০৭:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

পুতিন ইউক্রেনে অস্থায়ী প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দিলেন

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৩৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫
  • 26

সারাক্ষণ রিপোর্ট

যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের প্রস্তাব

রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে একটি অস্থায়ী প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, এই প্রশাসন যেন নতুন নির্বাচন আয়োজন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো চুক্তি স্বাক্ষরের কাজে সহায়তা করতে পারে। মুরমানস্ক বন্দরে সামরিক নৌসেনাদের সঙ্গে আলাপকালেই পুতিন এই মত ব্যক্ত করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

পুতিন মনে করেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে এই সংঘাত নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কম থাকলেও, নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন। পুতিনের ভাষ্যমতে, ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে এই সংঘাতের অবসান চান।

একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করে কৃষ্ণ সাগরে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে রাশিয়া বলছে, ব্যাংকের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণ না হলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর হবে না। এর আগেও ৩০ দিনের বহুপক্ষীয় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছিল।

অস্থায়ী প্রশাসনের ধারণা

পুতিন ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে আর বৈধ আলোচনাসঙ্গী হিসেবে দেখতে চান না। তাঁর দাবি, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসেই শেষ হয়ে গেছে। তাই ইউক্রেনে অস্থায়ী প্রশাসন গঠন করে নতুন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা সম্ভব হবে, যা রাশিয়ার সঙ্গে স্থায়ী শান্তিচুক্তির পথ তৈরি করবে। পুতিন জানান, এই অস্থায়ী প্রশাসন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য অংশীদারদের তত্ত্বাবধানে গঠন করা যেতে পারে।

ইউরোপীয় উদ্যোগ

ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে বৈঠক করে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে দেশটির নিরাপত্তা আরো সংহত করা যায়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন যৌথভাবে একটি আন্তর্জাতিক “নিরাপত্তাবেষ্টনী বাহিনী” গঠনের বিষয়েও আলোচনা করেছে। তবে রাশিয়া ইউক্রেনের অভ্যন্তরে বিদেশি বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নিতে নারাজ।

জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বরাবরই অস্থায়ী প্রশাসনের এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর যুক্তি, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক আইনের সময়ে কোনো নির্বাচন করা যায় না। তাছাড়া যুদ্ধের মধ্যে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্ভব নয়। জেলেনস্কির ভাষ্য, পুতিন আসলে এই সংঘাত দীর্ঘায়িত করতে চাইছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ

নতুন মার্কিন প্রশাসন দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ চায় বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি “খনিজ সম্পদ চুক্তি” নিয়ে আলোচনা চলছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পুনর্গঠনে আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারে। ট্রাম্প মনে করেন, এই চুক্তি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির নিশ্চয়তা আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে।

রাশিয়ান সামরিক অবস্থান

পুতিনের দাবি, রাশিয়া তার সামরিক অভিযানের ঘোষিত লক্ষ্যগুলো ধাপে ধাপে অর্জনের দিকে এগোচ্ছে, যদিও গতি অনেকের কাছে ধীর মনে হতে পারে। এখন পর্যন্ত রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলকে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত অংশ বলে ঘোষণা করেছে।

উত্তর কোরিয়া ও অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক

পুতিন জানান, চীন, ভারতসহ ব্রিকস জোটের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে রাশিয়ার আলোচনাও অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে বলেও জানান তিনি। যদিও পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়া ইতোমধ্যে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজারেরও বেশি সৈন্য কুরস্ক অঞ্চলে মোতায়েন করেছে। মস্কো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

ইউরোপ সম্পর্কে পুতিনের মতামত

পুতিনের ভাষ্যে, ইউরোপ একদিকে শান্তির কথা বললেও অন্যদিকে বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়াকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গেলে রাশিয়াকে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে বলে জানান তিনি।

শান্তির সম্ভাবনা

রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যেকোনো বিরোধ আলোচনা দিয়ে সমাধান করার ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানিয়েছে। তবে শান্তির যে কোনো চুক্তি যেন রাশিয়ার স্বার্থের ক্ষতি না করে, সে বিষয়ে তারা সজাগ। পুতিনের মতে, সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার গতিবিধি আপাতদৃষ্টিতে ধীর মনে হলেও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতেই রয়েছে। এই ধীর কিন্তু দৃঢ় অগ্রগতির মাধ্যমেই রাশিয়া শেষ পর্যন্ত তার লক্ষ্য পূরণ করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

পুতিন ইউক্রেনে অস্থায়ী প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দিলেন

০৫:৩৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের প্রস্তাব

রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে একটি অস্থায়ী প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, এই প্রশাসন যেন নতুন নির্বাচন আয়োজন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো চুক্তি স্বাক্ষরের কাজে সহায়তা করতে পারে। মুরমানস্ক বন্দরে সামরিক নৌসেনাদের সঙ্গে আলাপকালেই পুতিন এই মত ব্যক্ত করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

পুতিন মনে করেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে এই সংঘাত নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের সময় রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কম থাকলেও, নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার কথা বলছেন। পুতিনের ভাষ্যমতে, ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে এই সংঘাতের অবসান চান।

একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করে কৃষ্ণ সাগরে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে রাশিয়া বলছে, ব্যাংকের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণ না হলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর হবে না। এর আগেও ৩০ দিনের বহুপক্ষীয় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করেছিল।

অস্থায়ী প্রশাসনের ধারণা

পুতিন ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে আর বৈধ আলোচনাসঙ্গী হিসেবে দেখতে চান না। তাঁর দাবি, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসেই শেষ হয়ে গেছে। তাই ইউক্রেনে অস্থায়ী প্রশাসন গঠন করে নতুন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন করা সম্ভব হবে, যা রাশিয়ার সঙ্গে স্থায়ী শান্তিচুক্তির পথ তৈরি করবে। পুতিন জানান, এই অস্থায়ী প্রশাসন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য অংশীদারদের তত্ত্বাবধানে গঠন করা যেতে পারে।

ইউরোপীয় উদ্যোগ

ইউরোপীয় নেতারা প্যারিসে বৈঠক করে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যাতে দেশটির নিরাপত্তা আরো সংহত করা যায়। ফ্রান্স ও ব্রিটেন যৌথভাবে একটি আন্তর্জাতিক “নিরাপত্তাবেষ্টনী বাহিনী” গঠনের বিষয়েও আলোচনা করেছে। তবে রাশিয়া ইউক্রেনের অভ্যন্তরে বিদেশি বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নিতে নারাজ।

জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বরাবরই অস্থায়ী প্রশাসনের এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর যুক্তি, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী সামরিক আইনের সময়ে কোনো নির্বাচন করা যায় না। তাছাড়া যুদ্ধের মধ্যে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্ভব নয়। জেলেনস্কির ভাষ্য, পুতিন আসলে এই সংঘাত দীর্ঘায়িত করতে চাইছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগ

নতুন মার্কিন প্রশাসন দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ চায় বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি “খনিজ সম্পদ চুক্তি” নিয়ে আলোচনা চলছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পুনর্গঠনে আর্থিকভাবে অবদান রাখতে পারে। ট্রাম্প মনে করেন, এই চুক্তি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির নিশ্চয়তা আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে।

রাশিয়ান সামরিক অবস্থান

পুতিনের দাবি, রাশিয়া তার সামরিক অভিযানের ঘোষিত লক্ষ্যগুলো ধাপে ধাপে অর্জনের দিকে এগোচ্ছে, যদিও গতি অনেকের কাছে ধীর মনে হতে পারে। এখন পর্যন্ত রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলকে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত অংশ বলে ঘোষণা করেছে।

উত্তর কোরিয়া ও অন্যান্য মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক

পুতিন জানান, চীন, ভারতসহ ব্রিকস জোটের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে রাশিয়ার আলোচনাও অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে বলেও জানান তিনি। যদিও পশ্চিমা ও ইউক্রেনীয় সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়া ইতোমধ্যে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজারেরও বেশি সৈন্য কুরস্ক অঞ্চলে মোতায়েন করেছে। মস্কো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

ইউরোপ সম্পর্কে পুতিনের মতামত

পুতিনের ভাষ্যে, ইউরোপ একদিকে শান্তির কথা বললেও অন্যদিকে বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়াকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গেলে রাশিয়াকে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে বলে জানান তিনি।

শান্তির সম্ভাবনা

রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যেকোনো বিরোধ আলোচনা দিয়ে সমাধান করার ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানিয়েছে। তবে শান্তির যে কোনো চুক্তি যেন রাশিয়ার স্বার্থের ক্ষতি না করে, সে বিষয়ে তারা সজাগ। পুতিনের মতে, সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার গতিবিধি আপাতদৃষ্টিতে ধীর মনে হলেও কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতেই রয়েছে। এই ধীর কিন্তু দৃঢ় অগ্রগতির মাধ্যমেই রাশিয়া শেষ পর্যন্ত তার লক্ষ্য পূরণ করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।