০৭:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৯৪)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
  • 18
শ্রী নিখিলনাথ রায়
নন্দকুমার অনেক বিবেচনার পর সিরাজের ভবিষ্যৎ বাস্তবিকই ঘোরতর অন্ধকারময় দেখিয়া, ইংরেজদিগের সহিত’ বন্ধুত্ব স্থাপনের ইচ্ছা করিলেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ বলিয়া থাকেন যে, ইংরেজেরা সেই সময়ে আমীরচাঁদকে দিয়া নন্দকুমারকে ১২০০০ হাজার টাকা প্রদান করিয়াছিলেন। কিন্তু এই ১২০০০ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়ে আমাদের কিছু সন্দেহ আছে।
নন্দকুমার এরূপ নীচান্তঃকরণ ছিলেন না যে, ১২ হাজার টাকার ন্যায় সামান্য অর্থে তিনি এইরূপ পাপঞ্জনক কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। তিনি সিরাজের পরিণাম চিন্তা করিয়াই ইংরেজ- দিগের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন বলিয়াই অনুমান হয়। তাহার পর তিনি ফরাসীদিগের সাহায্যের জন্য নিজের সৈনিকদিগেকে ফিরিয়া আসিতে আদেশ দেন এবং রায়দুর্লভ উপস্থিত হইলে, তাঁহাকেও ফিরিয়া যাইতে বলিয়া পাঠান। নন্দকুমার নবাবকে এইরূপ লিখিয়া পাঠাই- লেন যে, ইংরেজেরা যেরূপ বলশালী, তাহাতে ফরাসীদিগের সাহায্য করিতে গেলে, আপনাদিগের অবমাননার সম্ভাবনা আছে; সেরূপক্ষেত্রে ফরাসীদিগের সাহায্য করিতে যাওয়া যুক্তিযুক্ত নহে।
নন্দকুমার যদি আমীরচাঁদ কর্তৃক প্রণোদিত না হইয়া, প্রভুকে ঐরূপ লিখিয়া পাঠাইতেন, তাহা হইলে, আমরা তাঁহার কোনরূপ দোষ মনে করিতাম না। কিন্তু তিনি যখন চতুরতাপূর্ব্বক প্রভুকে সতর্ক হইবার জন্য লিখিয়া পাঠাইয়া- ছিলেন, তখন যে তিনি সর্ব্বথা নিন্দনীয় তাহাতে সন্দেহ নাই।
যাহা হউক নন্দকুমার ফরাসীদিগের বিরুদ্ধে ইংরেজদিগের সহায়তা করা ব্যতীত নবাবের বিরুদ্ধাচরণ কিংবা তাঁহাকে পদচ্যুত করার ন্যায় আর কোন ভীষণ অপরাধে অপরাধী নহেন। তিনি অন্যান্য কর্মচারীদিগের ন্যাস্ক সিরাজ উদ্দৌলাকে ইচ্ছাপূর্ব্বক পদচ্যুত করিতে চেষ্টা করেন নাই। অথবা সেই প্রভুহত্যানুলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন না। কিন্তু ইংরেজ- দিগকে প্রকারান্তরে সহায়তা করায়, প্রভুর প্রতিও যে তাঁহার অকৃতজ্ঞতা দেখান হইয়াছে, তাহাও অস্বীকার করিবার উপায় নাই। এই অকৃতজ্ঞতার জন্য, তাঁহার নবপরিচিত বন্ধু ইংরেজদিগের হস্তে তাঁহাকে অশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করিয়া, অবশেষে আপনার জীবন বলি দিতে বাধ্য হইতে হইয়াছিল। সিরাজের অজ্ঞাতসারে ইংরেজদিগের সহায়তা করা নন্দকুমার চরিত্রের যে একটি প্রধান কলঙ্ক, ইহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই।

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৯৪)

১১:০০:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
শ্রী নিখিলনাথ রায়
নন্দকুমার অনেক বিবেচনার পর সিরাজের ভবিষ্যৎ বাস্তবিকই ঘোরতর অন্ধকারময় দেখিয়া, ইংরেজদিগের সহিত’ বন্ধুত্ব স্থাপনের ইচ্ছা করিলেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ বলিয়া থাকেন যে, ইংরেজেরা সেই সময়ে আমীরচাঁদকে দিয়া নন্দকুমারকে ১২০০০ হাজার টাকা প্রদান করিয়াছিলেন। কিন্তু এই ১২০০০ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়ে আমাদের কিছু সন্দেহ আছে।
নন্দকুমার এরূপ নীচান্তঃকরণ ছিলেন না যে, ১২ হাজার টাকার ন্যায় সামান্য অর্থে তিনি এইরূপ পাপঞ্জনক কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। তিনি সিরাজের পরিণাম চিন্তা করিয়াই ইংরেজ- দিগের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন বলিয়াই অনুমান হয়। তাহার পর তিনি ফরাসীদিগের সাহায্যের জন্য নিজের সৈনিকদিগেকে ফিরিয়া আসিতে আদেশ দেন এবং রায়দুর্লভ উপস্থিত হইলে, তাঁহাকেও ফিরিয়া যাইতে বলিয়া পাঠান। নন্দকুমার নবাবকে এইরূপ লিখিয়া পাঠাই- লেন যে, ইংরেজেরা যেরূপ বলশালী, তাহাতে ফরাসীদিগের সাহায্য করিতে গেলে, আপনাদিগের অবমাননার সম্ভাবনা আছে; সেরূপক্ষেত্রে ফরাসীদিগের সাহায্য করিতে যাওয়া যুক্তিযুক্ত নহে।
নন্দকুমার যদি আমীরচাঁদ কর্তৃক প্রণোদিত না হইয়া, প্রভুকে ঐরূপ লিখিয়া পাঠাইতেন, তাহা হইলে, আমরা তাঁহার কোনরূপ দোষ মনে করিতাম না। কিন্তু তিনি যখন চতুরতাপূর্ব্বক প্রভুকে সতর্ক হইবার জন্য লিখিয়া পাঠাইয়া- ছিলেন, তখন যে তিনি সর্ব্বথা নিন্দনীয় তাহাতে সন্দেহ নাই।
যাহা হউক নন্দকুমার ফরাসীদিগের বিরুদ্ধে ইংরেজদিগের সহায়তা করা ব্যতীত নবাবের বিরুদ্ধাচরণ কিংবা তাঁহাকে পদচ্যুত করার ন্যায় আর কোন ভীষণ অপরাধে অপরাধী নহেন। তিনি অন্যান্য কর্মচারীদিগের ন্যাস্ক সিরাজ উদ্দৌলাকে ইচ্ছাপূর্ব্বক পদচ্যুত করিতে চেষ্টা করেন নাই। অথবা সেই প্রভুহত্যানুলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন না। কিন্তু ইংরেজ- দিগকে প্রকারান্তরে সহায়তা করায়, প্রভুর প্রতিও যে তাঁহার অকৃতজ্ঞতা দেখান হইয়াছে, তাহাও অস্বীকার করিবার উপায় নাই। এই অকৃতজ্ঞতার জন্য, তাঁহার নবপরিচিত বন্ধু ইংরেজদিগের হস্তে তাঁহাকে অশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করিয়া, অবশেষে আপনার জীবন বলি দিতে বাধ্য হইতে হইয়াছিল। সিরাজের অজ্ঞাতসারে ইংরেজদিগের সহায়তা করা নন্দকুমার চরিত্রের যে একটি প্রধান কলঙ্ক, ইহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই।