১২:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ে জট, দেশে ফেরা থামাচ্ছেন ভারতীয় কর্মীরা অ্যাশেজ ধরে রাখলো অস্ট্রেলিয়া মাত্র এগারো দিনে, কথিত দুর্বল দলেই ইংল্যান্ডকে ধস

পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস

২০২৫ সালে সোনার বাজারে নজিরবিহীন উল্লম্ফন দেখা গেছে। বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি, আর ডিসেম্বর নাগাদ এই বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ ক্রয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর প্রত্যাশা—এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবেই সোনার দাম এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বর্তমান দাম ও রেকর্ড ভাঙার ইতিহাস
২০২৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সোনার স্পট মূল্য প্রতি আউন্স চার হাজার চারশ পঁয়তাল্লিশ ডলারের বেশি ছুঁয়েছে, যা বছরের শুরুতে প্রায় আড়াই হাজার ডলারের কাছাকাছি ছিল। অক্টোবরে সোনা সর্বোচ্চ চার হাজার তিনশ একাশি ডলারে পৌঁছে নতুন রেকর্ড গড়ে। এর ফলে গত ৪৫ বছরের মধ্যে এটিই সোনার সবচেয়ে শক্তিশালী বার্ষিক পারফরম্যান্স হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পুরো বছর মিলিয়ে সোনার দাম বেড়েছে ৭৭ শতাংশের বেশি, যা ১৯৭৯ সালের পর সর্বোচ্চ।

২০২৬ সালের পূর্বাভাস
বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের শেষ প্রান্তিকে বা চতুর্থ প্রান্তিকে সোনার গড় দাম প্রতি আউন্স পাঁচ হাজার পঞ্চান্ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। তাদের মতে, চলমান প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সোনার এই ঊর্ধ্বগতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

দাম বৃদ্ধির পেছনের প্রধান কারণ
সোনার দাম বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত এবং সেই প্রত্যাশা। সুদহার কমলে সুদবিহীন সম্পদ হিসেবে সোনা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ তখন বন্ড বা সঞ্চয়ে বিনিয়োগের তুলনামূলক লাভ কমে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতি শূন্য দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ সুদহার কমলে সাধারণত সোনার দামে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত উল্লম্ফন দেখা যায়।

এই প্রত্যাশাই ২০২৫ সালে আগাম বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয়। বছরের শুরুতে সুদহার অপরিবর্তিত থাকলেও এপ্রিলের মধ্যেই সোনার দাম সাড়ে তিন হাজার ডলারে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নমনীয় বক্তব্য এবং শ্রমবাজারের দুর্বল ইঙ্গিত বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে সোনার দামে লাফ তৈরি করেছে।

ডলারের দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার সূচক প্রায় দশ শতাংশ কমেছে। এর ফলে ডলারে মূল্যায়িত নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার আকর্ষণ আরও বেড়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয় সোনার বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। চলতি বছরে প্রায় নয়শ পঞ্চাশ টন সোনা কেনা হয়েছে, যার বড় অংশ চীন, ভারত, রাশিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিল ও কাজাখস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কিনেছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয়শ চৌত্রিশ টন এবং অক্টোবরে আরও তিপ্পান্ন টন সোনা কেনা হয়, যা ডলার নির্ভরতা কমানোর প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ প্রবাহ
বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতির আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে সোনা ভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিলগুলোতেও বিনিয়োগ বেড়েছে। বড় তহবিল ব্যবস্থাপকরা গড়ে তাদের বিনিয়োগের অংশ বাড়িয়েছেন, ফলে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এই তহবিলগুলোর প্রবাহ।

মূল্যচিত্রের সংক্ষিপ্ত চিত্র
বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল প্রায় আড়াই হাজার ডলার। জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৪০ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে প্রায় ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে চার হাজার চারশ ডলারের ওপরে উঠে আসে। এই সময়ের মধ্যে সোনা শেয়ারবাজার ও অন্যান্য জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যমের তুলনায় অনেক ভালো ফল দিয়েছে।

সব মিলিয়ে বিশ্লেষকদের ধারণা, বর্তমান অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় সোনার প্রতি আগ্রহ কমার সম্ভাবনা কম। বরং ২০২৬ সালেও এই মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস

পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস

১০:৩০:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

২০২৫ সালে সোনার বাজারে নজিরবিহীন উল্লম্ফন দেখা গেছে। বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি, আর ডিসেম্বর নাগাদ এই বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ ক্রয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর প্রত্যাশা—এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবেই সোনার দাম এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

বর্তমান দাম ও রেকর্ড ভাঙার ইতিহাস
২০২৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সোনার স্পট মূল্য প্রতি আউন্স চার হাজার চারশ পঁয়তাল্লিশ ডলারের বেশি ছুঁয়েছে, যা বছরের শুরুতে প্রায় আড়াই হাজার ডলারের কাছাকাছি ছিল। অক্টোবরে সোনা সর্বোচ্চ চার হাজার তিনশ একাশি ডলারে পৌঁছে নতুন রেকর্ড গড়ে। এর ফলে গত ৪৫ বছরের মধ্যে এটিই সোনার সবচেয়ে শক্তিশালী বার্ষিক পারফরম্যান্স হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পুরো বছর মিলিয়ে সোনার দাম বেড়েছে ৭৭ শতাংশের বেশি, যা ১৯৭৯ সালের পর সর্বোচ্চ।

২০২৬ সালের পূর্বাভাস
বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের শেষ প্রান্তিকে বা চতুর্থ প্রান্তিকে সোনার গড় দাম প্রতি আউন্স পাঁচ হাজার পঞ্চান্ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। তাদের মতে, চলমান প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সোনার এই ঊর্ধ্বগতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

দাম বৃদ্ধির পেছনের প্রধান কারণ
সোনার দাম বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত এবং সেই প্রত্যাশা। সুদহার কমলে সুদবিহীন সম্পদ হিসেবে সোনা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, কারণ তখন বন্ড বা সঞ্চয়ে বিনিয়োগের তুলনামূলক লাভ কমে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতি শূন্য দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ সুদহার কমলে সাধারণত সোনার দামে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত উল্লম্ফন দেখা যায়।

এই প্রত্যাশাই ২০২৫ সালে আগাম বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেয়। বছরের শুরুতে সুদহার অপরিবর্তিত থাকলেও এপ্রিলের মধ্যেই সোনার দাম সাড়ে তিন হাজার ডলারে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নমনীয় বক্তব্য এবং শ্রমবাজারের দুর্বল ইঙ্গিত বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে সোনার দামে লাফ তৈরি করেছে।

ডলারের দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার সূচক প্রায় দশ শতাংশ কমেছে। এর ফলে ডলারে মূল্যায়িত নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার আকর্ষণ আরও বেড়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয় সোনার বাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। চলতি বছরে প্রায় নয়শ পঞ্চাশ টন সোনা কেনা হয়েছে, যার বড় অংশ চীন, ভারত, রাশিয়া, পোল্যান্ড, ব্রাজিল ও কাজাখস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কিনেছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয়শ চৌত্রিশ টন এবং অক্টোবরে আরও তিপ্পান্ন টন সোনা কেনা হয়, যা ডলার নির্ভরতা কমানোর প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগ প্রবাহ
বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতির আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে সোনা ভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিলগুলোতেও বিনিয়োগ বেড়েছে। বড় তহবিল ব্যবস্থাপকরা গড়ে তাদের বিনিয়োগের অংশ বাড়িয়েছেন, ফলে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এই তহবিলগুলোর প্রবাহ।

মূল্যচিত্রের সংক্ষিপ্ত চিত্র
বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল প্রায় আড়াই হাজার ডলার। জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৪০ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে প্রায় ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে চার হাজার চারশ ডলারের ওপরে উঠে আসে। এই সময়ের মধ্যে সোনা শেয়ারবাজার ও অন্যান্য জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যমের তুলনায় অনেক ভালো ফল দিয়েছে।

সব মিলিয়ে বিশ্লেষকদের ধারণা, বর্তমান অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় সোনার প্রতি আগ্রহ কমার সম্ভাবনা কম। বরং ২০২৬ সালেও এই মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।