেষকরা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের হিউম্যান-অ্যানিমাল ইন্টারঅ্যাকশন শাখার প্রধান লরি কোগান বলেন, “আমরা প্রায়ই সহজ উত্তরের খোঁজ করি, যেমন সংগীত সব প্রাণীকে শান্ত করে—এটা আসলে এতটা সহজ নয়।”
তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিটি প্রাণীর ক্ষেত্রে আলাদাভাবে সংগীত প্রয়োগ করে দেখা উচিত—যদি সংগীত শুনে কোনো প্রাণী শান্ত হয়, তবে সেটিকে ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে দেখা যায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আশাবাদ
যুবি আগরওয়ালের জন্য সংগীত এখন কেবল আত্মতৃপ্তির মাধ্যম নয়, বরং একটি সামাজিক দায়িত্ব। ওয়াইল্ড টিউনস-কে সে একটি জাতীয় কর্মসূচিতে রূপ দিতে চায়। তার মতে, “এটা একটি দারুণ সুযোগ—যেখানে কেউ বিচার করছে না, অথচ সংগীত চর্চাও হচ্ছে এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়ছে।”
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ একদিকে যেমন আশ্রয়কেন্দ্রের প্রাণীদের মানসিক প্রশান্তি দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি নতুন প্রজন্মের সংগীতশিল্পীদেরও উৎসাহিত করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















