১০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত

পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর?

কৃষিক্ষেত্রে এক গভীর সতর্ক সংকেত

পাকিস্তানের সপ্তম কৃষি জনগণনা (Agricultural Census 2025) দেশের কৃষি অর্থনীতির ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। কমে আসা জমির পরিমাণ, পানির অভাব এবং নারীদের অদৃশ্য উপস্থিতি—সব মিলিয়ে কৃষিক্ষেত্র যেন নিজেরই “সাত দুর্ভিক্ষের বছর”-এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

প্রায় ৪০ শতাংশ শ্রমশক্তি কৃষির সঙ্গে যুক্ত, অথচ জনগণনার পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে—খাদ্যনিরাপত্তা, উৎপাদন কাঠামো ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক গভীর সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে।


খণ্ডিত খামার: জমি ভাগ হয়ে টুকরো টুকরো

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—পাকিস্তানের কৃষিজমি ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। একসময় যেখানে এক কৃষকের দাদা ১২ একর জমিতে চাষ করতেন, এখন তার নাতি মাত্র ৩ একর জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পাচ্ছেন। প্রজন্ম ধরে জমি ভাগ হতে হতে এমন অবস্থায় এসেছে যে তা দিয়ে পরিবার টিকানোই দায়, লাভ তো দূরের কথা।

জনগণনা অনুসারে, অধিকাংশ খামার এখন ৫ একরের নিচে। অথচ আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের জন্য অন্তত ৫ একর জমি থাকা প্রয়োজন। ফলে কৃষকেরা হয় ব্যয়বহুল যন্ত্র ভাড়া নেয়, নয়তো অদক্ষ শ্রমের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Asia News  NetworkAsia News Network

নারী কৃষকের অদৃশ্যতা: আইনের চেয়ে সমাজের বাধা বড়

জনগণনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো—মহিলাদের মালিকানাধীন কৃষিজমির সংখ্যা এক শতাংশেরও কম। অথচ দেশের মোট কৃষিশ্রমের প্রায় ৬৮ শতাংশই নারীদের অবদান।

ইসলামিক উত্তরাধিকার আইন ও পাকিস্তানের আইনে নারীদের জমির অধিকার স্পষ্টভাবে স্বীকৃত। কিন্তু বাস্তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই সবচেয়ে বড় বাধা। জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন নারীদের সম্পত্তি দিলে পারিবারিক দ্বন্দ্ব বাড়ে, ৩০ শতাংশের মতে নারীদের সম্পত্তির প্রয়োজন নেই, আর ১২ শতাংশ নারীদের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় অক্ষম মনে করেন।

ফলে বহু নারী ভাইদের চাপে উত্তরাধিকার ত্যাগ করেন, অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল থাকেন। যদি আইনানুগভাবে নারীরা তাদের প্রাপ্য জমি পেতেন, তবে তারা পাকিস্তানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ কৃষিজমির মালিক হতেন।


এক ফসল নির্ভরতার ঝুঁকি

পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদন এখন অত্যন্ত একমুখী। দেশজুড়ে গমই প্রধান ফসল, আর ধান, ভুট্টা ইত্যাদি সীমিত এলাকায় উৎপন্ন হয়। এই একমুখিতা বাজারের অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তন বা রোগবালাইয়ের আঘাতে পুরো অঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Prism - DAWN.COM

ইতিহাস বলছে, এক ফসল নির্ভরতা কতটা বিপজ্জনক। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ‘পানামা ডিজিজ’ আমেরিকার কলা শিল্প ধ্বংস করে দেয়। পাকিস্তানের গম নির্ভরতা একই ধরনের বিপদের সম্ভাবনা বহন করছে।


সাতটি পারস্পরিক সঙ্কট

জনগণনার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে সাতটি আন্তঃসম্পর্কিত সঙ্কট, যা একে অপরকে আরও গভীর করে তুলছে—

জমি খণ্ডীকরণ: ১৯৭০ সালের ১২ একরের খামার এখন ৩ একরে নেমে এসেছে, যা লাভজনক নয় এবং যান্ত্রিকীকরণও সম্ভব নয়।

