০৯:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৩) শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি আল-ওথমান মসজিদের পুনঃস্থাপন কাজ শেষের পথে, রমজানের আগেই পুনরায় খোলা হবে ভুলভাবে উপস্থাপিত বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন মির্জা ফখরুল দিল্লিতে হামলার ছক তৈরির অভিযোগে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করল ঢাকা ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১২ জন সূত্রাপুরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুনে আতঙ্ক হামাস যোদ্ধাদের আটকে থাকা পরিস্থিতি গাজা চুক্তির অগ্রগতি ব্যাহত করছে জাপানে উঁচু শহরের রোদে নতুন আতঙ্ক — ভাল্লুকের হামলা বাড়ছে, আতঙ্কে নাগরিকরা ডিএসইতে ১০ দিনের পতনের পর সূচক উত্থান; লেনদেন কমেছে সামান্য

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৬৭)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
  • 37

মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য

সেই পুস্তকখানা বন্ধুমহলে এবং কোনো কোনো বন্ধুর পিতা-মাতাকে দেখাইয়া যে কত তারিফ পাইয়াছি তাহা ভাবিলে আজও গৌরবে আমার বুক ভরিয়া যায়। এরপর কোথায় সেই খাতাখানা যে হারাইয়া গেল আর খুঁজিয়া পাইলাম না।

হেরম্ববাবুর ক্লাসে আমাদের আব্দারের অন্ত ছিল না। একবার কি একটা বিষয় লইয়া আমরা তাঁহাকে ঘিরিয়া গণ্ডগোল করিতেছি। এমন সময় হেডমাস্টার আসিয়া আমাকে ধরিয়া বেদম বেত্রাঘাত করিলেন। বেতের আঘাতে আমার পিঠে দড়ির মত সাত-আটটি দাগ পড়িয়া গেল। ইহার পরবর্তী ক্লাস ছিল আমার পিতার। আমি একপাশে বসিয়া ফুঁপাইয়া ফুঁপাইয়া কাঁদিতেছি দেখিয়া তিনি আমার কাছে কাঁদিবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। আমি কিছুই বলিতে পারিলাম না।

শুধু আমার পিঠের জামা তুলিয়া তাঁহাকে দেখাইলাম। কেবলমাত্র গোলমাল করার জন্য আমার বয়সের এতটুকু ছাত্রকে এরূপ শাস্তি দেওয়ায় আমার পিতা বড়ই মনঃক্ষুণ্ণ হইলেন। তিনি আমাকে সঙ্গে লইয়া স্কুলের সেক্রেটারিকে আমার পিঠ দেখাইলেন। সেক্রেটারি মহাশয় আমার পিঠে সস্নেহে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিলেন, “তাইতো শান্তিটি একটু কঠোরই হইয়াছে।” আমার পিতার ইঙ্গিতে আমি বাড়ি চলিয়া আসিলাম। ইহার পর আমার পিতার সঙ্গে সেক্রেটারি মহাশয়ের কি কি আলাপ হইয়াছিল জানি না। কিন্তু পরদিন হইতে সেই হেডমাস্টারাকে আর স্কুলে আসিতে দেখিলাম না। শুনিয়াছিলাম, আমার পিতার সঙ্গে হেডমাস্টারের মনোমালিন্য ছিল। তাঁহার কিছু না করিতে পারিয়া নিরপরাধ আমার উপরেই তিনি তাঁহার সকল রাগ ঝাড়িয়াছিলেন।

স্কুলে পড়িবার সময় আমার গায়ের জামাটি যখন ছিঁড়িয়া শতখণ্ড হইত তখনও আমার পিতা আমাকে নতুন জামা কিনিয়া দিতেন না। সেই ছেঁড়া জামায় মায়ের হাতের বহু তালি সত্ত্বেও আমার গায়ের আবরু রক্ষা করিতে পারিতাম না। কতবার বাজানকে বলিয়াছি, “আমার জামা কিনিয়া দেন।” আমার কথা বাজান কানেও তুলিতেন না। আর জামা কিনিয়াই বা দিবেন কোথা হইতে? স্কুলে যে সামান্য বেতন তিনি পান তাহা দিয়া পরিবারের তেল-লবণ  কেনার খরচই পোষাইত না। কিন্তু একথা আমি বুঝিতাম না। গায়ের জামাটি যখন মায়ের শততালি অগ্রাহ্য করিয়া বন্ধুদের ঠাট্টা-তামাশার উপকরণ হইয়াছে তখন কোনো কোনো দিন স্কুলে যাইবার সময় বাজানকে বেড় দিয়া ধরিতাম, আজ আমার জামা না কিনিয়া দিলে স্কুলে যাইতে দিব না।

