আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
গ্রীষ্ম শেষ হয়ে আসছিল। ফেঢুকা তখন ওর দ্বিতীয় পরীক্ষার পড়াশুনো নিয়ে ব্যস্ত আর ইয়াৎকা সুকারন্তেইন জনরে শয্যাশায়ী। হঠাৎ কেমন একা হয়ে পড়লুম। বিছানায় গড়িয়ে বাবার বইগুলো আর খবরের কাগজ পড়ে সময় কাটাতে লাগলুম।
যুদ্ধ শেষ হবার কোনো লক্ষণ কোনোদিকে দেখা যাচ্ছিল না। ওদিকে শহর ভরে গিয়েছিল শরণার্থীতে। জার্মানরা এগিয়ে আসছিল সারা ফ্রন্ট জুড়ে। পোল্যান্ডের অর্ধেকেরও বেশি দখল করে নিয়েছিল তারা। যাদের অবস্থা ছিল একটু ভালো সেই সব শরণার্থী অন্য লোকের বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিল, কিন্তু তাদের সংখ্যা ছিল কম।
আমাদের মহাজন ব্যবসাদার, সন্ন্যাসী আর পাদ্রিসাহেবরা সবাই ছিলেন ধর্মভীরু, লোক, তাই তাঁরা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে নারাজ ছিলেন। কারণ, শরণার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ইহুদি, আর তাঁদের পরিবারও ছিল মন্ত-মস্ত। তাই বেশির ভাগ শরণার্থীই শহরের বাইরে বনের ধারে ধাওড়ায় বাস করতে লাগল।
এই সময়ের মধ্যে গাঁয়ে-গাঁয়ে যত যুবক ছিল, যত ছিল স্বাস্থ্যবান চাষী সবাইকে চালান করে দেয়া হয়েছিল ফ্রন্টে। ফলে অনেক খামার দেখাশোনার অভাবে যাচ্ছিল নষ্ট হয়ে। মাঠে খাটার লোক রইল না। দলে দলে ভিখারীরা বুড়ো-বুড়ি, মেয়েমানুষ আর কচি বাচ্চা শহরে আসতে শুরু করল।
আগে আমাদের শহরের রাস্তায় সারা দিন হাঁটলেও একজন অচেনা লোকের দেখা পাওয়া যেত না। সকলেরই যে নাম জানতুম তখন তা নয়, কিন্তু আগে কখনও- না-কখনও দেখায় চিনে গিয়েছিলুম প্রত্যেককে। আর এখন পা ফেললেই নতুন লোকের সঙ্গে দেখা, আর তারা ছিল নানা জাতের, কেউ-বা ইহুদি, কেউ রুমানিয়ান, কেউ পোল। তাছাড়া অস্ট্রিয়ান যুদ্ধবন্দী আর রেড ক্রশ হাসপাতালের জখম-হওয়া সৈন্যরা তো ছিলই।