সারাক্ষণ রিপোর্ট
প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সম্প্রতি একটি মতামত-নিবন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের তথাকথিত ‘সিন্যালগেট’ কেলেঙ্কারি সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “ভণ্ডামি আমাকে অতটা বিরক্ত করে না; বরং বোকামিটাই বেশি অসহ্য।” ক্লিনটন মনে করেন, এই ঘটনায় ট্রাম্প প্রশাসনের অপরিণামদর্শী পদক্ষেপ সবার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
‘সিন্যালগেট’ কেলেঙ্কারির সারসংক্ষেপ
- ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা একটি বাণিজ্যিক মেসেজিং অ্যাপে ভাগাভাগি করছিলেন।
- ঘটনাচক্রে, একটি গ্রুপে একজন সাংবাদিককে যুক্ত করে ফেলেন তারা, যা অতি স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁসের সম্ভাবনা তৈরি করে।
- ক্লিনটন এটিকে “শুধু ভণ্ডামি নয়— এটা আসলে বড় ধরনের বোকামি” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইমেইল বিতর্ক ও ‘সিন্যালগেট’
২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প জোরদারভাবে হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভার ব্যবহার নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
- রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার নিয়ে একাধিকবার তদন্তের দাবিও ওঠে।
- এখন ‘সিন্যালগেট’ নিয়ে নতুন বিতর্ক সামনে এলে, ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্লিনটনের ইমেইল-কাণ্ডকে তুলনামূলকভাবে বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য বিতর্কিত পদক্ষেপ
হিলারি ক্লিনটন তার নিবন্ধে কেবল ‘সিন্যালগেট’ নিয়ে কথা বলেননি; তিনি আরও কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেছেন, যেমন:
১.ব্যাপক হারে ফেডারেল কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা।
২. যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া।
৩. বৈশ্বিক কূটনীতি থেকে আমেরিকার সরে আসা।
ক্লিনটনের মতে, এসব সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের মঞ্চে দুর্বল করে তুলছে এবং মিত্র দেশগুলোকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
‘বোকা শক্তি’ ও মার্কিন অবস্থান
ক্লিনটন বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদ্ধতি আসলে ‘বোকা শক্তি’। শক্তিশালী একটি দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল নেতৃত্ব দান ও শত্রুদের মোকাবিলা করা। কিন্তু মি. ট্রাম্পের আমেরিকা উল্টোভাবে নিজেদের ক্ষমতা দুর্বল করছে।”
চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ক্লিনটন সতর্ক করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের ভুল পদক্ষেপগুলো চীনের বৈশ্বিক প্রভাব বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
- যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে চীন দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে নিজের অবস্থান শক্ত করছে।
- দীর্ঘমেয়াদে এটি মার্কিন স্বার্থের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে ভবিষ্যতে ‘সিন্যালগেট’-এর মতো স্ক্যান্ডালকে আমরা তুলনামূলকভাবে সামান্য বিষয় বলেই গণ্য করব।”
উপসংহার
হিলারি ক্লিনটনের ভাষায়, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো শুধু ভণ্ডামি ও অনিয়মের পরিচয় দেয় না, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ ও বোকামি-নির্ভর পথে পরিচালিত করছে। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে, বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার কথায়, “হাত ও পতাকার ইমোজি ব্যবহার করে নিজেদের শক্তি দেখানো যাবে না; সত্যিকারের নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমেই নিরাপত্তা ও বিশ্বমঞ্চে অবস্থান টিকিয়ে রাখতে হবে।”