১৮০১ খৃঃ অব্দে প্রাণকৃষ্ণ বোর্ড অব রেভিনিউর নিকট হইতে সুপ্রসিদ্ধ বাগওয়ান ও নলদী পরগণা ক্রয় করেন; এবং বীরভূম জেলার জোবীর ও শ্রীহাটির কিয়দংশ তাঁহার সময়ে ক্রীত হয়। প্রাণকৃষ্ণের সময়ে তাঁহাদের উন্নতি চরমসীমায় উপস্থিত হয়। প্রাণকৃষ্ণও অনেক সময়ে সংকার্য্যের অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন।
জোষ্ঠতাত ও পিতার পথানুসরণ করিয়া, তিনিও দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা, অতিথিসেবায় সর্ব্বদা মনোযোগ দিতেন। তিনি অনেক স্থানে দেবমন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়া, দেবসেবার সুবন্দোবস্ত করিয়াছেন। কান্দীর রাজবংশ চিরদিনই ধর্মানুরাগের জন্য বিখ্যাত। প্রাণকৃষ্ণের পুত্র কৃষ্ণচন্দ্র সিংহ সর্ব্বাপেক্ষা ধর্মানুরাগের পরিচয় দিয়া গিয়াছেন। কৃষ্ণচন্দ্রই সমগ্র উত্তর ভারতবর্ষে লালাবাবু নামে খ্যাত।
কৃষ্ণচন্দ্র প্রথমে বর্দ্ধমানের ম্যাজিস্ট্রেট কালেক্টর ও জজের আফিসের সেরেস্তাদারী কার্য্য করিতেন। তৎকালে সম্ভ্রান্তবংশীয় লোক ব্যতীত অপর কাহাকেও ঐরূপ পদে নিযুক্ত করা হইত না। সপ্তদশ বৎসর বয়সে তিনি উক্ত কার্য্যে নিযুক্ত হন। তাহার পর উড়িষ্যার বন্দোবস্তের সময় তিনি তথায় দেওয়ানের কার্য্য করিয়াছিলেন। উড়িষ্যায় তিনি অনেক জমিদারী ক্রয় করেন।
লালা বাবুও মহাসমারোহে পিতৃশ্রাদ্ধ সম্পন্ন করেন। তিনি আরবী, ফারসী ও সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপন্ন ছিলেন। বাল্যকাল হইতে তাঁহার স্বধর্ম্মের প্রতি অত্যন্ত অনুরাগ ছিল এবং সেই অনুরাগ ক্রমে বন্ধিত হইয়া তাঁহার সংসারবৈরাগ্য উৎপাদন করে। অবশেষে তিনি সহসা স্ত্রীপুত্র পরিত্যাগ করিয়া শ্রীবৃন্দাবনধামে যাত্রা করেন; এবং তথায় জীবনের অবশিষ্টাংশ যাপন করিয়াছিলেন।
তাঁহার সহসা সংসারপরিত্যাগসম্বন্ধে নানারূপ গল্প প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে আমরা একটির বিষয় উল্লেখ করিতেছি। তাঁহার মনে পূর্ব্ব হইতেই বৈরাগ্যের সঞ্চার হইয়াছিল।
শ্রী নিখিলনাথ রায় 



