পানি সংকট: ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভয়াবহভাবে নিচে নেমে গেছে; যেখানে আগে ৩০ ফুটে পানি পাওয়া যেত, এখন ৯০ ফুট পর্যন্ত খনন করতে হয়।

জলবায়ু ঝুঁকি: গমের ফলনের সময় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে ধানচাষ অঞ্চলে এক বছর বন্যা, পরের বছর খরা।

নারীর অদৃশ্যতা: নারী মালিকানার অভাব অর্থনীতিতে বিশাল অপচয় সৃষ্টি করছে।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Prism - DAWN.COM

যুবপ্রজন্মের প্রস্থান: কৃষিক্ষেত্র থেকে তরুণেরা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে ‘দেখা-দেখি’ সংস্কৃতি এই প্রবণতা বাড়াচ্ছে।

প্রযুক্তিগত বৈষম্য: ছোট কৃষক যন্ত্র কিনতে পারেন না, ফলে তারা বড় কৃষকের যন্ত্র ভাড়া নেয় বিলম্বিত সময়ে, যা ফলন ও দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

‘আর্থি’ দালালদের দমনচক্র: প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র কৃষক এসব দালালের ঋণের ফাঁদে পড়ে। বীজ ও সার কিনে অতিরিক্ত দামে, আবার ফসল বিক্রি করে কম দামে—ফলে তারা আজীবন ঋণের চক্রে বন্দি থাকে।


সংকট থেকে উত্তরণের পথ

এই জনগণনা শুধু সমস্যা নয়, সমাধানের পথও দেখায়—

১. জমি একত্রিকরণ: ছোট খামারগুলো মিলে যৌথভাবে বড় ইউনিট হিসেবে চাষ করলে মুনাফা ভাগাভাগি করা সম্ভব। সরকার চাইলে আধুনিক কোঅপারেটিভ ফার্মিং বা শেয়ারভিত্তিক কৃষি মডেল চালু করতে পারে, যেমনটি চীন বা যুক্তরাষ্ট্রে সফলভাবে চলছে।

২. পানি ব্যবস্থাপনা: ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষায় জেলা পর্যায়ে পানি বাজেট তৈরি, খাল সংস্কার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং টিউবওয়েল নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। ভারতের পাঞ্জাবে এই নীতিই সংকট কমিয়েছে।

৩. জলবায়ু সহনশীল কৃষি: ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল জাত ও স্থানীয় বীজব্যাংক গড়ে তোলা প্রয়োজন। কৃষকদের তাৎক্ষণিক আবহাওয়া ও পোকা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া জরুরি।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Prism - DAWN.COM

৪. নারীর অধিকার: নারীদের জমির উত্তরাধিকার কার্যকর করতে আইনি সহায়তা, নারী কৃষকদের জন্য বিশেষ ঋণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।

৫. তরুণদের আকৃষ্ট করা: কৃষিকে লাভজনক পেশা হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। বিদেশে অবৈধ অভিবাসনে যে টাকা খরচ হয়, তা স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে সফল তরুণ কৃষকদের উদাহরণ তুলে ধরে সামাজিক গণমাধ্যমে ইতিবাচক প্রচার বাড়ানো দরকার।

৬. প্রযুক্তি সহজলভ্য করা: যন্ত্রপাতির যৌথ মালিকানা ও লিজিং সেন্টার গড়ে তোলা দরকার, যাতে ক্ষুদ্র কৃষকও সময়মতো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

৭. বাজার সংস্কার: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রিয়েল-টাইম দাম জানানো, সরকারি সংরক্ষণাগার তৈরি এবং ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তি সহজ করলে কৃষক ‘আর্থি’ দালালের কবল থেকে মুক্ত হতে পারবেন।


#পাকিস্তান #কৃষি #খাদ্যনিরাপত্তা #জলবায়ু_সংকট #নারী_কৃষক #গ্রামীণ_অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

ভিয়েতনামী ঔপন্যাসিক ড. ফান কুয়ে মাই শারজাহ বইমেলায় পাঠকদের মুগ্ধ করলেন

পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর?

