০৯:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা সোশ্যাল মিডিয়া যাচাইয়ে জট, দেশে ফেরা থামাচ্ছেন ভারতীয় কর্মীরা অ্যাশেজ ধরে রাখলো অস্ট্রেলিয়া মাত্র এগারো দিনে, কথিত দুর্বল দলেই ইংল্যান্ডকে ধস গোপালগঞ্জে শেখ হাসিনার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী এবার বিএনপি-জামায়াত!

ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান

ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শহীদ ওসমান হাদির পরিবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে হাদির এক বোনকে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও একজন গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সরকারের নিরাপত্তা উদ্যোগের পটভূমি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা, আন্দোলনের সমন্বয়ক, সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা কয়েকজনকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে।

কারা পাচ্ছেন বা চেয়েছেন নিরাপত্তা
নিরাপত্তা পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আবেদনের ভিত্তিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন, জাফির তুহিন, জেপির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং এলডিপির সভাপতি কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমদসহ আরও কয়েকজনকে শিগগিরই গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে।

নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা শঙ্কা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা ধারাবাহিক হুমকির মধ্যে রয়েছেন।

হুমকি ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পলাতক নেতাকর্মীরা দেশ ও বিদেশ থেকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের হুমকি দিয়ে আসছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকেও হত্যার আগে দীর্ঘদিন বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। গত ১২ ডিসেম্বর তাকে গুলি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও পুলিশের অবস্থান
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকার অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের অস্ত্রধারী রক্ষী দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের চলাচল ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

সীমাবদ্ধতা ও আবেদন প্রক্রিয়া
ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখার সূত্র জানায়, জনবল সংকটের কারণে সবার জন্য গানম্যান দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক আবেদনকারী শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং ব্যক্তিগত যানবাহন না থাকায় গানম্যান দেওয়া বাস্তবসম্মত হচ্ছে না। তবে যাদের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হুমকি রয়েছে, তাদের অস্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লিখিত আবেদন ছাড়া কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। রোববার পর্যন্ত ১২ জন লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত আইজিপির বক্তব্য
অতিরিক্ত আইজিপি অপরাধ ও অপারেশন খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা ও সংসদ সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। আর যারা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চেয়েছেন, সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট

ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান

০৭:৫১:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শহীদ ওসমান হাদির পরিবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে হাদির এক বোনকে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ও একজন গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও সার্বক্ষণিক পুলিশি নজরদারি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

সরকারের নিরাপত্তা উদ্যোগের পটভূমি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা, আন্দোলনের সমন্বয়ক, সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা কয়েকজনকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে।

কারা পাচ্ছেন বা চেয়েছেন নিরাপত্তা
নিরাপত্তা পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, আবেদনের ভিত্তিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন, জাফির তুহিন, জেপির চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং এলডিপির সভাপতি কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমদসহ আরও কয়েকজনকে শিগগিরই গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে।

নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা শঙ্কা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা ধারাবাহিক হুমকির মধ্যে রয়েছেন।

হুমকি ও হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পলাতক নেতাকর্মীরা দেশ ও বিদেশ থেকে জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের হুমকি দিয়ে আসছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকেও হত্যার আগে দীর্ঘদিন বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। গত ১২ ডিসেম্বর তাকে গুলি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও পুলিশের অবস্থান
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে অগ্রাধিকার অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, যারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের অস্ত্রধারী রক্ষী দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের চলাচল ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

সীমাবদ্ধতা ও আবেদন প্রক্রিয়া
ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখার সূত্র জানায়, জনবল সংকটের কারণে সবার জন্য গানম্যান দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক আবেদনকারী শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং ব্যক্তিগত যানবাহন না থাকায় গানম্যান দেওয়া বাস্তবসম্মত হচ্ছে না। তবে যাদের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হুমকি রয়েছে, তাদের অস্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লিখিত আবেদন ছাড়া কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। রোববার পর্যন্ত ১২ জন লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে এবং বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত আইজিপির বক্তব্য
অতিরিক্ত আইজিপি অপরাধ ও অপারেশন খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা ও সংসদ সদস্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের গানম্যান দেওয়া হচ্ছে। আর যারা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চেয়েছেন, সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।