সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১. , নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি, মারামারি, কাটাকাটি করেন, তাহলে এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।
২. আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি
৩. আজকে পুলিশ সদস্য কাজ করছে না। তার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে—অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অনেকে জেলে আছে।
৪. পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই—এই সংস্থাগুলো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে।
৫. আমরা দেশে একটি ফ্রি, ফেয়ার এবং ইনক্লুসিভ নির্বাচন নিশ্চিত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
সতর্কবার্তা
আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি—পরে বলবেন না যে আমি সতর্ক করিনি। আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, যদি আপনারা নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করেন, নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি, মারামারি, কাটাকাটি করেন, তাহলে এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, নাইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি।
আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা—দেশ এবং জাতিটাকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে ছুটি করা।
আই হ্যাড এনাফ লাস্ট সেভেন-এইট মান্থস, আই হ্যাড এনাফ। আমি চাই দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসবো।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
আরেকটা জরুরি বিষয় যেটা আমি ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি—দেশের এই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে।
প্রথম কারণটা হচ্ছে, আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। এটা অপরাধীদের জন্য একটা চমৎকার সুযোগ। যেহেতু আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি, তারা খুব ভালোভাবেই জানে যে এই সময়ে যদি এই সমস্ত অপরাধ করা যায়, তাহলে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সেই কারণেই এই অপরাধগুলো হচ্ছে।
আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্রিত থাকি, তাহলে অবশ্যই এটা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ও অবদান
পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই—এই সংস্থাগুলো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। অতীতে কিছু খারাপ কাজের পাশাপাশি অসংখ্য ভালো কাজও করেছে।
আজকের দেশের স্থিতিশীলতা, এত বছর ধরে দেশটাকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে এই সশস্ত্র বাহিনীর কারণে। বহু সেনা সদস্য, সিভিলিয়ান সবাই মিলে এই সংস্থাগুলোকে কার্যকর রেখেছে।
যারা এর মধ্যে অপরাধ করেছে, তারা অবশ্যই শাস্তি পাবে, শাস্তি হতেই হবে। না হলে তারা আবার একই কাজ করবে। আমরা সেটাকে চিরতরে বন্ধ করতে চাই।
কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে এই সংস্থাগুলো আন্ডারমাইন্ড না হয়।
আজকে পুলিশ সদস্য কাজ করছে না। তার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে—অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, অনেকে জেলে আছে।
র্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই—এদের বিরুদ্ধে দোষারোপ, গুম, খুন ইত্যাদির তদন্ত চলছে।
অবশ্যই তদন্ত হবে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু সেটি এমনভাবে করতে হবে যেন সংস্থাগুলো আন্ডারমাইন্ড না হয়।
যদি এই সংস্থাগুলোকে আন্ডারমাইন্ড করা হয়, তাহলে ভাববেন না যে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে। সবাই শান্তিতে থাকবে—এটা হবে না, সেটা সম্ভব না।
আমি আপনাদের পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি—দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর না।
সেনাবাহিনীর সীমাবদ্ধতা
দুই লক্ষ পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র্যাব আছে, আনসার-বিডিপি আছে। আর আমার হাতে আছে মাত্র ৩০,০০০ সৈন্য।
এই বিশাল শূন্যতা আমি কীভাবে পূরণ করব?
সীমিত সেনা সংখ্যা ও এর চ্যালেঞ্জ
৩০,০০০ সৈন্য থাকে, আবার ৩০,০০০ চলে যায় ক্যান্টনমেন্টে, আরো ৩০,০০০ আসে। এটা দিয়ে আমরা দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এখানে যে সমস্ত উশৃঙ্খল কাজ হয়েছে, সেটা আমাদের নিজস্ব তৈরি। এটা আমাদের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচার। আমরা যদি নিজেরাই বিপরীতমুখী কাজ করি, তাহলে কখনো শান্তি-শৃঙ্খলা আসবে না।
এই জিনিসটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।
তদন্ত কমিশনের ভূমিকা ও সরকারের করণীয়
তদন্ত কমিশন হচ্ছে। আমরা সর্বদা চেষ্টা করব তদন্ত কমিশনকে সহায়তা করতে। যে ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, আমরা করব।
আমরা দেশে একটি ফ্রি, ফেয়ার এবং ইনক্লুসিভ নির্বাচন নিশ্চিত করার পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
এর আগে যে সমস্ত সংস্কার করা প্রয়োজন, অবশ্যই সরকার সেদিকে মনোযোগ দেবে। আমি যতবারই ড. ইউনূসের সাথে কথা বলেছি, তিনি সম্পূর্ণ একমত।
দেয়ার শুড বি ফ্রি, ফেয়ার এবং ইনক্লুসিভ ইলেকশন।
এই নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে বা তার কাছাকাছি সময়ে হওয়া উচিত। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত।
আমার মনে হয়, সরকার সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনূস যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে। তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের তাঁকে সাহায্য করতে হবে, যাতে তিনি সফল হতে পারেন।
আমরা সবাই একসাথে চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ, আমরা একসাথে কাজ করব।
জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা
আসুন, নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি না করে আমরা নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করি।
দেশ ও জাতি যেন একসাথে থাকতে পারে, সেদিকে আমাদের কাজ করতে হবে।
আমাদের মধ্যে মতের বিরোধ থাকতে পারে, চিন্তা-চেতনার পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের এক থাকতে হবে।
তাহলেই দেশ উন্নত হবে, সঠিক পথে পরিচালিত হবে। না হলে আমরা আরো সমস্যার মধ্যে পড়তে যাব।
বিশ্বাস করেন, উই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেড ওইদিকে। আমরা যেতে চাই না।
সেনাবাহিনীর প্রতি বিদ্বেষ নয়, সহযোগিতা করুন
আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি—পরে বলবেন না যে আমি সতর্ক করিনি।
আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করেন, যদি নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি, কাটাকাটি করেন, তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।
আমি আজকে বলে দিলাম, যাতে পরে বলার কিছু না থাকে।
আমরা এই দেশে শান্তি চাই।
আমরা চাই না হানাহানি, মারামারি। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণ করবেন না। আমি একটা সাধারণ জিনিস লক্ষ্য করেছি—কিছু মানুষ সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।
কেন? আজ পর্যন্ত আমি সেটার কারণ খুঁজে পাইনি।
আমরা একমাত্র ফোর্স, যারা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী আছে, তাদেরও ভূমিকা আছে—নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সবাই আমাদের সাহায্য করছেন।
আমাদের আক্রমণ করবেন না, আমাদের অনুপ্রাণিত করুন। আমাদের উপদেশ দিন।
কোনো সমস্যা হলে আমি নুরুদ্দিন স্যারের কাছে যাই, উনি আমাকে উপদেশ দেন। সিনিয়র জেনারেলরা আমাকে পরামর্শ দেন।
আমি সবার কাছে স্মরাণাপন্ন হই। আমাদের প্রতি আক্রমণ করবেন না—উপদেশ দিন।
আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব।
দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য একসাথে কাজ করার আহ্বান
আমরা একসাথে থাকতে চাই।
আমরা চাই দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
Leave a Reply