নতুন প্রজন্মের বিলাসে ঘ্রাণের জয়
পারফিউম এখন আর কেবল বিলাসী অভ্যাস নয়—জেন জি প্রজন্মের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। বিশ্বজুড়ে দ্রুতবর্ধনশীল এই ক্রেতাশ্রেণি এখন সুগন্ধিকে ব্যক্তিত্ব প্রকাশের উপায় হিসেবে গ্রহণ করছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও পারফিউম কেনার প্রবণতা বাড়ছে—যা বিশ্লেষকদের মতে নতুন এক ‘লিপস্টিক ইফেক্ট’, অর্থাৎ বড় খরচ কমিয়ে ছোট বিলাসে আনন্দ খোঁজা।
বড় ব্র্যান্ডগুলোর লাভের সুবাস
এই ট্রেন্ড থেকে সর্বাধিক উপকৃত হচ্ছে বিউটি জায়ান্ট কটি, এস্টি লডার ও ল’ওরিয়াল।
এদের জনপ্রিয় পারফিউম ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে—লে ল্যাবো, টম ফোর্ড, ভ্যালেনটিনো, ইভ সাঁ লরা, এম্পোরিও আরমানি ও অ্যাম্ব্রে অ্যান্টিক।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, তারা তাদের পারফিউম ব্যবসায় আরও বিনিয়োগ বাড়াবে, যা এখন বিক্রির প্রধান চালিকাশক্তি।
কটি ইনকর্পোরেটেডের অর্থপ্রধান লরঁ মার্সিয়ে বলেন, “পারফিউম হলো জেন জি প্রজন্মের জন্য এই ক্যাটাগরিতে প্রবেশের এক চমৎকার উপায়। এটি তাদের চাহিদার সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই।”
তাদের সাম্প্রতিক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে ক্যালভিন ক্লেইন ও হুগো বসের সুগন্ধির চাহিদা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে আশাব্যঞ্জক পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
জেন জি-ই এখন বাজারের কেন্দ্র
ডেটা ফার্ম সারকানার তথ্যমতে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ২৬ সপ্তাহে পারফিউমের মোট খরচের প্রায় ৩৮ শতাংশই এসেছে এমন পরিবার থেকে যেখানে অন্তত একজন জেন জি সদস্য রয়েছে।
এস্টি লডার জানায়, তাদের পারফিউম বিভাগে বিক্রি ১৪ শতাংশ বেড়েছে, যা মেকআপ পণ্যের তুলনামূলক দুর্বল চাহিদাকে অনেকাংশে পুষিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে, কমদামি মেকআপের জন্য জনপ্রিয় এলফ বিউটির বিক্রিতে পতন হয়েছে, যা তারা শুল্ক ও ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়াকে দায়ী করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রতিষ্ঠানটি পারফিউম বিক্রি করে না।
অধিগ্রহণ ও পুনর্গঠন: সুগন্ধির দিকে ঝুঁকছে বড় কোম্পানিগুলো
বড় কসমেটিক ব্র্যান্ডগুলো এখন তাদের পারফিউম ব্যবসা শক্তিশালী করতে অধিগ্রহণে মনোযোগ দিচ্ছে বা কম লাভজনক ইউনিট বিক্রি করে মূলধন জোগাচ্ছে।
গত অক্টোবর মাসে ল’ওরিয়াল ৪.৭ বিলিয়ন ডলারে কেরিং গ্রুপের কসমেটিক ও সুগন্ধি ব্যবসা কিনেছে, যার মধ্যে গুচির মতো মর্যাদাপূর্ণ ব্র্যান্ডের ৫০ বছরের লাইসেন্স অন্তর্ভুক্ত।
অন্যদিকে, কটি তাদের কভারগার্ল ও রিমেল ব্র্যান্ড বিক্রির চিন্তা করছে যাতে তারা সম্পূর্ণভাবে পারফিউম ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারে—যা এখন তাদের মোট বিক্রির তিন-চতুর্থাংশ দখল করে।
সাংস্কৃতিক মুহূর্তে ‘ফ্র্যাগরেন্স ফেনোমেনন’
এস্টি লডারের সিনিয়র নির্বাহী কেনডাল অ্যাশার বলেন, ‘ফ্র্যাগরেন্স এখন এক সাংস্কৃতিক মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীন, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি ও আয় বৃদ্ধির কারণে এই খাতের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’

এস্টি এই বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০টি নতুন পারফিউম স্টোর চালু করেছে, যার মধ্যে নিউইয়র্কের সোহো এলাকায় নতুন ফ্ল্যাগশিপ ও প্যারিসে গ্লোবাল ফ্র্যাগরেন্স অ্যাটেলিয়ের উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর টুলস ব্যবহার করছে, যা গ্রাহকদের পারফিউমের অনুভূতি ও ভাষা (যেমন ‘উজ্জ্বল’ বা ‘আনন্দদায়ক’) বিশ্লেষণ করে তাদের উপযোগী ঘ্রাণ নির্বাচন করতে সাহায্য করছে। পাশাপাশি, টিকটকে জেন জি ক্রেতাদের লক্ষ্য করে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করছে তারা।
বাজারে সুগন্ধির উত্থান
গত এক বছরে বৈশ্বিক পারফিউম বিক্রির প্রবৃদ্ধি মেকআপ ও স্কিনকেয়ারের তুলনায় অনেক বেশি। সারকানার তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে প্রিমিয়াম পারফিউম বিক্রি ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৯ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে প্রিমিয়াম মেকআপ বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ এবং স্কিনকেয়ার কমেছে ১ শতাংশ।
বিশ্লেষক মাইকেল অ্যাশলি শুলমান বলেন, ‘পারফিউম এমন একটি পণ্য যা ক্রেতাদের বিলাসবোধ ও মর্যাদার স্বাদ দেয়—কিন্তু অতিরিক্ত দাম ছাড়া। এটি একধরনের ব্যক্তিগত আনন্দও।’
সুগন্ধির বাজার এখন জেন জি প্রজন্মের হাতে নতুন উত্থান দেখছে। বড় কসমেটিক ব্র্যান্ডগুলো তাদের ভবিষ্যৎ বৃদ্ধির প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এই খাতকেই বেছে নিচ্ছে—কারণ ‘ঘ্রাণ’ এখন শুধুই বিলাস নয়, বরং নতুন প্রজন্মের আত্মপরিচয়ের অংশ।
#ফ্যাশন_বিজনেস #জেনজি_ট্রেন্ড #পারফিউম_ইন্ডাস্ট্রি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