০৮:০৪:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

কৃষিক্ষেত্রে এক গভীর সতর্ক সংকেত

পাকিস্তানের সপ্তম কৃষি জনগণনা (Agricultural Census 2025) দেশের কৃষি অর্থনীতির ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। কমে আসা জমির পরিমাণ, পানির অভাব এবং নারীদের অদৃশ্য উপস্থিতি—সব মিলিয়ে কৃষিক্ষেত্র যেন নিজেরই “সাত দুর্ভিক্ষের বছর”-এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

প্রায় ৪০ শতাংশ শ্রমশক্তি কৃষির সঙ্গে যুক্ত, অথচ জনগণনার পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে—খাদ্যনিরাপত্তা, উৎপাদন কাঠামো ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক গভীর সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে।


খণ্ডিত খামার: জমি ভাগ হয়ে টুকরো টুকরো

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—পাকিস্তানের কৃষিজমি ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। একসময় যেখানে এক কৃষকের দাদা ১২ একর জমিতে চাষ করতেন, এখন তার নাতি মাত্র ৩ একর জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পাচ্ছেন। প্রজন্ম ধরে জমি ভাগ হতে হতে এমন অবস্থায় এসেছে যে তা দিয়ে পরিবার টিকানোই দায়, লাভ তো দূরের কথা।

জনগণনা অনুসারে, অধিকাংশ খামার এখন ৫ একরের নিচে। অথচ আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের জন্য অন্তত ৫ একর জমি থাকা প্রয়োজন। ফলে কৃষকেরা হয় ব্যয়বহুল যন্ত্র ভাড়া নেয়, নয়তো অদক্ষ শ্রমের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Asia News  NetworkAsia News Network

নারী কৃষকের অদৃশ্যতা: আইনের চেয়ে সমাজের বাধা বড়

জনগণনার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো—মহিলাদের মালিকানাধীন কৃষিজমির সংখ্যা এক শতাংশেরও কম। অথচ দেশের মোট কৃষিশ্রমের প্রায় ৬৮ শতাংশই নারীদের অবদান।

ইসলামিক উত্তরাধিকার আইন ও পাকিস্তানের আইনে নারীদের জমির অধিকার স্পষ্টভাবে স্বীকৃত। কিন্তু বাস্তবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই সবচেয়ে বড় বাধা। জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন নারীদের সম্পত্তি দিলে পারিবারিক দ্বন্দ্ব বাড়ে, ৩০ শতাংশের মতে নারীদের সম্পত্তির প্রয়োজন নেই, আর ১২ শতাংশ নারীদের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় অক্ষম মনে করেন।

ফলে বহু নারী ভাইদের চাপে উত্তরাধিকার ত্যাগ করেন, অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল থাকেন। যদি আইনানুগভাবে নারীরা তাদের প্রাপ্য জমি পেতেন, তবে তারা পাকিস্তানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ কৃষিজমির মালিক হতেন।


এক ফসল নির্ভরতার ঝুঁকি

পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদন এখন অত্যন্ত একমুখী। দেশজুড়ে গমই প্রধান ফসল, আর ধান, ভুট্টা ইত্যাদি সীমিত এলাকায় উৎপন্ন হয়। এই একমুখিতা বাজারের অস্থিরতা, জলবায়ু পরিবর্তন বা রোগবালাইয়ের আঘাতে পুরো অঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Prism - DAWN.COM

ইতিহাস বলছে, এক ফসল নির্ভরতা কতটা বিপজ্জনক। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ‘পানামা ডিজিজ’ আমেরিকার কলা শিল্প ধ্বংস করে দেয়। পাকিস্তানের গম নির্ভরতা একই ধরনের বিপদের সম্ভাবনা বহন করছে।


সাতটি পারস্পরিক সঙ্কট

জনগণনার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে সাতটি আন্তঃসম্পর্কিত সঙ্কট, যা একে অপরকে আরও গভীর করে তুলছে—

জমি খণ্ডীকরণ: ১৯৭০ সালের ১২ একরের খামার এখন ৩ একরে নেমে এসেছে, যা লাভজনক নয় এবং যান্ত্রিকীকরণও সম্ভব নয়।

