হিতৈষী স্কুলে
প্রতিদিন আমি আমার পিতার সঙ্গে স্কুলে যাইতাম। আমার পিতাকে আমার তখন এত ভালো লাগিত যে সর্বদা তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে থাকিতে চাহিতাম। তিনি যেমন করিয়া খাইতেন আমি তাহা অনুকরণ করিতাম। তাঁহার মতো বড় বড় পা ফেলিয়া হাঁটিতে চেষ্টা করিতাম।
এই স্কুলের প্রথম দিনের ঘটনা আমার বিশেষ মনে নাই। আমাদের উপর-ক্লাসের একটি ছেলে বেশ সুন্দর করিয়া কবিতা আবৃত্তি করিত। তার গলার সুরটি ছিল ভারি চমৎকার।
তার আবৃত্তি করা একটি লাইন মনে পড়ে,
সাদা সাদা বকের ছানা
জল খাচ্ছে ঘাটে।
কত কালের কথা। কিন্তু এই লাইনটি ভুলিয়া যাই নাই। বোধহয় এই লাইনটির চিত্রধর্মের জন্যই উহা আমার মন হইতে মুছিয়া যায় নাই। সেকালে আমাদিগকে কিন্ডারগার্টেন পড়ানো হইত। নানা রং চিনাইবার জন্য সেই বই-এ সুন্দর সুন্দর কবিতা থাকিত। উহাদের দুই-এক লাইন এখন মনে আছে:
লম্বা লম্বা খেজুর গাছে খেজুর হয়েছে,
কতক কাঁচা কতক ডাঁসা কতক পেকেছে।
অথবা
পেঁচ দেয় না রামের ঘুড়ি উড়ে পুকুর পাড়ে,
ওদিক থেকে হরির ঘুড়ি পড়ল তাহার ঘাড়ে।
কেন জানি না, এই কবিতাগুলি পড়িতে আমার বড়ই ভালো লাগিত।
বাল্যকালে আমার স্মরণশক্তি খুব ভালো ছিল। স্কুলে বসিয়া পড়িয়াই আমি ক্লাসে প্রথম হইতাম। বাড়ি আসিয়া পড়িতে হইত না। আমাদের উপর-ক্লাসের ধীরেন্দ্র আর সতীশ নামে দু’টি ছেলে আমাকে পড়া তৈরি করিতে সাহায্য করিতেন। ধীরেনদা মারা গিয়াছেন। সতীশদা কোথায় আছেন জানি না।
আমাদের স্কুলে সাধারণত গরিব লোকদের ছেলেরাই আসিয়া ভর্তি হইত। আমার পিতা বলিয়া-কহিয়া আমাদের গ্রামের অনেকগুলি চাষী ছেলেকে এই স্কুলে আনিয়া ভর্তি করাইয়া দেন। তাহারা বাড়িতে পড়াশুনা করিবার কোনো সাহায্য পাইত না। তাই বছরের পর বছর ফেল করিত।
চলবে…