মাত্র এগারো দিনের মধ্যেই অ্যাশেজ ধরে রাখলো অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ শুরুর আগে যাদের বলা হচ্ছিল গত পনেরো বছরের সবচেয়ে দুর্বল অস্ট্রেলিয়ান দল, তারাই দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ইংল্যান্ডকে কার্যত ধরাশায়ী করে দিল। পার্থ, ব্রিসবেন আর অ্যাডিলেড মিলিয়ে তিন টেস্টেই দাপুটে পারফরম্যান্সে তিন শূন্যে এগিয়ে থেকেই ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করল স্বাগতিকরা।
সিরিজের শুরুতে আগুন জ্বালিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার এই দল নাকি পনেরো বছরে সবচেয়ে দুর্বল। অথচ সেই কথাই শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ানদের অনুপ্রেরণায় রূপ নেয়। অ্যাডিলেড টেস্টে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে ইংল্যান্ডের শেষ দিনের প্রত্যাবর্তনের আশা ভেঙে দেন মার্নাস লাবুশেন। ম্যাচ শেষে তিনি জানান, এমন মন্তব্য শোনা হয়তো কঠিন ছিল, কিন্তু তিন শূন্যতে এগিয়ে থাকা অবস্থানটা ভীষণ তৃপ্তির। তাঁর কণ্ঠে ছিল আরও বড় স্বপ্ন, পাঁচ শূন্যে সিরিজ শেষ করার ইচ্ছা।
অ্যাডিলেড টেস্টে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল ইংল্যান্ড। লক্ষ্য ছিল চারশ পঁয়ত্রিশ রান। শেষ পর্যন্ত তিনশ বায়ান্ন রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। এতে অস্ট্রেলিয়ার জয় আসে বিরাশি রানে। পুরো ম্যাচে অ্যাডিলেড ওভালে দর্শক উপস্থিতি ছিল দুই লক্ষ তেইশ হাজারের বেশি। ইংল্যান্ড সমর্থকদের বার্মি আর্মি শেষ সেশন পর্যন্ত গলা ফাটালেও শেষ হাসি হেসেছে অস্ট্রেলিয়াই।
এই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল কম নয়। অধিনায়ক প্যাট কামিন্স প্রথম দুই টেস্টে খেলতে পারেননি পিঠের চোটের কারণে। জশ হ্যাজেলউড পুরো সিরিজ থেকেই ছিটকে যান। ফলে শুরুতে মিচেল স্টার্কই ছিলেন নিয়মিত পেস আক্রমণের একমাত্র ভরসা। এমনকি অফ স্পিনার নাথান লায়ন বাদ পড়ায় বোলিং আক্রমণে অভিজ্ঞতার ঘাটতিও স্পষ্ট ছিল। তবু স্টার্ক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। দুটি ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন তিনি। অ্যাডিলেডে শেষ চার উইকেটের তিনটিই নেন স্টার্ক। সিরিজে তাঁর উইকেট সংখ্যা বাইশ, আর এই ক্যালেন্ডার বছরে একান্ন।

ব্যাটিংয়েও ছিল নানা প্রশ্ন। ওপেনার কে হবেন, তিন নম্বরে কে খেলবেন, এসব নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। পার্থ আর ব্রিসবেনে কামিন্সের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। কিন্তু অ্যাডিলেড টেস্টে মাথা ঘোরার সমস্যায় তিনি খেলতে পারেননি। তখনই দলে ফেরানো হয় উসমান খাজাকে। প্রথম ইনিংসে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে দলকে স্থিরতা দেন তিনি। প্রথম টেস্টে তাঁর চোটে ট্রাভিস হেড ওপেন করতে নামেন এবং সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতান। পরে অ্যাডিলেডে নিজের মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে করেন একশ সত্তর রান। ওপেনার হিসেবে জায়গাটাও নিজের করে নেন।
অধিনায়ক কামিন্স পরে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যের পেছনে মূল কারণ মানসিকতা। সামনে যা আছে সেটাই খেলার চেষ্টা করেন তাঁরা। কেউ না থাকলে অন্য কেউ দায়িত্ব নেয়। সমস্যা এলেও থেমে না থেকে পরের চ্যালেঞ্জে এগিয়ে যাওয়াই এই দলের শক্তি। তবে এই মানসিকতার আবার পরীক্ষা হবে মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে। সেখানে কামিন্স আর লায়নের খেলা নিয়ে শঙ্কা।
ম্যাচ শেষে ট্রাভিস হেড কে জিজ্ঞেস করা হয়, এই অস্ট্রেলিয়ান দলের অংশ হতে কেমন লাগে। তাঁর উত্তর ছিল খুবই সরল। অসাধারণ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