পানি সংকট: ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভয়াবহভাবে নিচে নেমে গেছে; যেখানে আগে ৩০ ফুটে পানি পাওয়া যেত, এখন ৯০ ফুট পর্যন্ত খনন করতে হয়।

জলবায়ু ঝুঁকি: গমের ফলনের সময় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে ধানচাষ অঞ্চলে এক বছর বন্যা, পরের বছর খরা।

নারীর অদৃশ্যতা: নারী মালিকানার অভাব অর্থনীতিতে বিশাল অপচয় সৃষ্টি করছে।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Prism - DAWN.COM

যুবপ্রজন্মের প্রস্থান: কৃষিক্ষেত্র থেকে তরুণেরা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে ‘দেখা-দেখি’ সংস্কৃতি এই প্রবণতা বাড়াচ্ছে।

প্রযুক্তিগত বৈষম্য: ছোট কৃষক যন্ত্র কিনতে পারেন না, ফলে তারা বড় কৃষকের যন্ত্র ভাড়া নেয় বিলম্বিত সময়ে, যা ফলন ও দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

‘আর্থি’ দালালদের দমনচক্র: প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র কৃষক এসব দালালের ঋণের ফাঁদে পড়ে। বীজ ও সার কিনে অতিরিক্ত দামে, আবার ফসল বিক্রি করে কম দামে—ফলে তারা আজীবন ঋণের চক্রে বন্দি থাকে।


সংকট থেকে উত্তরণের পথ

এই জনগণনা শুধু সমস্যা নয়, সমাধানের পথও দেখায়—

১. জমি একত্রিকরণ: ছোট খামারগুলো মিলে যৌথভাবে বড় ইউনিট হিসেবে চাষ করলে মুনাফা ভাগাভাগি করা সম্ভব। সরকার চাইলে আধুনিক কোঅপারেটিভ ফার্মিং বা শেয়ারভিত্তিক কৃষি মডেল চালু করতে পারে, যেমনটি চীন বা যুক্তরাষ্ট্রে সফলভাবে চলছে।

২. পানি ব্যবস্থাপনা: ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষায় জেলা পর্যায়ে পানি বাজেট তৈরি, খাল সংস্কার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং টিউবওয়েল নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। ভারতের পাঞ্জাবে এই নীতিই সংকট কমিয়েছে।

৩. জলবায়ু সহনশীল কৃষি: ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল জাত ও স্থানীয় বীজব্যাংক গড়ে তোলা প্রয়োজন। কৃষকদের তাৎক্ষণিক আবহাওয়া ও পোকা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া জরুরি।

Seven lean years? Pakistan's agricultural crisis revealed - Prism - DAWN.COM

৪. নারীর অধিকার: নারীদের জমির উত্তরাধিকার কার্যকর করতে আইনি সহায়তা, নারী কৃষকদের জন্য বিশেষ ঋণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।

৫. তরুণদের আকৃষ্ট করা: কৃষিকে লাভজনক পেশা হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। বিদেশে অবৈধ অভিবাসনে যে টাকা খরচ হয়, তা স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা প্রকল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। একইসঙ্গে সফল তরুণ কৃষকদের উদাহরণ তুলে ধরে সামাজিক গণমাধ্যমে ইতিবাচক প্রচার বাড়ানো দরকার।

৬. প্রযুক্তি সহজলভ্য করা: যন্ত্রপাতির যৌথ মালিকানা ও লিজিং সেন্টার গড়ে তোলা দরকার, যাতে ক্ষুদ্র কৃষকও সময়মতো যন্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

৭. বাজার সংস্কার: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রিয়েল-টাইম দাম জানানো, সরকারি সংরক্ষণাগার তৈরি এবং ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তি সহজ করলে কৃষক ‘আর্থি’ দালালের কবল থেকে মুক্ত হতে পারবেন।


#পাকিস্তান #কৃষি #খাদ্যনিরাপত্তা #জলবায়ু_সংকট #নারী_কৃষক #গ্রামীণ_অর্থনীতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট