একটি শক্তিশালী ৭.৭-মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ইতোমধ্যেই এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ভূমিকম্পের কম্পন থাইল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকাতেও অনুভূত হয়েছে, এমনকি ব্যাংককে একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে।
সামরিক বাহিনীর উদ্যোগ
থাই প্রধানমন্ত্রী পাইতংতার্ন শিনাওয়াত্রা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাইকে নির্দেশ দিয়েছেন মিয়ানমারে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনী পাঠানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। শনিবার উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেনারেল নাত্তাপোল নাকপানিচ জানিয়েছেন, থাই সশস্ত্র বাহিনীর ৪৯ জনের একটি দল (অনুসন্ধান, চিকিৎসা ও ত্রাণ-সরঞ্জামসহ) রোববার থাই বিমানবাহিনীর সি-১৩০ উড়োজাহাজে করে মিয়ানমারে যাবে।

ব্যাংককে আহতদের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা
ভূমিকম্পের প্রভাবে থাইল্যান্ডে যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা থাই রাজা ও রানীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পাইতংতার্নের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ঘোষণায় জানানো হয়, বিপর্যস্তদের রাজকীয় সহায়তায় উন্নত চিকিৎসা ও সেবাসুবিধা দেওয়া হবে।
অতিরিক্ত সহায়তা পরিকল্পনা
প্রাথমিকভাবে মিয়ানমার সরকারের চাহিদা অনুযায়ী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যেসব অনুরোধ আসবে, সেগুলো বিবেচনা করে থাই প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন জেনারেল নাত্তাপোল।

আসিয়ানের প্রতিক্রিয়া
আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে তাত্ক্ষণিক মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। তারা জানিয়েছেন, আসিয়ান সমন্বিতভাবে ত্রাণ, সহযোগিতা ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তার চ্যালেঞ্জ
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের সামরিক সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতের ত্রাণদল পাঠানোর কথা জানা গেছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, সরকারি বাহিনীর বাধার কারণে অনেক এলাকায় সহায়তা পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। অতীতের মতো এবারও বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ত্রাণ প্রবেশে জটিলতা হতে পারে।

মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি
ম্যান্ডলে শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখনো সামরিক সরকার থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক সহায়তা পাননি। একজন উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি ধার করতে হয়েছে; সরকারিভাবে কিছু মেলেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু মানুষ সাহায্যের আবেদন করছেন। কারো কারো আত্মীয়-স্বজন মসজিদের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন, তাদের লাশ উদ্ধার করতে ভারী যন্ত্রপাতি দরকার।
উপসংহার
মিয়ানমারে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। থাই সামরিক বাহিনীর একটি বিশেষ দল উদ্ধারকাজে যোগ দেওয়ায় কিছুটা হলেও পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মিয়ানমারের ভেতরে ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রম কতটা নির্বিঘ্নে চলবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
Sarakhon Report 



