কোনোদিন বা একটা ঢিলা উঠাইয়া দেখাইতাম জামা না কিনিয়া দিলে এই ঢিল মারিব। বাজান তখন হাসিতে হাসিতে আমাকে লইয়া খলিফাপট্টিতে যাইতেন। আমার সহপাঠীরা মনোহারী দোকান হইতে কত সুন্দর সুন্দর ছাঁটের রংবেরঙের জামা পরিত। কিন্তু খলিফাপট্টিতে সেরূপ জামা পাওয়া যাইত না।

চলবে…

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৩)

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৬৭)

১১:০০:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য

সেই পুস্তকখানা বন্ধুমহলে এবং কোনো কোনো বন্ধুর পিতা-মাতাকে দেখাইয়া যে কত তারিফ পাইয়াছি তাহা ভাবিলে আজও গৌরবে আমার বুক ভরিয়া যায়। এরপর কোথায় সেই খাতাখানা যে হারাইয়া গেল আর খুঁজিয়া পাইলাম না।

হেরম্ববাবুর ক্লাসে আমাদের আব্দারের অন্ত ছিল না। একবার কি একটা বিষয় লইয়া আমরা তাঁহাকে ঘিরিয়া গণ্ডগোল করিতেছি। এমন সময় হেডমাস্টার আসিয়া আমাকে ধরিয়া বেদম বেত্রাঘাত করিলেন। বেতের আঘাতে আমার পিঠে দড়ির মত সাত-আটটি দাগ পড়িয়া গেল। ইহার পরবর্তী ক্লাস ছিল আমার পিতার। আমি একপাশে বসিয়া ফুঁপাইয়া ফুঁপাইয়া কাঁদিতেছি দেখিয়া তিনি আমার কাছে কাঁদিবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। আমি কিছুই বলিতে পারিলাম না।

শুধু আমার পিঠের জামা তুলিয়া তাঁহাকে দেখাইলাম। কেবলমাত্র গোলমাল করার জন্য আমার বয়সের এতটুকু ছাত্রকে এরূপ শাস্তি দেওয়ায় আমার পিতা বড়ই মনঃক্ষুণ্ণ হইলেন। তিনি আমাকে সঙ্গে লইয়া স্কুলের সেক্রেটারিকে আমার পিঠ দেখাইলেন। সেক্রেটারি মহাশয় আমার পিঠে সস্নেহে হাত বুলাইতে বুলাইতে বলিলেন, “তাইতো শান্তিটি একটু কঠোরই হইয়াছে।” আমার পিতার ইঙ্গিতে আমি বাড়ি চলিয়া আসিলাম। ইহার পর আমার পিতার সঙ্গে সেক্রেটারি মহাশয়ের কি কি আলাপ হইয়াছিল জানি না। কিন্তু পরদিন হইতে সেই হেডমাস্টারাকে আর স্কুলে আসিতে দেখিলাম না। শুনিয়াছিলাম, আমার পিতার সঙ্গে হেডমাস্টারের মনোমালিন্য ছিল। তাঁহার কিছু না করিতে পারিয়া নিরপরাধ আমার উপরেই তিনি তাঁহার সকল রাগ ঝাড়িয়াছিলেন।

স্কুলে পড়িবার সময় আমার গায়ের জামাটি যখন ছিঁড়িয়া শতখণ্ড হইত তখনও আমার পিতা আমাকে নতুন জামা কিনিয়া দিতেন না। সেই ছেঁড়া জামায় মায়ের হাতের বহু তালি সত্ত্বেও আমার গায়ের আবরু রক্ষা করিতে পারিতাম না। কতবার বাজানকে বলিয়াছি, “আমার জামা কিনিয়া দেন।” আমার কথা বাজান কানেও তুলিতেন না। আর জামা কিনিয়াই বা দিবেন কোথা হইতে? স্কুলে যে সামান্য বেতন তিনি পান তাহা দিয়া পরিবারের তেল-লবণ  কেনার খরচই পোষাইত না। কিন্তু একথা আমি বুঝিতাম না। গায়ের জামাটি যখন মায়ের শততালি অগ্রাহ্য করিয়া বন্ধুদের ঠাট্টা-তামাশার উপকরণ হইয়াছে তখন কোনো কোনো দিন স্কুলে যাইবার সময় বাজানকে বেড় দিয়া ধরিতাম, আজ আমার জামা না কিনিয়া দিলে স্কুলে যাইতে দিব না।

কোনোদিন বা একটা ঢিলা উঠাইয়া দেখাইতাম জামা না কিনিয়া দিলে এই ঢিল মারিব। বাজান তখন হাসিতে হাসিতে আমাকে লইয়া খলিফাপট্টিতে যাইতেন। আমার সহপাঠীরা মনোহারী দোকান হইতে কত সুন্দর সুন্দর ছাঁটের রংবেরঙের জামা পরিত। কিন্তু খলিফাপট্টিতে সেরূপ জামা পাওয়া যাইত না।

চলবে…